আজ বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ ইং

দুই কোটি জাল টাকার মিশন, গ্রেফতার ১০

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৭-১১ ১১:৫০:৪৩

সিলেটভিউ ডেস্ক :: ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে সারা দেশে দুই কোটি জাল টাকা ছড়িয়ে দিতে বিশেষ মিশন নিয়ে ঢাকায় অস্থায়ী কারখানা স্থাপন করে একটি চক্র। মাত্র সাত দিন আগে এ কারখানাটি সাভারের ধামরাই থেকে ঢাকার রামপুরার উলন রোডের একটি বাড়িতে স্থানান্তর করে তারা।

এ কারখানায় ১০০০ ও ৫০০ টাকার জাল নোট তৈরি শুরু করেছিল। প্রতিদিন এ কারখানায় ৩ থেকে ৪ লাখ জাল টাকা তৈরি হচ্ছিল। সেই টাকা বিপণনও শুরু করে চক্রের সদস্যরা।

চক্রের প্রধান নাজমুল হোসেন নিজাম ও তাজুল ইসলাম লিটন নামে দুই ব্যক্তি। লিটন নীলক্ষেতের একটি কম্পিউটার দোকানের কর্মচারী থেকে এখন জাল টাকা তৈরির বিশেষজ্ঞ ‘মাস্টার’। অপরদিকে নিজাম ড্রেজিং (মাটি খনন) ব্যবসায়ী থেকে দুই বছরের ব্যবধানে জাল টাকা তৈরির হোতায় পরিণত হয়েছে। মঙ্গলবার চক্রের দুই হোতাসহ ১০ জনকে গ্রেফতারের পর এসব তথ্য জেনেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উত্তর বিভাগের অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার টিমের সহকারী কমিশনার (এসি) সুমন কান্তি চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, চক্রের সদস্যরা ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে জাল টাকা ছড়িয়ে দিতে বিশেষ মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছিল। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে হাতিরঝিল থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৩৭ লাখ জাল টাকাসহ ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছ থেকে অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। এসব তথ্য খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

ডিবির ভাষ্য, এ চক্রের কারখানা ছিল সাভারের ধামরাই এলাকায়। দু’বছর ধরে তারা জাল টাকা তৈরি করে সারা দেশে বিপণন করছিল। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন এসে তাদের কাছ থেকে জাল টাকা সংগ্রহ করত। সারা দেশে তাদের নেটওয়ার্ক বাড়ার কারণে জাল টাকার চাহিদাও বাড়ছিল।

কোরবানির গরু কেনাবেচায় জাল টাকা ছড়িয়ে দিতে সারা দেশ থেকে তাদের কাছে ব্যাপক চাহিদা আসে। এ চক্রটি ঈদের আগে সারা দেশে দুই কোটি জাল টাকা ছড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করে। এ চক্র বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমেও জাল টাকা ছড়িয়ে দিচ্ছে বলে জানিয়েছে।

ডিবির দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, চক্রের সদস্যরা জিজ্ঞাসাবাদে বলেছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই খরিদদাররা ঢাকা থেকে জাল টাকা সংগ্রহ করতে চায়। এ কারণে তারা ঈদ উপলক্ষে ঢাকায় কারখানা স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়। সাত দিন আগে পশ্চিম রামপুরার উলন রোডে (বাসা-৩১৬) চক্রের অন্যতম সদস্য ফাতেমা বেগমের ভাড়া বাসাতেই অস্থায়ীভাবে কারখানাটি স্থাপন করে। ফাতেমা এ চক্রের কাছ থেকে জাল টাকা কিনে বাজারে ছড়িয়ে দেয়ার কাজ করছিল।

মঙ্গলবার রাতে উলন রোডের ওই কারখানায় অভিযান চালিয়ে চক্রের দুই প্রধান নিজাম-লিটন ও ফাতেমাসহ ছয়জনকে ২৫ লাখ জাল টাকা এবং জাল টাকা তৈরির সরঞ্জামসহ গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার অন্য তিনজন হল : জয়নাল আবেদীন, শরীফ এবং তার স্ত্রী শারমিন আক্তার। পরে নিজামের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে হাতিরঝিল এলাকা থেকে চক্রের আরও চার সদস্যকে ১২ লাখ জাল টাকাসহ গ্রেফতার করা হয়। তারা হল : জামির শিকদার, মেহেদী হাসান পলাশ, জাহাঙ্গীর আলম ও রমিছুর রহমান সজল।

ডিবির এক কর্মকর্তা জানান, চক্রের অন্যতম হোতা লিটন ৮-৯ বছর আগে রাজধানীর নীলক্ষেতে একটি কম্পিউটার দোকানের কর্মচারী ছিল। সেখানে সে গ্রাফিক্সের কাজ শেখে। গ্রাফিক্সের কাজ জানার কারণে ওই সময় লাবু নামে জাল টাকার এক কারিগর তাকে দলে নেয়। ৬-৭ বছর ধরে লাবুর সঙ্গে কাজ করে সে।

২০১৭ সালে লাবু মারা যাওয়ার পর জাল টাকা তৈরির সব সরঞ্জাম লিটনের হস্তগত হয়। এ সময় পূর্বপরিচিত নিজামের সঙ্গে যোগাযোগ করে জাল টাকা তৈরি করে বিপণন করার প্রস্তাব দেয়। নিজাম এ প্রস্তাব পেয়ে তার গ্রামের বাড়ি থেকে কাছাকাছি মানিকগঞ্জের নয়াডিঙ্গিতে বাসা বাড়া নিয়ে অস্থায়ীভাবে একটি জাল টাকার কারখানা স্থাপন করে।
পরে সেই কারখানা ধামরাইয়ের সুতিপাড়ায় স্থানান্তর করে। সেখানেই চলছিল তাদের জাল টাকা তৈরির কার্যক্রম। দীর্ঘদিন ধরে জাল টাকা তৈরি করলেও তারা ছিল ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। এ কারণে তারা খুবই আত্মবিশ্বাসী হয়ে ঢাকায় কারখানা স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।

সৌজন্যে: যুগান্তর

সিলেটভিউ ২৪ডটকম/১১ জুলাই ২০১৯/মিআচ

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন