আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ইং

সেই ভূতের বাড়ি এখন

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০৫-২৪ ০০:২৩:০৭

জিন্নাতুন নূর :: মিরপুর ছয় নম্বর সেকশনের মিরপুর বাংলা উচ্চ বিদ্যালয় ছাড়িয়ে সাড়ে এগার নম্বরের দিকে যেতেই প্রধান সড়কের বাম পাশে ফার্নিচারের দোকান ‘উডল্যান্ড’। দোকানটি যে জমির একপাশে তৈরি করা হয়েছে তার অন্য পাশেই মিরপুরের সেই রহস্যময়   ‘ভূতের বাড়ি’র অবস্থান। যেখানে একসময় রহস্যময় জীবনযাপন করতেন দুই বোন রীতা-মিতা। বাড়িটির প্রবেশদ্বার দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। নীরব সুনসান ও অন্ধকারাচ্ছন্ন বাড়িটি ঢাকা পড়েছিল আগাছায়। এলাকায় বাড়িটি ‘ভূতের বাড়ি’ নামেই পরিচিত। কিন্তু বর্তমানে দিনের বেলা এর ফটক খোলাই থাকে। টিনশেডের আধাপাকা চার রুমের বাড়িটিতে শ্রমিকরা ফার্নিচার তৈরির কাজ করেন। উডল্যান্ডের মালিক মো. সাদেক জানান, তার কাছে ‘ভূতের বাড়িটি’ ফার্নিচারের কারখানা হিসেবে ভাড়া দেওয়া হয়েছে।

রহস্যময় এই বাড়িটির প্রবেশ ফটকের পাশেই দেয়ালের নামফলকে লেখা রয়েছে ডা. আইনুন নাহার রীতা। মা-বাবার মৃত্যুর পর রীতা তার ছোট বোন ইঞ্জিনিয়ার মিতাকে নিয়ে এ বাড়িতে থাকতেন। সিজোফ্রোনিয়ায় আক্রান্ত এই দুই বোনের রহস্যজনক জীবনযাপনের কারণে বর্তমানে তাদের বড় বোন কামরুন্নাহার হেনা তার রায়েরবাজারের বাড়িতে রীতা-মিতার দেখভাল করছেন। তবে নিষেধ থাকায় বাড়িটির আশেপাশে লাগানো আম-কাঁঠাল গাছ এখনো কাটা হয়নি। উডল্যান্ডের মালিক মো. সাদেকের ভাষ্য, দীর্ঘদিনের পর্যবেক্ষণে এই বাড়িটিতে থাকা পুরনো আমগাছটিকে আশেপাশের বাড়ির বাসিন্দা এবং তিনি নিজে রহস্যময় আচরণ করতে দেখেছেন। কিন্তু দুই বোনের ক্ষতি হবে এমন আশঙ্কায় রিতা-মিতার বড়বোন আমগাছটি কাটতে নিষেধ করেছেন। উডল্যান্ড দোকান ও ফার্নিচারের কারখানা মিলিয়ে সাদেক রিতা-মিতার বড়বোনকে প্রতি মাসে মোট ১৬ হাজার টাকা দিচ্ছেন।

বাড়িটির সামনেই ছোট একটি চায়ের দোকান দিয়েছেন এলাকার দীর্ঘদিনের এক বাসিন্দা। সেই চা বিক্রেতা জানান, রীতা-মিতা আগে ১১ নম্বরে তার দোকানে গিয়ে জিনিসপত্র ক্রয় করতেন। বিশ্বস্ত হওয়ায় রীতা-মিতার বড়বোন হেনা বাড়ির সামনে চায়ের দোকান করার অনুমতি দিয়েছেন। বিনিময়ে চা দোকানি বাড়িটির দেখভাল করবেন। চা বিক্রেতা বলেন, হেনা আপা এখানে ডেভেলপার দিয়ে একটি নতুন বাড়ি তৈরি করতে চান। এ বিষয়ে রিতা-মিতার সম্মতি পাওয়া গেলেই বাড়ির কাজে হাত দেবেন। এর আগে ১৯৯৬ সালে রীতা-মিতার মা’র মৃত্যুর পর তার লাশ দাফনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই বোনের অস্বাভাবিক জীবনযাপনের বিষয়টি গণমাধ্যমে উঠে আসে।

১৯৯৬ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত এই দুই বোন নিজের বড়বোন ও অন্য লোকজনদের সম্পূর্ণ এড়িয়ে চলেছেন। ঘরের বাইরে বের হতেন না এবং বিল না দেওয়ায় তাদের ঘরের বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাসের লাইন কাটা হয়েছিল। অন্ধকারে মোম জ্বালিয়ে এবং বাইরে থেকে খাবার এনে তাদের দিন কাটত। ২০০৬ সালে মানবাধিকার কর্মীদের চেষ্টায় বাড়িটি থেকে উদ্ধারের পর চিকিৎসা শেষে রীতা-মিতা কিছুটা সুস্থ হলেও ২০০৮ সালের দিকে সিজোফ্রোনিয়ায় আক্রান্ত দুই বোন আবার রহস্যময় জীবনযাপন শুরু করেন।
 
প্রায় বছরখানেক আগে রিতা-মিতাকে বগুড়ার একটি আবাসিক হোটেল থেকে উদ্ধার করে তাদের বোন আবারও নিজের কাছে নিয়ে যান। বর্তমানে হেনার রায়েরবাজারের বাসায় রিতা-মিতা অবস্থান করছেন। মো. সাদেক জানান, তার কাছ থেকে দোকান ভাড়া বাবদ প্রায় দেড় লাখ টাকা নিয়ে দুই বোন বগুড়ায় চলে যান। তবে সে সময় দুই বোন সুস্থ ও স্বাভাবিক ছিলেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই দুই বোনের চিকিৎসক বলেন, রিতা-মিতার ঘটনায় আধ্যাত্মিকতার কিছু নেই। তাদের প্রয়োজন নিয়মিত চিকিৎসা। কারণ সিজোফ্রোনিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা ছেড়ে দেওয়ার পর পুনরায় তাদের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। রিতা-মিতার ক্ষেত্রেও তাই ঘটছে।
-বাংলাদেশ প্রতিদিনের সৌজন্যে

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন