আজ বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ইং

হাওরবান্ধব মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে হাওরের দেশে স্বাগতম

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০১-৩০ ১২:০৬:১৫

কাসমির রেজা :: হাওর বান্ধব প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হাওরের দেশ সিলেটে স্বাগত জানাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সিলেট আগমনে হাওরবাসী আজ উচ্ছসিত। তাঁর এই সফর হাওরবাসীকে আশান্বিত করছে। গত বছর হাওরাঞ্চলের ইতিহাসে ভয়াবহ বিপর্যয়ের পর প্রধানমন্ত্রী যেভাবে হাওরবাসীর পাশে দাঁড়িয়েছেন তা সত্যি নজির বিহীন। এজন্য আমরা তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ । অকাল বন্যায় ফসলহানীর পরপর মহামান্য রাষ্ট্রপতির সুনামগঞ্জ সফরের কয়েকদিনের মাথায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দুর্দশাগ্রস্থ হাওরবাসীর অব্যক্ত বেদনার কথা শুনার জন্য ছুটে গিয়েছিলেন সুনামগঞ্জের শাল্লায়।

তিনি বলেছিলেন, হাওরবাসী না খেয়ে মরবে নাঃ সরকার পাশে রয়েছে। তখন থেকে আগামী ফসল উঠার আগ পর্যন্ত হাওরের ৩ লক্ষ পরিবারকে ত্রিশ কেজি করে চাল ও নগদ ৫০০ টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। খোলা বাজারে দশ টাকা মূল্যে চাল বিক্রি করা হয়েছিল। ঋণগ্রস্ত কৃষকদের ঋণের বোঝা কমানোর জন্য কৃষকদের সকল ব্যাংকঋণ ও এনজিও ঋণের কিস্তি আদায় বন্ধ রাখা হয়। ক্ষতিগ্রস্ত হাওরবাসী ব্যাংকঋণের সুদের হার অর্ধেক করা হয়। এ বছর কৃষকরা যখন সার, বীজের অভাব বোধ করছিলেন ছয় লক্ষ কৃষককে বিঘা প্রতি ৫ কেজি করে বীজ, ৩০ কেজি করে সার ও প্রত্যেককে নগদ এক হাজার টাকা করে দেওয়া হয়। এছাড়াও সরকারি, বেসরকারি অনেক সহযোগিতা পেয়েছেন হাওরবাসী। হাওরবাসী এত বিপুল পরিমাণ সাহায্য এর আগে কখনো পায়নি। হাওরের বাঁধ নির্মাণে যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে তাদের অভিযুক্ত করে দুর্নীতি দমন কমিশনে মামলা হয়েছে। যা এখনো বিচারাধীন। হাওরবাসীর দাবীর  প্রেক্ষিতে পুরাতন নীতিমালা পরিবর্তন করে নতুন করে ‘কাবিটা নীতিমালা ২০১৭’ প্রণয়ন করা হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে এজন্য আমরা বলি হাওরবান্ধব প্রধানমন্ত্রী। তাই তাঁকে আপন ভেবে তার প্রতি আমরা আমাদের আরও কিছু নিবেদন তুলে ধরছি।

দ্রুত বাঁধের কাজ শেষ করা: বছর জুড়ে আলোচনায় থাকা এবং সরকারের শীর্ষ মহলের সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাওয়ার পরও এ বছর হাওর রক্ষা বাঁধের কাজে ধীরগতি রয়েছে। নির্ধারিত সময়ের দেড় মাস অতিক্রান্ত হলেও এখনো অর্ধেক বাঁধের কাজ শুরুই হয়নি। তাই নির্ধারিত সময় ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কাজ শেষ হওয়া নিয়ে শংকা দেখা  দিয়েছে। তাই দ্রুত সকল হাওর রক্ষা বাঁধের কাজ শুরু ও সময়মত বাঁধের কাজ শেষ করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

ব্যাপক ভিত্তিক নদী খনন: হাওরে জলাবদ্ধতা এখন নতুন আতংক হয়ে দাঁড়িয়েছে। বছর বছর অকাল বন্যায় ফসলহানী ও জলাবদ্ধতার প্রধান কারণ নদীগুলোর নাব্যতা কমে যাওয়া। তাই প্রয়োজন পরিকল্পিত ও ব্যাপক ভিত্তিক নদী খনন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ইতোমধ্যে নদী খনন শুরু হয়েছে। সুনামগঞ্জের ৬টি ও মৌলভীবাজারের দুটি নদীর ১১৬ কিলোমিটার খনন হচ্ছে। কিন্তু তা যথেষ্ট নয়। তাই ব্যাপক ভিত্তিক নদী খননের প্রকল্প গ্রহণ করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কাছে জোর দাবী জানাই।

হাওর সম্পদ গবেষণা: জলাবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবে হাওরবাসী সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এ থেকে হাওরবাসীকে বাঁচাতে প্রয়োজন হাওরের সম্পদ সুরক্ষা বিষয়ক গবেষণা। আবিষ্কার করতে হবে পানি সহনীয় ও স্বল্প জীবনের ধান। প্রয়োজন প্রযুক্তির ব্যবহার। গবেষণা ছাড়া এর কোনটাই সম্ভব নয়। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে হাওর নিয়ে গবেষণা বাড়ানো দরকার। এজন্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্থাপন, ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে হাওর সম্পদ গবেষণায় অর্থ বরাদ্দ বাড়ানোর দাবী জানাই।

হাওরে মৎস গবেষণা ও উৎপাদন কেন্দ্র: হাওর এলাকা এখন বছরে প্রায় আট মাস পানি বেষ্টিত থাকে। জলাবদ্ধতা ও অকাল বন্যার কারণে হাওরে ধানের উৎপাদনে ঝুঁকি বেড়েই চলছে। তাই হাওরে মাছ উৎপাদন বাড়ানো এখন সময়ের দাবী। একই সাথে শুধু কাগজে কলমে নয় প্রকৃত অর্থেই হাওরে মৎসজীবিদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এসব বিষয় নিশ্চিত করতে মাদার ফিশারিজ খ্যাত টাঙুয়ার হাওরে মৎস গবেষণা ও উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনের দাবী জানাই।

হাওর উন্নয়ন মন্ত্রণালয় :- ভূ-প্রকৃতিগত কারণে হাওরের পরিবেশ প্রকৃতি ও জীবনবাচার দেশের আর দশটি অঞ্চল  থেকে আলাদা। বছরের অর্ধেক সময় জলমগ্ন ও বাকি অর্ধেক সময় শুকনো মৌসুম থাকার মত ভূ-প্রকৃতি বিশ্বের আর কোথাও নেই। এখানে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা শিক্ষা পঞ্জি করতে হয়। এসব নানাদিক বিবেচনায় হাওর অঞ্চলের জন্য আলাদা একটি মন্ত্রণালয় আজ সময়ের দাবী।

হাওর ভাতা চালু: যাতায়াত ব্যবস্থা  ও স্কুল কলেজসহ অন্যান্য অবকাঠামো যথাযথ না থাকায় হাওরাঞ্চলের অফিস আদালত, হাসপাতাল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জনবল সংকট এক নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। হাওরে কর্মরত কর্মকর্তা কর্মচারীদের হাওর ভাতা প্রদান করলে জনবল সংকট কিছুটা হলেও কমবে। তবে এ সমস্যার দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের জন্য অবশ্যই অবকাঠামো উন্নয়ন করতে হবে।


হাওর উন্নয়ন মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন: মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মৃতপ্রায় হাওর উন্নয়ন বোর্ডকে সচল করেছেন। এই হাওর উন্নয়ন বোর্ড ২০১২ সালে ২০ বছর মেয়াদি একটি হাওর উন্নয়ন মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। পরিকল্পনায় হাওরের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়নে বেশ কিছু যুগান্তকারী প্রকল্পের প্রস্তাব রয়েছে। সবগুলো প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে হাওরবাসীর জীবনমান আরও উন্নত হবে। তাই সবগুলো প্রকল্প বাস্তবায়নের জোর দাবী জানাই।

বাংলাদেশের ইতিহাসে আর কোনো সরকার এত ব্যাপক সহযোগিতা নিয়ে হাওরবাসীর পাশে দাঁড়ায় নি। হাওরবাসীর কান্না মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আবেগাপ্লুত করেছে। তিনি হাওরের কান্না শুনতে ছুটে এসেছেন। তিনি নিজ থেকে হাওরের শিক্ষার্থীদের যাতায়াত সমস্যার কথা চিন্তা করে হাওরে আবাসিক স্কুল নির্মাণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। হাওরের যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়নে প্রয়োজনে উড়াল সেতুর জন্য সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের নির্দেশ দিয়েছেন। এসবই হাওরবাসীর প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতার বহিঃপ্রকাশ। হাওরবাসীর দুর্দিনে তিনি যেমন হাওরবাসীর পাশে দাঁড়িয়েছেন আশাকরি  হাওরবাসীও তাঁর পাশে থাকবেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করি।


লেখক
সভাপতি পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থা
শধংযসরৎৎবুধ@মসধরষ.পড়স

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন