Sylhet View 24 PRINT

মরার উপর খাড়ার ঘা

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৮-২৯ ২৩:৫৬:১৮

ফারজানা ইসলাম লিনু

।। ফারজানা ইসলাম লিনু ।।
সেই গুহা জীবন থেকেই মানুষ বিরূপ প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করে আসছে। তারপরও অস্বীকার করার উপায় নেই,আমরা প্রকৃতির সন্তান, প্রকৃতি আমাদের পরম বন্ধু।

নিজেদের আগ্রাসী মনোভাবের কারণে আমরাই প্রকৃতিকে প্রতিপক্ষের আসনে বসিয়েছি দিনে দিনে। নিজেদের স্বার্থে প্রাকৃতিক সম্পদের যথেচ্ছ ব্যবহার ও অপব্যবহারের কারণে প্রকৃতি আজ আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাহিরে।

বাঁচাও প্রকৃতি, বাঁচাও দুনিয়ার জীববৈচিত্র্য বলে গলা ফাটিয়ে চেঁচামেচি করে আজ কোন কাজ হচ্ছেনা।

জলবায়ু পরিবর্তনে উদ্ভুত সমস্যার শুরু গত শতাব্দী থেকে। শক্তিধর দেশগুলোর অপরিকল্পিত পারমাণবিক পরিক্ষা, গ্রীন হাউস এফেক্ট, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ সহ নানা কারণে ফুলে ফেঁপে আছে প্রকৃতি। সুনামি, বন্যা, খরা, তুফান, জ্বলচ্ছ্বাস, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টির মাধ্যমে ক্ষোভ ঝাড়ছে আমাদের উপর।

প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট তো হয়েছে আগেই। বর্ষায় বৃষ্টি নেই, শীতে ঠান্ডা নেই, বৈশ্বিক উষ্ণায়নে গলছে হিমালয়ের বরফ, বাড়ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা।

সমুদ্রের নিচে তলিয়ে যাবে মালদ্বীপ কিংবা বঙ্গ বদ্বীপের বিরাট অংশ। জাতিসংঘের জলবায়ু তহবিলের সুষম বাস্তবায়নেও রয়েছে নানা অসঙ্গতি। তাইতো বাড়ছে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত শরণার্থীর সংখ্যা।

করোনাজনিত অবরুদ্ধতার দিনে প্রকৃতি ফিরে আসতে শুরু করে আগের অবস্থায়। সমুদ্রের পাড়ে ডলফিন, কাছিম, কাকড়া, নদীতে শুশক, বনে জঙ্গলে বিপন্ন প্রাণীর আনাগোনা লক্ষ্য করা যায় অপ্রত্যাশিতভাবেই।

মানুষজাতি নিজেদের অপকর্মের জন্য কিঞ্চিৎ অপরাধবোধে ভোগলেও আগ্রাসী স্বভাব রক্ষার সিদ্ধান্তে কিন্তু অনড়।

মানুষের প্রয়োজনে প্রকৃতি না প্রকৃতির প্রয়োজনে মানুষ, এই নিয়েও দ্বিধাবিভক্তি দূর হয়না। মতৈক্য হয়না বলে মতানৈক্য থেকে যায়। তাইতো আতিকায় ডাইনোসরের মতো মানবজাতির অস্তিত্বও আজ বিপন্ন প্রায়।

খালি করোনার অতিমারি জনিত যন্ত্রণা নয়, আমাদের নাকের আগায় ঝুলছে জলবায়ু পরিবর্তনের পুরনো খড়গ। জলবায়ু সম্মেলনের উদ্দেশ্য পরিকল্পনা বার বার ব্যর্থ হয় বিশ্ব মোড়লদের মুরব্বিয়ানার কারণে। তাদের স্বার্থের বলি চুনোপুঁটি দেশ গুলো।

প্রকৃতির বিচার বড় নির্মম। মোড়লরাও এই বিচারের উর্ধ্বে নন। কখনো কখনো মাশুল দিতে হয় কড়ায় গন্ডায়।

গতবছর ভয়াবহ দাবানলে ধ্বংস হয়ে যায় পৃথিবীর ফুসফুসখ্যাত আমাজন রেইনফরেস্ট ও অস্ট্রেলিয়ার বিশাল তৃণভুমি। ইশ! পুড়ে যাওয়া প্রাণীদের বিভৎস মৃত্যুদৃশ্যের ছবি চোখ থেকে সরেনা।

জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া জঙ্গল আবার কবে যে সবুজে আচ্ছাদিত হবে?

দিনে দিনে ভয়ংকর হচ্ছে দাবানল। এক দুই মাসের ব্যাপ্তি ছাড়িয়ে এখন বছরকাল স্থায়ী হয়। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত উচ্চ তাপমাত্রা ও খরার কারণে নিত্যনতুন দাবানলের আশংকা বাড়ছে, বাড়ছে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা।

স্যাঁতসেতে উদ্ভিদের জায়গায় জন্ম নিচ্ছে শুষ্ক উদ্ভিদ, যারা ভুগর্ভস্থ মাটি থেকে পানি শোষণ করছে বেশি বেশি। দেখা দিচ্ছে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট।

উষ্ণ আবহাওয়ায় প্রকৃতি বিরোধী গাছের শত্রু কীটপতঙ্গের উপদ্রব বাড়ছে। খাদ্য শস্যের উৎপাদনে প্রভাব পড়ছে জোরেশোরে।
করোনার সংক্রমণ, মৃত্যুভয়, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও দুর্যোগের অভিঘাত সামলে উঠলেও জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াল থাবা আমাদের ভোগাবে অনন্তকাল।

এখনো সময় আছে, আঠারো কোটি মানুষের দেশে বছরে জনে জনে একটি করে গাছ লাগালে পাঁচ বছরে নব্বই কোটি গাছ অফুরন্ত অক্সিজেন নিয়ে মাথার উপর ছায়া দিবে।

ফারজানা ইসলাম লিনু : শিক্ষিকা ও গল্পাকার

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.