আজ শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ইং

বাঘাইছড়িতে ৭ খুনের ঘটনা পরিকল্পিত: তদন্ত কমিটি

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৩-২১ ১৯:৫১:৩৬

রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ির ৭ খুনের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। বৃহস্পতিবার সকালে রাঙ্গামাটি জেলা সদর থেকে খাগড়াছড়ি সদর হয়ে ঘটনাস্থল গিয়ে পৌঁছান বেলা সাড়ে ১১টার দিকে।

পরিদর্শনকালে বিভিন্ন জনের সঙ্গে কথা বলেন। পরে তদন্ত কমিটির প্রধান দীপক চক্রবর্তী বলেছেন, ঘটনাটি একেবারে পরিকল্পিত। যতদূর ধারণা, আগে থেকেই ভারি অস্ত্র নিয়ে ওত পেতে প্রস্তুত ছিল হামলাকারীরা।

১৮ মার্চ দ্বিতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত বাঘাইছড়ি উপজেলা পরিষদের পঞ্চম নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষে সন্ধ্যার দিকে সদরে ফেরার পথে দীঘিনালা-মারিশ্যা সড়কের ৯ কিলোমিটার এলাকায় নির্বাচনী কর্মকর্তা ও নিরাপত্তাকর্মীদের গাড়িবহরে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করে অজ্ঞাত বন্দুকধারীরা।

এতে প্রাণ হারান ৭ জন। গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন ১৭ জন। তারা সবাই ওই উপজেলা পরিষদের নির্বাচনী দায়িত্বে ছিলেন। এ ঘটনার রাত পেরোতে না পেরোতেই পরদিন সকালে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন বিলাইছড়ি আওয়ামী লীগ সভাপতি সুরেশ কান্তি তঞ্চঙ্গ্যা। দুটি ঘটনাই নির্বাচনকেন্দ্রিক বলে ধারণা সূত্রগুলোর।

ঘটনার পরদিন ১৯ মার্চ চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের নির্দেশনায় সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। স্থানীয় সরকার বিভাগের চট্টগ্রামের পরিচালক দীপক চক্রবর্তীর নেতৃত্বে কমিটির সদস্য সচিব করা হয়েছে রাঙ্গামাটির অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. নজরুল ইসলামকে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- চট্টগ্রাম অঞ্চলের অতিরিক্ত ডিআইজি ফয়েজ আহমেদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সদস্য (যুগ্ম সচিব) আশীষ কুমার বড়ুয়া, চট্টগ্রাম ৩০ আনসার ব্যাটালিয়নের পরিচালক ও অধিনায়ক মো. নুরুল আমিন, বিজিবি রাঙ্গামাটি সেক্টরের বাঘাইহাট জোনের মেজর আশরাফ ও রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ছাদেক আহমদ। কমিটিকে গঠনের পরবর্তী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। কমিটির সদস্যসচিব অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. নজরুল ইসলাম জানান, প্রথম কার্যদিবসে বুধবার সন্ধ্যায় রাঙ্গামাটি সার্কিট হাউজে অনুষ্ঠিত কমিটির প্রথম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দ্বিতীয় কার্যদিবসে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন তারা। এ সময় ঘটনাস্থল ও তার আশপাশে এলাকা পরিদর্শন ছাড়াও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ, আলামত ও তথ্য-উপাত্ত খোঁজেন।

তিনি আরও জানান, স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শী ছাড়াও ঘটনার দিন নির্বাচনী দায়িত্বে থাকা প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসার, আনসার ভিডিপি সদস্য, নিহতদের পরিবারের সদস্যসহ আহতদের সঙ্গে কথা বলেন। এছাড়া বাঘাইছড়ি উপজেলা সদরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং গণ্যমান্য ব্যক্তির সঙ্গে মতবিনিময় করা হয়েছে।

মো. নজরুল ইসলাম জানান, তদন্তে পাওয়া তথ্য-উপাত্ত পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ঘটনাটি ছিল পূর্বপরিকল্পিত। যাতে কাজে লাগানো হয়েছে দিবাগত আঁধারকে। হামলাকারীরা ভারি ও অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেছিল। এদিকে ঘটনার প্রায় তিন দিনের মাথায় বুধবার রাতে ৪০-৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে পুলিশ বাদী হয়ে বাঘাইছড়ি থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার বাদী হলেন এসআই মো. আক্তার। এ পর্যন্ত কোনো আসামিকে গ্রেফতার করা যায়নি।

বাঘাইছড়ি থানার ওসি এমএ মঞ্জুর বলেন, মামলার তদন্ত শুরু হয়েছে। আসামি ধরতে অভিযান জোরদার করা হয়েছে। সন্দেহজনক বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। দ্রুত অগ্রগতি আসতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।

বাঘাইছড়ির ঘটনার ব্যাপারে পুলিশ সুপার মো. আলমগীর কবির বলেন, হামলা হয় অতর্কিত। যে কারণে কিছু বুঝে ওঠার আগেই গাড়িতে থাকা প্রায় সবাই গুলিবিদ্ধ হন। ফলে পুলিশসহ নিরাপত্তা বাহিনীর টহল থাকলেও সম্ভবত তাৎক্ষণিক মোকাবেলার পরিস্থিতি ছিল না। তবে ঘটনার পর এলাকাজুড়ে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পুলিশ বাদী হয়ে মামলাও হয়েছে। আসামিদের খুঁজতে এলাকায় এলাকায় তল্লাশি অভিযান চলছে। বর্তমানে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে ও স্বাভাবিক রয়েছে। উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই।

এদিকে জেলার আরেক উপজেলা বিলাইছড়ি আওয়ামী লীগ সভাপতি সুরেশ কান্তি তঞ্চঙ্গ্যা খুনের ঘটনায় সেখানেও জনমনে আতঙ্ক কাটেনি। দলীয় প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী কাজ শেষে পরদিন মঙ্গলবার সকালে উপজেলার ফারুয়া হতে ইঞ্জিনচালিত বোটযোগে স্ত্রী ও তার ছেলে নিরুপম তঞ্চঙ্গ্যাসহ উপজেলা সদরে ফিরছিলেন সুরেশ। পথে কাপ্তাই লেকে বোট থামিয়ে সুরেশকে অস্ত্রের মুখে নামায় ৪-৫ জনের একদল বন্দুকধারী।

এরপর স্ত্রী ও ছেলের সামনেই কপালে ও পেটে বন্দু ঠেকিয়ে নিষ্ঠুরভাবে গুলি করে সুরেশকে হত্যার পর পালিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। এখনও মামলা হয়নি বলে জানান, ওই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পারভেজ আলী।

তিনি বলেন, নিহতের পরিবার মামলা করতে আসার কথা। আমরা অপেক্ষায় রয়েছি। এলে মামলা নেয়া হবে। ঘটনার তদন্ত চলছে। তবে কাউকে আটক করা যায়নি। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।



সিলেটভিউ ২৪ডটকম/২১ মার্চ ২০১৯/গআচ

সৌজন্যে: যুগান্তর

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন