Sylhet View 24 PRINT

অব্যক্ত মিরা

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৪-১৮ ০০:৫০:১৩

অমিত দাশ :: সেদিন আমি করিডোরের এপাশ ও পাশ হাটছিলাম শ্রাবণের ভেঁজা উঠান হলেও আকাশে বিশাল একটা চাঁদ ছিল। বাতাসে একটা থমথমে ভাব। অদ্ভুত সুন্দর একটা সন্ধ্যা তাছাড়া বর্ষার মাঝামাঝি সময়ে ব্যাঙদের ডাকে জানান দিচ্ছিলো যে আজ রাতে বৃষ্টি হবে হয়তো। এমন সময় হঠাত করেই মিরার আগমন। এই মেয়েটির আশা যাওয়ার কোন সময় গময় নেই। জলপাই রঙের শাড়িটাতে চোখ বুলিয়ে ওর চোখের দিকে তাকাবার আগেই মিরা বলে উঠলো অমিদা তোমার কাছে একটা বই হবে?

আমি মূর্ছা ভেঙে বল্লাম হুম কোন বই? ঐ যে তুমি যেটাতে নায়ক ছিলে? মানে? আরে ঐ যে রবিন্দ্রনাথের? শেষের কবিতা? হুম...! বইয়ের নাম বলতে পারনা? আমার মনে থাকে না তাছাড়া তুমি তো আছই এত মনে রেখে কি লাভ গল্পটা একটু মনে থাকলেই বার বার পেয়ে যাব।

তা আমি কি চিরকাল থাকবো? হুম অবশ্যই থাকবে...! বাহ বাহ তুই কি চিরকাল এই বাড়িতেই থাকবি? হুম অবশ্যই আমিও চিরকাল এই বাড়িতেই থাকব। এই কথার ইঙিতে কি বুঝাতে চাইলো মিরা আমি ঠিক বুঝলাম না! না বুঝে পাল্টা প্রশ্ন করলাম এখন বই নিয়ে কি করবি? একটু পরে বৃষ্টি নামবে তো বারান্দায় বসে বসে পড়ব বৃষ্টির দিনে রোমান্টিক গল্প পড়ার মধ্যে অদ্ভুত এক আনন্দ আছে তাও আবার রবিন্দ্রনাথের হলে তো কথাই নেই। তুই কি করে জানলি একটু পরে বৃষ্টি হবে? আকাশে কি বিশাল থালার মত চাঁদ দেখছিস না? আমি জানি বৃষ্টি আসবে দেখো চাঁদ একটু পরেই ঢেকে যাবে।এখন কথা না বাড়িয়ে তারাতারি বইটা দাও চুলাতে চায়ের পানি বসিয়ে এসেছি সব শুখিয়ে যাবে।

আমি ঘরে ঢুকে বুক সেলফ থেকে বইটা আনতে আনতে বল্লাম তুই না চা খাস না? মিরা গলা উঁচিয়ে বলল খাইনা আজকে খাব আজকে থেকে প্রেক্টিজ শুরু করেছি? অহ কেন হঠাত? আমার গুরু বলেছেন রবিন্দ্রনাথের শেষের কবিতা চা না হলে জমেই না। তর আবার গুরু কে? আছে বলা যাবেনা। মিরা বইটা নিয়েই দৌড় দিল আমি পেছন পেছন চেঁচিয়ে বল্লাম মিরা আমার জন্য চা পাঠাস। মিরা যেতে যেতে বলল না আজকে হবেনা বৃষ্টি নামবে এখনি আমি আর আসতে পারবনা? অদ্ভুত সত্য এই মেয়েটা বুঝে কিভাবে? মিরা ওর বারান্দায় পা রাখতে না রাখতেই ঝুম করে বৃষ্টি নামতে শুরু করলো।

একটু পরেই বৃষ্টির সাথে সাথে ঝড়ো হাওয়া বইতে শুরু করল। আতসবাজির মত আলোর বিচ্ছুরণে শুরু হল বজ্রপাত। বিদুৎ চলে গেল।আমি ভেবেছিলাম মিরা হয়তো আর চিলেকোঠায় আসবেনা ও বজ্রপাত খুব ভয় পায়। কিন্তু আমাকে খানিকটা অবাক করে দিয়ে এক পেয়ালা চা,একটা মোমবাতি, আর রবিন্দ্রনাথের শেশের কবিতা হাতে চিলেকোঠায় মিরার উপস্তিতি। ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে অন্ধকারে কিছুই দেখা যাচ্ছেনা চিলেকোঠায় মিরা বসে আছে বাতাসে নিভু নিভু মোমবাতির সম্পুর্ন আলোটা ওর মুখে পরছে। ওর খোলা চুল বাতাসে উড়ছে। শেশের কবিতার সবুজ রঙের প্রচ্ছদটা হালকা জলজল করছিল। চায়ের ধোঁয়াটা খেয়াল করতে পারছিলাম না। আমি মিরার দিকে তাকিয়ে ছিলাম।

উদ্ভুত কোন সুন্দরি রমনিকে হয়তো এতটা সুন্দর আমার চোখ কখনো দেখেনি। ঠিক যেন মনে হচ্ছিল উঠানটার অপারে চিলেকোঠায় আমার সামনে বসা উপন্যাসের লাবন্য। তখন সেই সুন্দর্যের গভিরতায় এতটাই ডুবে গিয়েছিলাম যে আমার আর অন্যকিছু মাথায় আসছিল না। আজ এতদিন পর এই শীতের কনকনে রাতে আমার হঠাৎ করেই কেন জানি হচ্ছে। তবেকি মিরা আমায় ভালবাসে? তবেকি সেদিন আমাকে দেখানোর জন্যেই জলপাই রঙের শাড়ী পরেছিল? তবেকি আমাকে দেখানোর জন্যেই সে চিলেকোঠায় বসেছিল আলোটা ঠিক মুখের নিচে রেখেছিল। তবেকি সেজন্যেই মিরা মাঝদুপুরে এত বলিওমে কৃষ্ণকলির গান শুনে,বিকেল হলেই ছাদের এপাশ ওপাশ পায়চারী করে, রোজ রাতে আমার ফেরার অপেক্ষায় বারান্দার গ্রীল ধরে দাড়িয়ে থাকে?

মিরা কি সত্যি আমাকে ভালবাসে? নাকি আমি মিরাকে ভালবাসি। যেন নিজের তাগিদেই ওর সব কিছু খেয়াল করছি। আন্দাজ করতে পারছিনা।

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.