আজ শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ইং

স্মৃতিতে বাবুল আখতার: প্রিয় সহকর্মী

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৭-০৬-১২ ১৪:৫১:৪২

আল- আজাদ

১৯৮৩ সালের পয়লা মে সিলেটের সাপ্তাহিক দেশবার্তায় আমি সহকারী সম্পাদক হিসেবে যোগদান করি। এই পদে সম্পাদনার দায়িত্ব থাকলেও এর পাশপাশি নিয়মিত খবর সংগ্রহ এবং তৈরি করতে হতো। একহাতে দুই কাজ। তবে আমার মাথার উপরে ছায়া হিসেবে ছিলেন সম্পাদক হিমাংশু শেখর ধর আর অগ্রজ সাংবাদিক-ছড়াকার মাহমুদ হক। অজয় পাল আমাকে দেশবার্তায় যোগদানের সুযোগ করে দিয়েই যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান। কবি তুষার করও জড়িত ছিলেন এ পত্রিকার সাথে। প্রতিসংখ্যায় শেষ পৃষ্ঠায় ‘শেষের পাতা’ নামে কাব্যরস সমৃদ্ধ বিশেষ প্রতিবেদন লিখতেন।

দেশবার্তায় যোগদানের মধ্যে দিয়েই কার্যত সাংবাদিকতাকে আমি পেশা হিসেবে গ্রহণ করে নেই। ফলে পুরো জেলায় অর্থাৎ বৃহত্তর সিলেটের থানা ও মহকুমায় কর্মরত সাংবাদিকদের সাথে আমার যোগাযোগ শুরু হয়। সবখানেই তখন সাংবাদিকের সংখ্যা হাতেগোণা; কিন্তু প্রায় সবাই ছিলেন কঠোর পরিশ্রমী এবং নিবেদিত প্রাণ। তাদের কেউ কেউ এতটাই দক্ষ ছিলেন যে, জেলা সদরেও এতটা দক্ষতাসম্পন্ন সাংবাদিক খুব বেশি ছিলেন না। তারা যেমনি ছিলেন অনুসন্ধানী তেমনি ছিলেন সাহসী। হাতের লেখা ছিল চমৎকার। লেখার হাত ছিল পাকা। এতটাই গুছিয়ে লিখতেন যে, খুব বেশি কাটাকাটি অর্থাৎ সম্পাদনা করতে হতোনা।

সদ্য প্রয়াত বিশ্বনাথ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাবুল আখতার ছিলেন সাপ্তাহিক দেশবার্তার বিশ্বনাথ প্রতিনিধি। এই সুবাদে তার সাথে পরিচয় এবং ঘনিষ্ঠতা আশির দশকের প্রথমদিকেই। রাজনীতিতে এতটা উপরে উঠা সত্ত্বেও আমার কাছে তার সাংবাদিক পরিচয়টাই ছিল বড়। তাকে কখনো রাজনীতিবিদ হিসেবে ভাবতে পারিনি। তাই বিশ্বনাথের নতুন প্রজন্মের সাংবাদিকদের কাছে সব সময় তার সম্পর্কে কথা বলে তাদেরকে উৎসাহিত করার চেষ্টা করতাম।

বাবুল আখতার সাংবাদিকতার জীবনে রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন না। সাংবাদিকতায়ই সময় দিতেন বেশি। দেশবার্তায় খবর পাঠাতেন নিয়মিত-বেশিরভাগই ডাকযোগে। মাঝে মধ্যে সরাসরি কাষ্টঘরে সরাসরি পত্রিকা কার্যালয়ে চলে আসতেন। তখন দেখা হতো। কখনো সঙ্গে থাকতেন সাংবাদিক আ ফ ম সাঈদ, কখনোবা সাংবাদিক বিশ্বেশ্বর রায় আবার কখনো কখনো দুজনই। দারুণ আড্ডাবাজ ছিলেন। অনেকক্ষণ না কাটিয়ে যেতেন না।

ঐ যে বললাম, তখনকার সহকর্মী অর্থাৎ সাপ্তাহিক দেশবার্তার প্রতিনিধিদের মধ্যে কারো কারো পাঠানো খবর খুব একটা সম্পাদনা করতে হতোনা তাদের একজন ছিলেন বাবুল আখতার। নিউজপ্রিন্ট কাগজে তার পরিচ্ছন্ন হাতের লেখা এখনো চোখের সামনে জ্বলজ্বল করে। এখনতো আর হাতে লিখতেই হয়না। আগে সবকিছু হাতে লিখতে হতো। তাই পরিচ্ছন্ন লেখা না হলে কম্পোজিটররা ভুল করতো বেশি। এ কারণে একাধিকবার প্রুফ দেখতে হতো।

একজন দক্ষ সংগঠকও ছিলেন বাবুল আখতার। বিশ্বনাথ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন অনেকদিন। তার কার্যকালে বিশ্বনাথ প্রেসক্লাব বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রায়ই সভা, আলোচনা সভা ও সেমিনারের আয়োজন করতো। এসব কর্মসূচিতে আমার উপস্থিতি ছিল প্রায় নিয়মিত। এছাড়া তৎকালীন দৈনিক বাংলার স্টাফ রিপোর্টার তবারক হোসেইন সহ সিলেটের অন্যান্য জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকও অংশ নিতেন।

এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করতে হয়, তখনো বিশ্বনাথের সাংবাদিকদের মধ্যে বিভক্তি ছিল। তজম্মুল আলী নামের একজন সিলেটের দুয়েকজন সাংবাদিকের পৃষ্ঠপোষকতায় এই বিভক্তি সৃষ্টি করেছিলেন। তবে বেশিদিন টিকতে পারেননি।

সম্পর্কের সূত্র ধরেই বাবুল আখতারের সহযোগিতায় বিশ্বনাথ থানা সদরে বাসিয়া খেলাঘর আসর গড়ে তুলতে সক্ষম হই। এই সংগঠনটি বেশ কিছুদিন সক্রিয় ছিল-এখন কেমন আছে জানিনা।

আমি এখন আর রাজপথের সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মী নই। তবে সচেতনভাবেই রাজনৈতিক আদর্শ ধারণ করি-লালন করি। তাই বাবুল আখতারের রাজনৈতিক পরিচয়টি আমার কাছে বড় হবার কথা; কিন্তু না, বিশ্বনাথ উপজেলার মতো অত্যন্ত রাজনীতি সচেতন জনপদে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক-তার এই পরিচিতি আমাকে কখনো বড় করে দেখার তাগিদ দেয়নি। এর চেয়ে বাসিয়া পাড়ের এই হাসিমাখা মুখের মানুষটিকে সাংবাদিক হিসেবে ভাবতেই আমি বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেছি-সম্মান করেছি। তাই তার অন্তিমযাত্রার সংবাদটি পাবার সাথে সাথে মনে হয়েছে, সিলেটের গণমাধ্যম জগৎ একজন দক্ষ যোদ্ধাকে হারালো আর আমি হারালাম এক প্রিয় সহকর্মীকে, যিনি শহর থেকে দূরের সাংবাদিক হলেও যাকে দেখে এবং যার লেখা থেকে অনেক শিখেছি। এই ঋণটা শোধ করতে পারলামনা-পারবোনা।

লেখক: সভাপতি, সিলেট প্রেসক্লাব ফাউন্ডেশন ও সিনিয়র সাংবাদিক।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ ১২ জুন ২০১৭ / এএ/ এমইউএ

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন