আজ শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ইং

‘চলেন রামদা দিয়ে কোপাই’

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৬-২৯ ১৪:২৫:০৫

জুয়েল সাদত :: ‘অনেক কেঁদেছি আর কাঁদতে পারি না’ জেমেসের একটা গান গত ৪৮ ঘন্টা থেকে আমার মনকে তাড়া করছে। বাংলাদেশটাই আমাদের প্রবাসীদের কাছে মা। তাই জেমসের মা হারানোর বেদনার গানটা আমাকে কাদাচ্ছে। রিফাতকে রামদা দিয়ে কোপাল নয়ন, সিলেটে ক’বছর আগে খাদিজাকে কোপাল বদরুল, নুসরাতকে পোড়াল মাদ্রাসার হুজুর, আর কত? রেললাইনগুলোর যে ছবি দেখছি প্রতিদিন এখন তো ভয় করে কাউকে রেলে যেতে বলতে। পুরো বাংলাদেশটা কিভাবে আহত হয়ে গেছে।

১৯ বছর আগে যে বাংলাদেশকে রেখে  এসেছিলাম তখন তো মানবিকতা, মানুষের সাহস, দেশপ্রেম এমন আহত ছিল না। কি হয়ে গেল পুরো বাংলাদেশটায়। সবাইকি সহজলভ্য ইন্টারনেটের জন্য আর দশ হাজার টাকার টাকার স্মার্ট ফোনের কারণে সারাদিন মাথা নিচু করে ডুবে আছেন বিবেককে এক্সপোর্ট করে। কি ভয়াবহ কথা, বরগুনার এসপি বলছেন, নয়ন ২০ মামলার আসামী, মাদক ব্যাবসায়ী, সে সন্ত্রাসী। এর মানে এই সব ছেলেরা জেল থেকে বা জামিন পাবার পর আর কোন নজরদারীতে নেই। ভাগ্য ভাল এখনও সে ছাত্রলীগের নেতা বা বাপ আওয়ামী লীগের লিডার বলেন নি।
আমাদের পদ্মা সেতুর দরকার নেই, আমাদের বিদ্যুতেরও দরকার নেই, আমাদের মেট্রোরেলের দরকার নেই, আমাদের চার লেনের মহাসড়কও দরকার নেই। আমাদের দরকার একটি নিরাপদ বাংলাদেশের। যেখানে স্বাভাবিক চলাফেরা ও নিরাপদ থাকা যাবে। আমাদের কোপাতে হবে পুরো সিষ্টেমটাকে। আমাদের কোপাতে হবে বিবেককে। আমাদের কোপাতে হবে কাপুরুষতাটাকে। একজন জনবান্ধব প্রধানমন্ত্রী  তিনি একাই তিন চারটা মন্ত্রণালয় চালান। তাকে প্রতি ঘটনায় সম্পৃক্ত হতে হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র সচিব, আইজিপি, এসপি, ওসি থাকার দরকার কেন? চাইলে একজন এসআই সন্ত্রাসীদের ঘুম হারাম করে দিতে পারে।

আমাদের মানবতার নেত্রী শেখ হাসিনাকে বিদেশে বসে আড়ংয়ের ঘটনায় অপমানিত একজন ম্যাজিস্ট্রেটের পক্ষে ব্যবস্থা নেন। সংসদেও কথা বলেন। তিনি ৭৪ বছর বয়সে যা করছেন তা ৪০ মন্ত্রী মিলেও করতে পারছেন না। সবাই মুজিবকোট ইস্ত্রি করে বসে থাকেন তার সাথে ছবি তুলার জন্য। সব মন্ত্রীরা দুর্নীতিবাজ না  কিন্তু সঠিক কাজ করার জন্য যে যোগ্যতা তা তাদের নেই।

উনাকে ফেসবুকে বসে সব সময় কোথায় কোন ঘটনা ঘটছে, কি ভাইরাল হচ্ছে তার জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে। আগে শুনতাম সবাই বলত, পুলিশের চাকরী ও সরকারী চাকুরীজীবিরা বেতন কম পান, তাই তাদের অনৈতিক আয় করতে হয়। সবার বেতন বাড়িয়ে দেয়া হল, অনেক উৎসব ভাতা দেয়া হচ্ছে। তারপরও তাদের লাগাম টানা যাচ্ছে না।

এই কোপাকুপির মচ্ছবে একটা সাফল্য আছে এই সরকারের। এখন সহিংসতায় আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহৃত হচ্ছে না। মানে অবৈধ অস্ত্র কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে। এখন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে (৭০ /৮০ দশকের ) খুব কাছে এসে আঘাত করে। আর আমরা ছবি তুলি, রেকর্ড করি, লাইভ দেখাই। খাদিজাকে যখন কোপাল তখনও অনেক লোক আশেপাশে ছিল, রিফাতকে যখন কোপাল তখন অনেকে ছিল। আমাদের বিবেকটাই এক্সপোর্ট হয়ে গেছে। আমাদের ছাত্রসমাজের মাঝেও একটা নিষ্ক্রিয়তা এসে গেছে, তারা রিয়েক্ট করতে পারে না। সমাজের মাঝে কিছু অনাচার ভয়াবহ আকার ধারন করছে, তারা গা বাঁচিয়ে চলছে। খাদ্য ভেজাল একটি সামাজিক ক্যান্সার সেখানেও ভাল ভাল ম্যাজিস্ট্রেটরা নাগরিকদের সাপোর্ট পাচ্ছেন না। কোপাতে হবে এই অপশক্তিকে যারা অধিক মুল্য নিয়ে আমাদের খাদ্যে বিষ ঢুকিয়ে বিক্রি করছে।

যে সামাজিক সমস্যাগুলো আমাদের আগে নিশ্চিত করতে হবে সেগুলো হচ্ছে- (১) স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি (২) নিরাপদ রেল লাইন (৩) ভেজাল মুক্ত খাদ্য  (৪) অসাধু ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা (৫) যে আইনজীবিরা সন্ত্রাসীদের জন্য আদালতে দাঁড়ায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা (৬) যে সব পুলিশ সন্ত্রাসীদেরে পক্ষে দুর্বল রিপোর্ট দেয় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া।
জুয়েল সাদত : সাংবাদিক, কলামিস্ট (আমেরিকা )

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন