আজ শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ইং

পর্যটন ও পড়াশোনা

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২১-০২-২২ ২০:২৬:২৩




|| মো. আব্দুল হালিম ||

গত ১০ বছরে বিশ্ব অর্থনীতির মূল চালিকার পরিবর্তন সবার দৃষ্টি কেড়েছে। গত শতাব্দীর রাঘব বোয়াল কোম্পানিগুলোকে পিছনে ফেলে উপরে উঠে এসেছে অনলাইনভিত্তিক বিভিন্ন সেবামূলক প্রতিষ্ঠান গুলো। অন্যদিকে তথ্য প্রযুক্তির ক্রমাগত উন্নয়ন মানুষের জীবনযাত্রার ব্যাপক পরিবর্তনের সাথে সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, ও বিনোদন সবক্ষেত্রে এনেছে আমুল পরিবর্তন। পরিবর্তনের ধারায় কোনো অংশে পিছিয়ে নেই ট্যুরিজম খাত। বিশ্ব পর্যটন সংস্থা (ইউএনডব্লিউটিও) এর এক সমীক্ষা বলছে ২০০৯ সালে আন্তর্জাতিক পর্যটকের সংখ্যা ছিল ৮৯২ মিলিয়ন যা দশ বছরের ব্যবধানে ২০১৯ সালে এসে দাঁড়িয়েছে ১.৪ বিলিয়ন এবং ২০১৭ সালে শুধু বাংলাদেশে পর্যটক সংখ্যা ছিল প্রায় ১০ লক্ষ।

তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়ন মানুষের ভ্রমণকে করে তুলেছে আরও আনন্দতর। সহজতর যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং সর্বক্ষেত্রে আধুনিকায়ন ভ্রমণপিপাসু মানুষকে ভ্রমণে আরও আগ্রহী করছে। যার ফলশ্রæতিতে এই সেবা খাতটি বিশ্ব অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তিতে রূপান্তর হচ্ছে। ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কাউন্সিলের ২০১৯ সালের প্রতিবেদন বলে বিশ্ব জিডিপি’র প্রায় ১০.৪ শতাংশ এবং বিশ্ব কর্মসংস্থানের ১০ শতাংশ অবদান এই ট্যুরিজম খাতের। শুধু পর্যটন নির্ভর অর্থনীতিভিত্তিক রাষ্ট্রের উদাহরণও কম নয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে পর্যটনমুখী অর্থনৈতিক পরিকল্পনায় এগিয়ে গেছে বহুরাষ্ট্র। আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র তার বড় উদাহরণ। ২০০৯ সালে প্রতিবেশী দেশে ভারতের আন্তর্জাতিক পর্যটকের সংখ্যা ছিল প্রায় ৫ মিলিয়ন যা গত ২০১৮ সালে ১০ মিলিয়ন ছাড়িয়েছে ৯.২ শতাংশ জিডিপি অবদান নিয়ে। সম্পতি জ্বালানি তেল নর্ভর অর্থনীতির দেশ সৌদি আরব তাদের নতুন অর্থনীতির উৎস হিসেবে ট্যুরিজমকে বেছে নিয়েছে।

অর্থনীতিবিদদের মতে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্ব অর্থনীতির আরও ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়ন মানবসভ্যতাকে নিয়ে যাবে অন্য এক দিগন্তে। মানুষ নিজের অজান্তে এসব প্রযুক্তির পণ্য হয়ে যাবে। কর্মব্যস্ত জনজীবনে স্বস্তির নিঃশ্বাস হিসেবে ভ্রমণকে বেছে নিবে। অন্যদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ফলে মানুষ ভ্রমণ সম্পর্কে সচেতন হচ্ছে। শুধু বাংলাদেশে গত ৫ বছরে ইনবাউন্ড ট্যুরিজম বৃদ্ধি পেয়েছে কয়েকগুন। বাংলাদেশ অপার সম্ভাবনার দেশ হলেও বিশ্ব পর্যটকদের তেমন সাফল্যের সাথে আকৃষ্ট করতে পারেনি। অপরদিকে দেশের ট্যুরিজম সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের পর্যটন শীর্ষক মানসিকতা এবং দক্ষ লোকবলের অভাবে এই খাত দিন দিন হুমকির মুখে পড়ছে।

পবিত্র নগরী সিলেট বাংলাদেশের ভ্রমণপ্রেমী এবং ধর্মপ্রাণ মানুষের জন্য অন্যতম একটি আকর্ষণীয় স্থান। বাংলাদেশে পর্যটন বিষয়ক পড়াশোনা চালুর পূর্বেই এই নগরীর পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটেছে। ৩৬০ আউলিয়ার নগরীতে প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক এসে হাজির হন। সবুজ পাহাড়ে  ঘেরা গ্রাম এবং গ্রাম্য জীবন, অসংখ্য জলপ্রপাত, দেশের সর্ব বৃহৎ হাওর, ও দেশের এক মাত্র সমতল চা বাগান নিয়ে পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ হিসেবে জায়গা দখল করে আছে।

পর্যটনের এমন সম্ভাবনায় নতুন দিগন্ত উন্মোচনের লক্ষে ২০১৭ সালে সিলেটের প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় লিডিং ইউনিভার্সিটি শুরু করে ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ। চার বছর মেয়াদী এই ব্যাচেলর প্রোগ্রামে শিক্ষার্থীদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি বুদ্ধিগত দূরদর্শিতা এবং ব্যবহারিক দক্ষতা বৃদ্ধিতে নানা কার্যক্রম নেওয়া হয়। শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে তৈরি করা হয় ‘লিডিং ইউনিভার্সিটির ট্যুরিস্ট ক্লাব’।

সিলেট পর্যটনের বিভিন্ন বিষয়ে জনসচেতনতা এবং শিল্পের বিকাশে কাজ করার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে প্রথমবারের মত এই ক্লাব গত ২৬ই এবং ২৭ই সেপ্টেম্বর  বিশ্ব পর্যটন দিবস - ২০১৯ উপলক্ষে আয়োজন করে ‘এলইউটিসি পর্যটন মেলা-২০১৯’। মেলায় অংশ নেয় ১২টি প্রতিষ্ঠান। শিক্ষার বাস্তবিক প্রয়োগ এবং মেধার পরিব্যাপ্তি বাড়াতে গত ২২ই নভেম্বর ২০১৯ ছুটে যায় দেশের সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন রাঙ্গামাটি জেলার মেঘকন্যা নামে খ্যাত ‘সাজেক ভ্যালি’।

তবে বাংলাদেশে এই বিভাগ যাত্রা শুরু হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের উদ্যোগে। দেশের পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে ২০০৭ সালে প্রথমবারের মত চালু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ। এই খাতের ব্যাপক প্রসারে বর্তমানে দেশের প্রায় সকল সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ চালু করেছে। পিছিয়ে নেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। মানসম্মত শিক্ষা এবং গুনগতমানের প্রশিক্ষণ ক্রমেই এই শিল্পের নতুন নতুন দ্বার উন্মোচন করছে। পরিবর্তনশীল বিশ্ব অর্থনীতির নতুন সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে তৈরি হচ্ছে দেশ।

লেখক: প্রভাষক, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, লিডিং ইউনিভার্সিটি, সিলেট।

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন