Sylhet View 24 PRINT

বাংলা সাহিত্যে আমাদের হুমায়ূন আহমেদ

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-১১-১৫ ১৭:০১:৩৩

আল-আমিন :: অধিকাংশ মানুষ কল্পনায় সুন্দর, অথবা সুন্দর দূর থেকে। কাছে এলেই আকর্ষণ কমে যায়। মানুষ সব একই। কারও সম্পর্কে যত কম জানা যায়, সে তত ভালো মানুষ। অথবা দূর থেকে কাশবন দেখেছেন কখনো! পাহাড়! দুই গালে হাত দিয়ে চিৎকার করে উঠতে ইচ্ছা হয় না, ওমা কী সুন্দর! হয়ই তো। যখন সেই মেঘের মতো ঘন একই সে কাশবন, ছলনাময়ী সুন্দর একই সে পাহাড়ের যত কাছে যাওয়া হয়, পূর্বের দৃশ্যমান সৌন্দর্যে বিন্দু বিন্দু মলিনতা এসে জমা হতে শুরু করে। আরও কাছাকাছি, একেবারে কাছে গেলে সেই কাশবন ছিপছিপে কঞ্চির বন, উঁচু পাহাড়টিই এবড়োখেবড়ো মাটির ঢিবিই মনে হয়। মানুষও এমন।

এই ধরণের রসালো সাহিত্য সৃষ্টকারী বাংলা সাহিত্যের কিংবদন্তী জননন্দিত কথাসাহিত্যিক ও নিমার্তা হুমায়ূন আহমেদ এর জন্মদিন গেল দুদিন আগে অতিবাহিত হলো। এই লেখকের জনপ্রিয়তা আকাশস্পর্শী। তিনি মধ্যবিত্ত জীবনের কথা বাংলা সাহিত্যে সহজ-সরল গদ্যে তুলে ধরে পাঠককে মুগ্ধ করেছেন।

১৯৭২ সালে প্রকাশিত তাঁর প্রথম উপন্যাস "নন্দিত নরকে" দিয়েই তিনি কথাসাহিত্যে পালাবদলের তাৎপর্যপূর্ণ ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। এরপর একে একে উপন্যাসে পাঠকের কাছে নন্দিত হয়ে উঠেছেন অভূতপূর্ব জনপ্রিয়তা নিয়ে। মুক্তিযুদ্ধ ও দেশপ্রেম সচেতন এই লেখকের সৃষ্টি "তুই রাজাকার" স্লোগানটি আজ কোটি মানুষের কন্ঠে ধ্বনিত বহুব্রীহি নাটক দিয়েই শুরু হয়েছিলো। একসময় রাজাকার ডাকলে জেলখানায় যেতে হবে, এজন্য হুমায়ূন আহমেদ টিয়া পাখির মুখ দিয়ে "তুই রাজাকার" বলিয়েছিলেন খুব বুদ্ধি খাটিয়ে। আর এখন এই অবিস্মরণীয় স্লোগানটিই আমাদের তরুণদের জাগিয়ে রেখেছে রাজাকার মুক্ত বাংলাদেশ দেখার।

হুমায়ূন আহমেদ ছিলেন একজন বাংলাদেশী ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, নাট্যকার এবং গীতিকার, চিত্রনাট্যকার ও চলচ্চিত্র নির্মাতা। তিনি বিংশ শতাব্দীর জনপ্রিয় বাঙালি কথাসাহিত্যিকদের মধ্যে অন্যতম। তাকে

বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখক বলে গণ্য করা হয়। নাটক ও চলচ্চিত্র পরিচালক হিসাবেও তিনি সবখানে সমাদৃত।

হুমায়ূন আহমেদ সত্তর দশকের সময় থেকে শুরু করে মৃত্যু অবধি ছিলেন বাংলা গল্প-উপন্যাসের অপ্রতিদ্বন্দ্বী কারিগর। এই কালপর্বে তাঁর গল্প-উপন্যাসের জনপ্রিয়তা ছিল পাহাড়উঁচু। তাঁর সৃষ্ট হিমু এবং মিসির আলি ও শুভ্র চরিত্রগুলি বাংলাদেশের যুবকশ্রেণীকে গভীরভাবে উদ্বেলিত করেছে।

এই কথাসাহিত্যিক উপন্যাসে আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা পেলেও, তাঁর শুরুটা ছিল কবিতায়। এরপর নাটক, শিশুসাহিত্য, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী, চলচ্চিত্র পরিচালনা থেকে শিল্প-সাহিত্যের প্রতিটি ক্ষেত্রেই তিনি রেখেছেন আপন পদচিহ্ন এবং সবজায়গায় পেয়েছেন সাফল্য।

তাঁর সাহিত্য রচনাবলী বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলামের পরে সবচেয়ে গভীর ভাবসম্পন্ন ও ফলপ্রসূ ছিল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও নজরুল ইসলামের মধ্য দিয়ে বাংলা সাহিত্যের একটি স্বর্ণযুগ শেষ হয়ে আরেকটি শুরু হয়েছে হুমায়ূন আহমেদের মধ্য দিয়ে। আর এই সময়ে তিনিই বাংলা সাহিত্যের সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকারী। তিনি তাঁর সৃষ্ট চরিত্রের সকল কাজ ও চিন্তা-ভাবনা নিয়ন্ত্রণ করেছেন নিজ বুদ্ধিতে এবং তিনিই হয়েছেন বাংলা সাহিত্যে একটি শতাব্দীর সবচেয়ে জনপ্রিয় হুমায়ূন আহমেদ। তরুন-তরুনীদের প্রেম ভালোবাসা ভালোলাগা সব ধরণের রস তাঁর সৃষ্ট সাহিত্য উল্লেখ আছে। তিনি উপমহাদেশের অন্যতম সেরা লেখক হিসেবে বাংলা সাহিত্যে একটি নতুন যুগের সূচনা করেছিলেন এবং তিনি বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক কিংবদন্তি হিসেবে সম্মৃদ্ধ হয়েছেন।

তাঁর রচিত অন্যতম উপন্যাস সমূহ হলো মধ্যাহ্ন, জোছনা ও জননীর গল্প, মাতাল হাওয়া লীলাবতী, কবি, বাদশাহ নামদার ইত্যাদি। বাংলা সাহিত্যের উপন্যাস শাখায় অসামান্য অবদানের জন্য তিনি ১৯৮১ সালে বাংলা একাডেমি প্রদত্ত

বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে তাঁর অবদানের জন্য ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত করে। তাঁর নির্মিত চলচ্চিত্রগুলো সর্ব জায়গায় ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়। ১৯৯৪-এ তাঁর নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধভিত্তিক আগুনের পরশমণি মুক্তি লাভ করে। চলচ্চিত্রটি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার সহ আটটি পুরস্কার লাভ করে। এই লেখকের নির্মিত অন্যান্য চলচ্চিত্রগুলো হলো শ্রাবণ মেঘের দিন, দুই দুয়ারী, শ্যামল ছায়া, ও ঘেটু পুত্র কমলা।

হুমায়ূন আহমেদ সৃষ্ট হিমু চরিত্র প্রকাশ ঘটে ময়ূরাক্ষী উপন্যাস দিয়ে। এই উপন্যাস দিয়েই তরুণ সাহিত্যপ্রেমীদের মাঝে জনপ্রিয়তা লাভ করে। এই ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে একে একে প্রকাশিত হতে থাকে তাঁর দরজার ওপাশে, হিমু, পারাপার, এবং হিমু, হিমুর হাতে কয়েকটি নীলপদ্ম, হিমুর দ্বিতীয় প্রহর, হিমুর রূপালী রাত্রি, এবং একজন হিমু কয়েকটি ঝিঁ ঝিঁ পোকা ইত্যাদি।

তিনি দুই শতাধিক গল্পগ্রন্থ ও উপন্যাস রচনা করেছেন। তাঁর রচনার প্রধান কয়েকটি বৈশিষ্ট্যের মধ্যে অন্যতম হলো গল্প-সমৃদ্ধি। এছাড়াও তিনি অনায়াসে ও বিশ্বাসযোগ্যভাবে অতিবাস্তব ঘটনাবলীর অবতারণা করেন যাকে একরূপ যাদু বাস্তবতা হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। তাঁর গল্প ও উপন্যাসে সামান্য পরিসরে কয়েকটি বাক্যের মাধ্যমে চরিত্র চিত্রণের অদৃষ্টপূর্ব প্রতিভা পরিলক্ষিত রয়েছে। অনেক রচনার মধ্যে তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এবং উপলব্ধির প্রচ্ছাপ লক্ষ্য করা যায়। ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে রচিত উপন্যাস মধ্যাহ্ন তাঁর অন্যতম শ্রেষ্ঠ রচনা হিসেবে পরিগণিত।

তিনি বাংলাদেশের সাহিত্যেনুরাগীদের কাছে তুমুল জনপ্রিয়। বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় এই কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ৭১তম জন্মদিন পালন করা হয়েছে গেল ১৩ নভেম্বর। ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর জন্ম নেন এই জনপ্রিয় লেখক ও কথাসাহিত্যিক। বেঁচে থাকাকালীন জন্মদিনটি ঘিরে পুরো দেশে তাঁরভক্তদের মধ্যে সৃষ্টি হতো বিপুল উন্মাদনা। নানা আয়োজনে দিনভর মুখরিত থাকতো দখিন হাওয়া, নুহাশপল্লী। আমিও তাঁর একজন পাঠকভক্ত। তিনি আমার প্রিয় কথাসাহিত্যিকদের অন্যতম একজন। আমার অসাধারণ ভালো লাগে তাঁর সাহিত্য সৃষ্ট। এই ভালোলাগা থেকেই ভালোবেসে "শ্রাবণবিকেল তুমি" উপন্যাসটি এই প্রিয় লেখককেই উৎসর্গ করেছি।

শুভ জন্মদিন হুমায়ূন আহমেদ।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৫ নভেম্বর ২০১৯/এএ/এসডি

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.