আজ বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ইং

মাশরাফিদের দাবায়ে রাখার দিন শেষ

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৭-০৬-১০ ১৩:১৪:৪৫

বিশ্বকবি থেকে বঙ্গবন্ধু; বাঙ্গালীর শ্রেষ্ঠ মহামানবেরা ও বাঙ্গালীদের নিয়ে উচ্চাকাঙ্খার সাথে সাথে খুবই হতাশার রক্তক্ষরণও করেছেন তাদের লেখনে কিংবা বচনে। বঙ্গবন্ধু তো শেষ পর্যন্ত ‌'আমাদের দাবায়ে রাখা যাবে না' বলে যে স্ফুলিঙ্গ উদগীরণ করে গেছেন সেটার উভমূখী ব্যবহার দেখতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

কার্ডিফে বাংলাদেশ বনাম নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেট ম্যাচের উভয় অর্ধেই বাঙ্গালীদের সেই দাবায়ে না পড়ার অনেক রকমের চরিত্রই পরিলক্ষিত হলো ক্ষনে ক্ষনে। ফেইসবুকের কল্যাণে সেটার বহিঃপ্রকাশ ও চমৎকার; সেই সাথে বুমেরাং ও পল্টিবাজ রাজনৈতিক নেতাদের মতোই কখনো কখনো আকর্ষণীয়-হাস্যকর-তীব্রতর কিংবা বিব্রতকরও।

নিউজিল্যান্ড কে ২৬৫ রানে আটকে রাখার পর বাহবা আর বাহবা,প্রশংসার শিলাবৃষ্টিতে বাংলদেশের টাইগারদের ভিজিয়ে দেয়া। বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের শুরুতেই কিউই ঝড়ে মাত্র ৩৩ রানে চার উইকেট পড়ে যাওয়ায় শিলাবৃষ্টির শিলাগুলোকে পাথর কিংবা কাংকড় বানিয়ে টাইগারদের উপরই নিক্ষেপের অদম্য প্রচেষ্টা।

সেই তারাই আবার শেষ বিকালে সাবাস টাইগার চিৎকার করে ফেইসবুক থেকে রাজপথে  নেমে আসলেন অবলীলায়। এসব সমর্থকদের আসলে কখনোই দাবায়ে রাখা যাবে না হারলে কিংবা জিতলে। তারা তাদের ভিন্নরূপ দেখাবেই। আসলে এখানেই খেলাধুলার সৌন্দর্য্য, এরা থাকবেই। থাকুক আমাদের পাশে বার্মি আর্মির ন্যায়।

তবে হ্যাঁ যারা একটু এদিক সেদিক হলেই সাকিব বাদ, মাহমুদুল্লাহ বাদ, তামিম বাদ, মুশফিকুর বাদ বলে শ্লোগান তুলেন তারা কি এই সাকিবময় ঐতিহাসিক বিজয়ের পর দয়া করে মুখটি বন্ধ করবেন নাকি ফেবিকল আমদানি করতে হবে মুখ বন্ধ করার জন্য? সাকিবদের বিকল্প অবশ্যই আসবে কিন্ত মনে রাখা দরকার সাকিবরা একদিনে তৈরী হয়নি তৈরী করাও যাবে না।

ক্রিকেটকর্তাদের এখনই অনুধাবন করা দরকার যে মাহমুদুল্লাহকে শ্রীলংকা সফরে টেস্ট ক্রিকেটের পর ওয়ানডে ক্রিকেট থেকেও বিদায় দিয়ে দিয়েছিলেন। একজন ক্যাপ্টেন মাশরাফির চেয়ে মানুষ মাশরাফির শক্ত ভূমিকার জন্য টিমে থেকে যান ক্রাইসিসম্যান মাহমুদুল্লাহ যার সুফল আজ আরেকটি কার্ডিফ গাঁথায় আমরা পেলাম প্রান খুলে। দমবন্ধ অবস্থা থেকে অক্সিজেন মাস্ক নিয়ে আমাদের লাইফলাইন দিলেন সাকিব-মাহমুদুল্লাহ। দেশের হয়ে সর্বোচ্চ জুটি (২২৪) আর ওয়ানডে ক্রিকেটে দেশের হয়ে বিদেশে প্রথমবারের মতো জোড়া সেঞ্চুরির কৃতিত্বের কীর্তি।

বড় দল হতে গেলে বড় দলের মতোই দাপুটে জয় দরকার,বড় দলের সাথে বড়ভাই সুলভ জয় দরকার। বড় ম্যাচের জন্য বড় মানের নার্ভ দরকার,বড় প্লেয়ার যে হচ্ছেন সেটার মঞ্চ দরকার। সেই বড় মঞ্চ পেয়ে গেলে বড়ত্বের স্ফুরণ দরকার। আর সবচেয়ে বেশী দরকার-নিশ্চিত পরাজয়ের বৃত্ত থেকে দলকে জয়ের কেন্দ্রে নিয়ে আসা এবং শেষ পর্যন্ত বিজয়ের পতাকা প্রতিপক্ষের নাকের ডগায় পতপতিয়ে উড়ানো। কার্ডিফের ম্যাচে বাংলাদেশের দামাল ছেলেরা এ সবকিছুরই চূড়ান্ত বাস্তবায়ন করে দেখিয়েছে।

রাহুল দ্রাবিড় সৌরভ গাঙ্গুলির ব্যাটিং নিয়ে বলেছিলেন, 'অফ সাইডে প্রথমে ঈশ্বর এরপরই মহারাজ'। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সাকিবের অফ ড্রাইভগুলো দেখে থাকলে দ্রাবিড় কি বলবেন শুনতে বড়ই মন চাইছে। কিংবা ৯৯ রানে ছক্কার শট দেখে শেবাগের-ই কি বা মনে আসবে।

হ্যাঁ বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন- আমাদের কে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না, বাংলাদেশের টাইগাররা যেন সেটার জানান দিচ্ছে বারংবার। আমাদের কে দাবায়ে রাখার দিন শেষ, এখন আমরাও বলে কয়ে জিততে পারি; জিতে চলেছি।

-ফুজেল আহমদ
টরেন্টো. কানাডা।

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন