আজ বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ইং

বিন্দুহীন বৃত্ত

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৪-০৪ ০১:৪৪:৫৫

অমিত দাশ :: চারদিক বৈশাখের রঙে রঙিন সবকিছু। বিলবোর্ডে নতুন ফেষ্টুন উঠছে দেয়ালে দেয়ালে নকশা করা হচ্ছে ঐতিহ্যের।হাটছে আর বিষয় গুলো লক্ষ করছে অভ্র।রাত প্রায় সাড়ে নয়টা বাজে এখনো শহরের মানুষ গুলো কমার কোন নাম নেই।ইতিমধ্যে শহরের সবগুলো পয়েন্ট ঘুরে এসেছে একবার সে মানুষের ধাক্কাধাক্কিতে খুব একটা বস্থায় জমা পরেনি আজ।

আকাশে ভিশন আলোকসজ্জার প্রদর্শনি হচ্ছে যেকোন সময় বৃষ্টি নেমে আসবে।আজকে তো অভ্রের শার্টটা শুকায়নি এখন ভিজলে কি পরবে সে?আর এখন কাজটা না সারলেও সকালে কিছুই পাওয়া যাবেনা।কি করবে ভেবে পাচ্ছেনা অভ্র।কেবল বৃষ্টি স্নানে উল্লাসে মাতব বলে বের হয়েছি আমি।হাটতে হাটতেই ওর সাথে দেখা।দশ বছরের একটা ছেলে এত রাতে পিছনে বস্থা ঝুলিয়ে হাটছে বিষয়টা বেশ মর্মান্তিক।কাছে ডাকতেই বলল আচ্ছা স্যার এইহানে কি এক কেজি অইব।আমি হাতে নিয়ে দেখতে লাগলাম বস্থাটা তিন চারশ গ্রাম হবে হয়তো।তারপর হাটতে লাগলাম ওর সাথে আর অবান্তর প্রশ্ন করতে লাগলাম।অভ্র নামটা শুনে থমকে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম তোমার নামের অর্থ জানো?

জি না স্যার আপনে জানেন কইবেন স্যার আমারে! আমি বল্লাম আকাশ। এত সুন্দর নামের একটা ফুটফুটে ছেলে প্লাস্টিক কুড়াচ্ছে।ভাবলেই কেমন যেন লাগে।আমার মাঝে মাঝে মনে হয়কি জানেন? ঈশ্বরের মস্তিষ্ক মাঝে মাঝে অবচেতন হয়ে যায় তখনি এই মানুষগুলোকে কঠিন গুহায় ফেলে দেন তিনি আবার যখন চেতন হয় তখন উত্তলন করেন।

অভ্রের মা অভ্রকে জন্ম দেয়ার সমই মারা যান অভ্রের চৌকিদার বাবা ছিলেন ওর ছয় বছর বয়স পর্যন্ত।তার কাছেই শুনেছে সে তার মা যে বাড়িতে কাজ করতেন সেই বাড়ির মালিক জমির আলী তার মায়ের সাথে খারাপ ব্যাবহার করত।সে ই তাবিজ করে তার মাকে মেরে ফেলেছে।অভ্রের বাবা মারা গেলেন ডাকাতদের ছুড়িতাঘাতে। সেই থেকে এই পেশাতেই আছে অভ্র। নামের অর্থটা বলে দেওয়ায় এবার আরো একটা প্রশ্ন করলো সে।আইচ্চা স্যার এইযে মানুষগুলো এত্ত টাহা খরচ করইরা মেলা করে হেগো কি লাভ?

আমি তার উত্তরটা দিতে পারলাম না চুপচাপ শুধু তার কুড়ানো দেখতে লাগলাম।আমি একটা ব্রিজের উপরে ও নিচে নেমে কুড়াচ্ছে।কুড়াতে কুড়াতেই বলছে তয় আমাগো লাভ আছে।জানতে চাইলাম কি লাভ? মানুষে অনেক খায় অনেক ময়লা জমা হয় আমার বস্থা প্রায় ভইরা যায়।তয় স্যার একটা দুঃখ আছে হেরা আমাগোরে মেলাত ঢুকতে দেয়না। আমরা গেইটের বাইরে খারাইয়া থাকি স্যার মেলার দিন চাইরদিহে কেমন সুন্দর ইলিশ ভাজার গন্ধ করে কি যে ভালো লাগে।আমি কথার মধ্যেই থামিয়ে বল্লাম তুমি কোনদিন খেয়েছ পান্তা ইলিশ। কি যে কন স্যার পান্তা তো রোজই খাই তয় মেলার পরের দিন ইলিশও খাওয়া হয়।হেরা অনেক ইলিশ ভাজি আইন্না ফালাইয়া যায়।

জানেন স্যার মেলার দিন যে সাবেরা যে তাগো পোলামাইয়ারে বেলুন কিন্না দেয় কি দারুন লাগে দেখতে।গেলবার কি হইছে স্যার জানেন এক সাবের মাইয়ার হাত থাইক্কা বেলুন ছুইট্টা গেছে।আর আমাগো যে দৌড়ানি শুরু অইলো কার আগে কে ধরতে পারে।কি যে আনন্দ লাগলো স্যার। কত্ত রহমের সাজে যে মানুষ সাজে স্যার রাজা রানি সাজে গরুর গাড়ি কইরা চলে।জানেন স্যার পিচ্চি পিচ্চি মাইয়ারা বউ সাজে কি যে সুন্দর লাগে।

আমি অবাক হয়ে দেখতে লাগলাম ওর আনন্দের বর্ননা মা বাবা হীন একটি ছেলে এত বিশাল পৃথিবীতে একা। যার অতিত বর্তমান ভবিষৎ নিয়ে কোন ভাবনা নেই।বিশাল একটা পৃথিবী নিয়ে দাড়িয়ে আছে অথচ তার কেন্দ্রবিন্দুই নেই।এত কষ্টের মধ্যেও অদের কোন কষ্ট নেই। অথচ আমরা একটা নতুন জামা না পেলেই তোলপাড় শুরু করি।

কি আজব স্রষ্টার সৃষ্টি। ভাবতে ভাবতেই কখন যে এত জোরে বৃষ্টি শুরু হয়েছে খেয়ালই করিনি। এর মধ্যই অভ্র তার বস্থা থেকে দুটো বড় বোতল বের করে কেটে মুকুটের মত বানিয়ে নিয়েছে।

আমাকে একটা দিয়ে বলল স্যার নেন এক ফোটাও মাথায় পরবোনা। মাথায় দিয়াই দেহেন না স্যার কি সুন্দর শব্দ শোনা যায় মেঘের। আমি আর কিছু বল্লাম না মাথায় দিয়ে বৃষ্টির এক অন্যরখম ধ্বনি শুনতে পেলাম যা এর আগে কোনদিন শুনিনি। তারপর ওর বস্থাটা আমাকে দিতে বল্লাম। কাধে তুলে বুঝলাম এবার এক কেজি ক্রস করেছে।

বস্তাটা কাধে নিয়েই হাটতে থাকলাম ওর পাশাপাশি...

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন