আজ শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ইং

জাতিকে আবারও গর্বিত করলেন টিউলিপ

সারওয়ার কবির

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৭-০৬-১৩ ১৯:৪০:৩৬

সারওয়ার কবির :: হ্যাম্পস্টেড এন্ড কিলবার্ন থেকে দ্বিতীয় বারের মতো এমপি নির্বাচিত হয়েছেন টিউলিপ রেজওয়না সিদ্দিক। টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক বিশ্ব বাঙালির কাছে পরিচিত একটি নাম। টিউলিপ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনী। টিউলিপ বাংলাদেশের মানুষের কাছেও বেশ পরিচিত।বিলেতের বাঙালিদের মতো টিউলিপের বিজয়ে তাই আনন্দিত বিশ্বের সমস্ত বাঙালিরা।

৮ই জুন ছিলো ব্রিটেনের সাধারণ নির্বাচন। মৃদু বাতাস আর হালকা ঠান্ডা আবহাওয়ায় ভোটাররা ভোট দিতে গিয়েছেন ভোট কেন্দ্রে। সারাদিন বৃষ্টি না নামলেও বিকেলের দিকে কিছুটা বৃষ্টি নামে। ব্রিটেনের নির্বাচনে সারাবিশ্বের বাঙালিদের আকর্ষণ ছিলো তিন বাঙালি কন্যার সংবাদ জানার। টিউলিপের আসন নানা কারনে আলোচনায় ছিলো। এই আসনের নির্বাচনী খবর জানবার জন্য সারাবিশ্বের বাঙালিরা ছিলেন উদগ্রীব। সারাদিন ভাইবার, ফেইসবুক মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ, টুইটারে টিউলিপের খবর জানতে চেয়েছেন। 

আর ফলাফলের জন্য তো গভীর রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করেছেন অনেকেই। লন্ডন সময় ভোর রাত ৩টা ২৬ মিনিটে যখন টিউলিপের নির্বাচনী ফলাফল ঘোষণা করা হয়। বাংলাদেশ তখনও অপেক্ষায়। অনেকেই সারারাত ঘুমাননি। সকালে সাড়ে ৮ টায় টিউলিপের বিজয়ের খবর শুনে স্বস্তি নিয়ে ঘুমুতে যান তারা। শুধু বাংলাদেশ নয় বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশে বাঙালিরা এমনই অপেক্ষায় ছিলেন তাদের প্রিয়জন টিউলিপের নির্বাচনী ফলাফল জানবার জন্য। টিউলিপ তাঁর বিজয়ী বক্তৃতায় তাই সকল প্রবাসী বাঙালিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

টিউলিপ গত দুই বছরে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে নানা ইস্যুতে ছিলেন সরব। তিনি নিজ দক্ষতায় লেবার পার্টির ছায়া মন্ত্রীসভায় ঠাঁই করে নিয়েছিলেন। বেক্স্রিট ইস্যুতে সংসদে তাঁর ভূমিকা ছিলো অসাধারন। তিনি নিজের নীতিতে ছিলেন অটল। নিজ দলের ব্রেক্সিট ইস্যুতে দ্বিমত পোষণ করে ছায়ামন্ত্রীসভা থেকে পদত্যাগও করেন তিনি। নিজ নির্বাচনী এলাকা হ্যাম্পস্টেড এন্ড কিলবার্নের মানুষের প্রতি সম্মান দেখিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘ ইইউ থেকে ব্রিটেনের প্রস্থানের প্রক্রিয়া শুরুর পক্ষে ভোট দিলে, তা হবে নিজ সংসদীয় আসনের জনগণের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা।’ টিউলিপের নির্বাচনী এলাকা হ্যা¤পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্নের ভোটারদের তিন-চতুর্থাংশই ইইউতে থেকে যাওয়ার পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন। নিজের পদত্যাগপত্রে টিউলিপ লিখেন, ‘আমি সবসমই স্পষ্ট ছিলাম যে, আমি হ্যা¤পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্নে পার্লামেন্টের প্রতিনিধিত্ব করি না। বরং পার্লামেন্টে হ্যা¤পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্নের প্রতিনিধিত্ব করি। তাঁর এই দৃঢ়চেতা মনোভাব সেদিন কিলবার্ন হ্যাম্পস্টেডের মানুষের কাছে টিউলিপের প্রতি তাদের বিশ্বাস এবং আস্থা বাড়িয়েছিলো বহুগুন।’

টিউলিপ ট্রাম্পের অভিবাসী ও উদ্ধাস্তু নীতি নিয়েও সংসদে কথা বলে আলোড়ন তুলেছিলেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসী ও উদ্বাস্তু নীতি নিয়ে থেরেসা মে-র সমালোচনা করে বলেছিলেন থেরেসা মে-র 'নমনীয়' প্রতিক্রিয়া ব্রিটেনে বসবাসরত মুসলিম সম্প্রদায়ের ভোট দেয়ার অধিকারকে ঝুঁকিতে ফেলবে এবং ব্রিটেন সম্পর্কে মুসলিম সম্প্রদায়ের দীর্ঘদিনের মনোভাবকেও ক্ষতিগ্রস্ত করবে’ এই ব্যর্থতা মুসলিমদের রাস্তায় নামতে বাধ্য করবে, যা সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ক নষ্ট করবে।

বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ রেহানার ছোট মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক। ১৯৮২ সালে লন্ডনে জন্ম নেওয়া টিউলিপ তাঁর মায়ের জীবনসংঘ্রামের অনেক চড়াই উৎরাই দেখেছেন।  ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্টে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন স্বপরিবারে নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার হন, তখন বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা বিদেশে অবস্থান করায় প্রাণে বেঁচে যান। শেখ রেহানা ল-নে রাজনৈতিক আশ্রয় নেন। একজন অভিবাসীর কন্যা আজ ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য এটা একজন মায়ের জন্য গর্বের, আনন্দের। শেখ রেহানার এই আনন্দ আনন্দাশ্রু হয়ে নেমেছিলো ৯ জুন ভোর রাতে। শেখ রেহানা ঐদিন রাত সাড়ে ১১ টার দিকে হ্যাম্পস্টেড কিলবার্নের ভোট গণনা কেন্দ্রে ঢুকেন কন্যা টিউলিপকে নিয়ে। পুরো সময়ই ভোট গণনা কেন্দ্রে ছিলেন তিনি। যখন ফলাফল ঘোষণা করা হয় তখন মেয়ে টিউলিপকে জড়িয়ে কাঁদছিলেন তিনি। এ এক অন্যরকম দৃশ্য। এ্ এক অন্যরকম আনন্দ। এ এক মায়ের পৃথিবী বিজয়। ভোট গণনা কেন্দ্রে টিউলিপের সাথে ছিলেন ভাই রেদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি, ও বোন রুপন্তী সিদ্দিক।  

টিউলিপ তাঁর খালা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেই নিজের রাজনীতির রোল মডেল মনে করেন। শেখ হাসিনার কাছেই তিনি রাজনীতি শিখেছেন। তাঁর ভাষায় উনিই আমাকে সবচেয়ে বেশি শিখিয়েছেন। রাজনীতি তো উনার কাছ থেকেই সব শেখা। ন্যায়পরায়নতা তাঁর কাছ থেকে শেখা। কিভাবে ক্যাম্পেইন করতে হয় তাও শিখেছি খালার কাছ থেকে। শিখেছি কিভাবে মানুষের কাছে যেতে হয়। 
টিউলিপ গ্রাজুয়েশন ডিগ্রী লাভ করেছেন ইংরেজী সাহিত্য নিয়ে ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন থেকে। কিংস কলেজ লন্ডন থেকে মাস্টার্স করেছেন। ২০১০ সালে তিনি ক্যামডেনের রিজেন্টস পার্ক থেকে কাউন্সিলার নির্বাচিত হন। ২০১৫ সালে তিনি প্রথমবারের মতো এমপি নিবাচিত হন। তখন তাঁর প্রাপ্ত ভোট ছিলো ২৩৯৭৭। ্২০১৭ সালের ৮ই জুন তিনি দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচিত হলেন। এবারে তাঁর প্রাপ্ত ভোট ছিলো ৩৪৪৬৪।

বাঙালি ও বাংলাদেশের জন্য টিউলিপের বিজয় এক অনন্য অর্জন। টিউলিপ নিজেকে আজ অন্য উচ্চতায় তুলে ধরেছেন। বিলেতের বাঙালিরা তাঁর সাফল্যে উদ্বেলিত। দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচিত হয়ে গর্বিত করলেন পুরো বাঙালি জাতিকে।

লেখক : সাংবাদিক।

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন