আজ শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ইং

শাকুর মজিদ: আমাদের মুগ্ধকর

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০১-৩০ ২০:১০:০৫

বাংলাকাশে সৃষ্টিকর্তার প্রায় পূর্নাঙ্গ এক প্যাকেজের মহাপ্রস্থানে তিনি লিখলেন "যে ছিলো এক মুগ্ধকর"।

সেই সাথে পূর্বাঞ্চলের আকাশে উদিত আমাদের রবির; তারকা প্রস্থানের শোকে মেঘাচ্ছন্ন কান্নাঝরা আকাশের স্থিরতার মাঝে সন্ধ্যার পূর্বে পশ্চিমাকাশে রংধনুর আগমনী কিংবা পর্দাম্মোচনও নয় কি ?

হুমায়ূন আহমেদকে  নিয়ে অনেকেই লিখেছেন কিন্তু এক মলাটে সবকিছু প্রাপ্তির যে আনন্দ সেটা উনি ফুটালেন মুগ্ধভাবেই। অথচ তিনি নিজেই আমাদের মুগ্ধকর।

তিনি লিখেন- নাটক-কবিতা-সাহিত্যের নানা ক্যানভাসে...
তিনি তৈরী করেন- প্রামাণ্যচিত্র-মঞ্চনাটক...
তিনি ভ্রমণ করেন- গ্রাম-হাওর-দেশ-দেশান্তর...
তিনি আড্ডাবাজ, আড্ডায় মশগুল করেন এবং নিজেও তাতে নিমজ্জিত হন রাত-বিরাতে...

তিনি সৌখিন ছবি তুলিয়ে, তবে ছবি নিয়ে পরবর্তীতে যেটা করেন সেখানে স্থাপত্যের কিংবা পরিসংখ্যানবিদদের ছোঁয়া থাকে। একটি ছবির পরবর্তী এপিসোডটা হয় চিত্তাকর্ষ।
ব্যবধান দিন-মাস-বছর-যুগ যুগান্তরের কিন্তু এ যেন সাদা-কালো হতে রঙিনের যাত্রাপথ, অন্ত্যমিলের ধাঁধা, একই সূত্রে এক জীবন।

তিনি  উচ্চমাত্রার ভোজনরসিক, নিজে আকন্ঠ ভোজনে আচ্ছন্ন হয়ে অন্যদেরও একই রুপে দেখতে ভালোবাসেন। অথচ উপরে উল্লেখিত কোনটাই উনার অফিসিয়াল পেশা নয়। উনার পেশা হলো স্থপতি।

হ্যাঁ সমজদাররা বুঝে গেছেন আমি সিলেটের বিয়ানীবাজার থানার মাথিউরা গ্রামের শ্রদ্ধেয় শাকুর মজিদের কথা বলতে এসেছি।  সম্প্রতি স্মৃতিকথা/আত্মজীবনী/ভ্রমণ সাহিত্যের উপর "বাংলা একাডেমী পুরস্কার ২০১৭" মনোনীত হয়েছেন। উনার এই পদক প্রাপ্তিতে আমরা অতি অবশ্যই আনন্দিত এবং আত্মতৃপ্ত। তবে অনেকেরই মতো গর্বিত নই।
কারণ এই পদকটি বহুমাত্রিক এই স্পস্টবাদী মানুষটির বিচ্ছুরিত আলোতে একটি রং মাত্র,
যারংধনুর পূর্নাঙ্গতা আনয়নে দরকার ছিলো। আমরা বরং গর্বিত এই মানুটির জন্ম আমাদের এই পূর্বাঞ্চলে হলেও এখন তার অবস্থান বাংলদেশের আকাশের মধ্যগগনে। আলোর বিচ্ছুরনও সেই রবির তেজেই ..(দু'অর্থেই )

তার সাথে থাকলে কিংবা ভ্রমনের সঙ্গী হলে আপনার মনে হতেই পারে উনিই কি তবে সৈয়দ মুজতবা আলীর সেই #ঝান্ডুদা নাকি। যার যাত্রাবেলায় বুঝার উপায় নাই উনি অ্যারাইভাল না ডিপার্চার লাউঞ্জের যাত্রী।

ঊনার ভ্রমণ সাহিত্যের পাঠক হলে ভাবনার দেয়ালে প্রশ্ন জাগতেই পারে ইনি কি সেই ইবনে বতুতার কেউ, নাকি কলম্বাসের কেউ। ইতিহাসের সাথে পরিসংখ্যানের মিশ্রণ যেন দুধের স্বাদ দইয়ে মিটানোর মতো অসংখ্য স্থিরচিত্র।

চায়নিজ লেখক লিন ইয়ুতাং লিখেছেন- "ভালো ভ্রমনকারী তিনিই যিনি জানেন না কোথায় যাবেন; আর পার্ফেক্ট ট্রাভেলার জানেন না তিনি কোথা থেকে এসেছেন "

কারণ সিঙ্গার থিওডোর মতে "আপনি আশা করতে পারেন না সমগ্র পৃথিবীটা আপনার সঙ্গে দেখা করতে নিউইয়র্কে ছুটে আসবে, আপনারই উচিত তাদের কাছে যাওয়া "

তো আমরা যারা আম্রিকার ভিসা পাবো না কিংবা যাওয়ার সামর্থ্য নাই তাদের কি হবে এই ধাঁধার উত্তর হচ্ছেন শাকুর মজিদ। তার ভারত-চায়না-শ্রীলংকা-মিশর-ইউরোপ-আমেরিকা ভ্রমণের প্রামাণ্যচিত্র কিংবা বইয়ে চোখ বুলালে ভ্রমণ না করেও ভ্রমণের যে তৃপ্তি পাবেন কিংবা মনে হবেই এসব দেশের ঐসব জায়গায় গেলে আর ট্যুর গাইড নাও লাগতে পারে। সাথে উইট আর হিউমার এম্নিতেই বুঝিয়ে দেয় মুজতবা আলীর ব্যাটনটি নিয়ে রিলে রেসে কেউ একজন আছেন উনারই অঞ্চলে।

ক্রীড়াবিদ হিসেবে যেমন শচীন টেন্ডুলকার কিংবা লিওনেল মেসি ইতিহাসের জীবন্ত কিংবদন্তী বিশ্বকাপের প্রাপ্তিযোগ সেখানে একটি পূর্নাঙ্গতার পালক মাত্র। আমাদের এই বহুমাত্রিক প্রিয়জনটি তেমনি আমাদের কিংবদন্তী আমাদের গর্ব।  পঞ্চখন্ডের পরম্পরায় এক ক্রিয়েটিভ ক্যারিশমাটিক ব্যক্তিত্ব । পুরস্কার প্রাপ্তি সেখানে মঞ্চারোহনের পর সেলিব্রেশন মাত্র।

মানুষের জীবন নিয়ে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্য রচয়িতা মহান সৃস্টিকর্তার চিত্রনাট্যের আগাম রহস্য বুঝা সবসময়ই অসাধ্য। মাত্র কদিন হলো সড়কদুর্ঘনায় বাম হাত ভেঙে যাওয়ার পক্ষকালের মধ্যেই উনার ডান হাতে দেশের অন্যতম সেরা একটি ইনডিভিজুয়্যাল সম্মানের পুরস্কার গ্রহণের লিখন লিখে রেখেছিলেন বলেই কিনা এই বেদনানন্দের (আনন্দ-বেদনার) কাব্য একই সময়েই ঘটলো।

জয়তু হে বিশ্ব নাগরিক; ভালোবাসা আর ভালোলাগার মানচিত্রে আপনি আমাদের ডাকটিকেট। অন্তবিহীন ছুটে চলাই যার মিশন।

ফুজেল আহমদ
টরেন্টো, কানাডা

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন