আজ বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ইং

ছোট গল্পঃ চাকরির সন্ধানে

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৭-১১-১২ ১৫:০১:৫৪

লেখক

হিল্লোল পুরকায়স্থ ::   সুরুজ আলী পড়ালেখায় তেমন একটা ভালনা। তারা দুই ভাই এক বোন, সুরুজ  ভাই বোনদের মধ্যে সবার বড়। তার পিতা রহমত আলী ছোট খাট একটা প্রাইভেট প্রতিষ্টানে চাকুরীজীবী। পিতার স্বপ্ন ছিল সুরুজ লেখাপড়া শেষে সরকারী চাকুরী  করবে। রহমত সাহেব যে টাকা আয় করতেন তাদিয়ে টেনেটুনে সংসার চলত। সুরুজ পড়ালেখায়  তেমন একটা ভালছিলনা কিন্তু কিভাবে যেন এসএসসি, এইচ এস সি নিয়মিতভাবে ভাল পয়েন্ট পেয়েই পাশ করে। কিন্তু ভর্তি পরীক্ষা দিতে গিয়ে তাকে তৈরি  করার জন্য তার পিতা জমি বিক্রয় করে তাকে কোচিং করার ব্যবস্থা করে দেন। এক পর্যায়ে সে শহরের একটি সরকারী কলেজে ভর্তি হয়। তাকে শহরে থাকতে হত বলে তার জন্য অনেক টাকা প্রয়োজন ছিল। তার পিতার জন্য এতটাকার ব্যয়ভার বহন করা কষ্টকর। কিন্তু তিনি সুরুজের পড়ালেখা চালিয়ে যাবেনি। তিনি নিজের যথটুকু জমিজমা ছিল সবি বিক্রয় করে দেন সুরুজের পড়ালেখার খরচ চালাতে গিয়ে। এদিকে সুরুজ এর ভাই বোনরাও বড় হচ্ছে। সুরুজ ছাত্র হিসেবে তেমন একটা ভালনা হলেও এক সময় সে মাস্টার্স পাস করে।

এদিকে সুরুজের  পিতা অশুস্থ্য হয়ে পড়েন। তার ভাই বোনরাও  এখন স্কুল কলেজে পরছে। সুরুজ নামে চাকুরীর সন্ধানে কোথাও চাকুরী  খুজে পাচ্ছেনা। সে সরকারী চাকুরীর জন্য অনেক এপ্লাই করেছে,দিয়েছে অনেক পরীক্ষা কিন্তু চাকুরীটাত কিছুতেই হলনা। সুরুজ এইচ এস সি  পাশ করার পর থেকেই সরকারী চাকুরীর জন্য চেষ্টা করছিল। কিন্তু  সরকারী চাকরি পেতে হলেত মেধা, টাকা, মামা, চাচা দরকার  কিন্তু সে গুলোর একটাওত তার মধ্যে নেই।কিন্তু এবার যে একটা চাকুরী দরকার তার পিতা যে আর সংসারের ভার বইতে পারছেনা।সুরুজ চাকুরীর খুুজ করতে থাকে কিন্তু কোথাও একটা চাকরি পায়না। সব প্রতিষ্টানে অভিঙ্গতা চায় কিংবা রেফারেন্স  কারী চায়।অথবা চায় মামু চাচার একটা ফোন।সুরুজ যে বড্ড অসহায় এসব কিছুই যে তার নেই।নেই তার ঘনিষ্ট কারো কোন প্রতিষ্টান।সুরুজ বাধ্য হয়ে পরিবারের দিকে থাকিয়ে সিদ্ধান্ত নিল রিকসা চালাবে।সে একটা রিকসা ভারা নিল চালনার উদ্দেশ্যে রাস্তায় বের হল সবাই যেন তারদিকে তাকিয়ে থাকে। পরিচিতরা দেখে হাসি ঠাড্ডা করে।তাকে নিয়ে পরিহাস করে।তার পিতা যেন লোকালয়ে মুখ দেখাতে পারছেনা অনেকেই অনেক ধরনের কথা বলছে।সে পারলনা এই কাজটি করতে লোক সমাজের জন্য।তার পিতার ওষধ এর তলে অনেক টাকা লাগত। এমন অবস্হায় তার বোন একদিন তাকে বলে ভাইয়া আমায় পরীক্ষার ফিস দিতে হবে তুমি আমাকে কিছু টাকা দিয়।তার বোন তার কাছে প্রথম টাকা চাইল সে কি করবে।সে সিদ্ধান্ত নিল দিনমজুরী কাজ করে হলেও টাকাটা এনে দিবে। সুরুজ পরের দিন দিনমজুর দের সাথে ব্রিজে দার হল সব লোকি কাজে চলে গেল কিন্তু তাকে কেউ কাজে নিলনা তার চেহারা দেখেই মানুষ দূরে সরে যায় কারন তাকে দেখে শিক্ষিত বুঝা যায় বুঝা যায় সে এ কাজ করতে পারেনা।সুরুজ কাজ না পেয়ে বাড়ি ফিরে এল। সুরুজ কি করবে বুঝতে পারছিলনা।পড়ালেখা করতে গিয়ে তার অনেকটা বছর কেটে গেছে এখন যে ব্যবসা করবে তেমন টাকা তার হাতে নেই।সে বুঝতে পারল সে শিক্ষিত কিন্তু জ্ঞানী নয় তানাহলে তাকে আজ এই পরিস্হিতির সম্মুখীন হতে হতনা।সুরুজ কোন উপায় না পেয়ে ভেঙ্গে পরল সে এলাকার  এক বয়স্ক  ব্যক্তিকে সবখুলে বল্ল।বয়স্ক লোকটি  সুরুজকে বলেন তুমি এলাকাতে সব ধরনের কাজ করতে পারবেনা কারন তুমি শিক্ষিত, চাকরি না পেয়ে তুমি যদি এখন নিম্ন শ্রেণীর মানুষের কাজ কর লোক তুমাকে  অসম্মানকরবে, কারন আমাদের দেশে এখনও সব ধরনের কাজের সম মূল্যায়ন হয় না। সুরুজ তার পিতাকে  চাকরি পেয়ে গেছি বলে ঢাকা চলে আসে।সে যখন রেলস্টেশনে বসে বিশ্রাম নিচ্ছিল তখন দেখতে পেল একটি ছেলে একজন ভদ্রলোকের পকেট মারছে সুরুজ বুঝতে পারল ছেলেটি শিক্ষিতনা কিন্তু পকেট মারের বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান আছে।সুরুজ কর্মমুখী শিক্ষা নেবার সিদ্ধান্ত নেয়।সে দিনে রেলস্টেশনে কুলির কাজ নেয় এবং রাতে বেকারিতে বিভিন্ন ধরনের খাবার তৈরি করার কাজ শিখা শুরু করে । এক সময় সে কিছু টাকা জমিয়ে সে যেখানে থাকত সেখানে বিভিন্ন ধরনের খাবার তৈরি করে দোকানে দোকানে গিয়ে  বিক্রয় করত।এক সময় সুরুজ আরেকটি ঘর ভাড়া নেয় এবং কিছু বেতনধারী লোক নেয়।এক সময় তার খাবার সারাদেশে বিস্তার লাভ করে।এভাবে একদিন সুরুজ একটা কম্পানির মালিক হয়।তার কম্পানিতে এখন শত শত লোক কাজ করে।

লেখক: সাংবাদিক

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন