Sylhet View 24 PRINT

চলে গেলেন অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৮-২৩ ২১:৩১:০৯

সিলেটভিউ ডেস্ক :: চলে গেলেন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) সভাপতি ও উপমহাদেশে বাম রাজনীতির অন্যতম পুরোধা অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। আজ শুক্রবার রাত ৭টা ৪৯ মিনিটে ঢাকার বসুন্ধরায় অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৮, তিনি স্ত্রী আমিনা আহমদ এবং একমাত্র মেয়ে আইভী আহমদসহ অসংখ্য ভক্ত, গুণগ্রাহী এবং শুভানুধ্যায়ী রেখে গেছেন।

অধ্যাপক ডা. বোরহান উদ্দীনের অধীনে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। গত ১৪ আগস্ট উক্ত হাসপাতালে আনা হয় তাকে। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় ১৯ আগস্ট আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। প্রায় ৩ বছর বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন তিনি। অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের ইন্তেকালের খবর শুনে নিজ দলের নেতাকর্মী, আত্মীয়-স্বজন ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক এবং সামাজিক সংগঠনের নেতাকর্মী হাসপাতালে ছুঁটে আসেন।

জানা গেছে, রাজধানীর বারিধারায় মেয়ে জামাইয়ের বাসায় স্ত্রীকে নিয়ে বাস করতেন তিনি। সেখানে একটি রুমে চিকিৎসার বিভিন্ন উপকরণের মাধ্যমে হাসপাতালের মতো করেই চিকিৎসা চলতো তার।  ২০১৫ সালে তাকে স্বাধীনতা পদক দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হলেও রাজনৈতিক আদর্শের কারণে তিনি সবিনয়ে তা গ্রহণে অপারগতা জানান। নির্লোভ ও নিষ্ঠার প্রতীক ছিলেন তিনি। শুক্রবার বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপচারিতায় অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের মেয়ে আইভী আহমদ এবং ন্যাপের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন জানান, নিজ দলের নেতারা ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও ঘনিষ্টজনেরা দেখতে আসেন তাকে।

 ন্যাপ প্রধান অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম কুশীলব ছিলেন। এ দেশের রাজনীতি অঙ্গনের উজ্জ্বল নক্ষত্রদের একজন। প্রায় আট দশকের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী ছিলেন তিনি। স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা ছেড়ে তিনি সার্বক্ষণিক রাজনৈতিক জীবন বেছে নিয়েছিলেন। দেশের রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে সবচেয়ে প্রবীণ। তিনি বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন। কিছু কথায় তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করতে গিয়ে লিখেছেন, স্বাধীন বাংলার স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমার বন্ধু ছিলেন। অন্যান্য গুণাবলী ছাড়াও তার ছিল দুটি বিশেষ গুণ মানুষের সঙ্গে মেশা, মানুষকে বুঝা এবং সংগঠন করা। এই দুই ব্যাপারে তার ক্ষমতা ছিল অসাধারণ। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছিল। তিনি কখনও শোষকের পক্ষে ছিলেন না। শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক সম্পর্কে লিখেছেন, তিনিই প্রথম জাতীয় নেতা যাকে বাংলার আমজনতা তাদের আপন লোক ভাবতে পেরেছিলেন। মওলানা ভাসানী সম্পর্কে লিখেছেন, এদেশের রাজনীতি বড় লোকের প্রাসাদ থেকে সাধারণ মানুষের মাঝে নিয়ে আসার ব্যাপারে শেরে বাংলা ফজলুল হকের চেয়ে মওলানা ভাসানীর অবদান কম নয়। শহীদ সোহরাওয়ার্দী সম্পর্কে মূল্যায়ন করেছেন সংসদীয় গণতন্ত্রের সাধক হিসেবে। আর এ যুগের রাজনীতিবিদ সম্পর্কে বলেছেন, আমাদের দেশে রাজনীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে পেটনীতি, ব্যবসা ও দুর্নীতির আড্ডাখানা। আমাদের দেশের রাজনীতিবিদরা প্রায় সবাই নিম্নবিত্ত বা মধ্যবিত্ত পরিবারের লোক। দেশ স্বাধীন হয়েছে ২০ বছর (১৯৯১ সালের লেখা)। এত অল্প সময়ে এত সম্পদ কিছু লোকের হাতে এসেছে তা ভাবতে অবাক লাগে।

অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ ১৯২২ সালের ১৪ এপ্রিল (পহেলা বৈশাখ) কুমিল্লা জেলার দেবীদ্বার থানার এলাহাবাদ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা আলহাজ কেয়াম উদ্দিন ভূঁইয়া স্কুল শিক্ষক ছিলেন। মায়ের নাম আফজারুন্নেছা। মোজাফফর আহমদ হোসেনতলা স্কুল, জাফরগঞ্জ রাজ ইনস্টিটিউশন, দেবীদ্বার রেয়াজউদ্দিন পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় ও ভিক্টোরিয়া কলেজে পর্যায়ক্রমে পড়ালেখা করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে সম্মানসহ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি এবং ইউনেসকোর ডিপ্লোমা লাভ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই কৃতী ছাত্র দীর্ঘদিন বিভিন্ন সরকারি কলেজে শিক্ষকতা শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে ১৯৫২ থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত অধ্যাপনা করেন। মোজাফফর আহমদের রাজনৈতিক জীবনের সূচনা ১৯৩৭ সালে। ১৯৫২ সালের মহান ভাষা আন্দোলনে তিনি ও তার স্ত্রী গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। ১৯৫৪ সালে চাকরি ছেড়ে পুরোপুরি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে দেবীদ্বার আসনে মুসলিম লীগের শিক্ষামন্ত্রীকে পরাজিত করেন। ১৯৫৭ সালের ৩ এপ্রিল আওয়ামী লীগের বিরোধিতা সত্ত্বেও পূর্ববঙ্গ প্রাদেশিক পরিষদে ন্যাপ নেতা অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের প্রস্তাব উত্থাপন করেন। ১৯৫৮ সালে সামরিক শাসক আইয়ুব সরকার তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা ও হুলিয়া জারি করে। তাকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়। তিনি আত্মগোপনে থেকে আইয়ুব শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগঠিত করেন। আট বছর আত্মগোপনে থাকার পর ১৯৬৬ সালে প্রকাশ্য রাজনীতিতে ফিরে আসেন। ১৯৬৭ সালে পূর্ব পাকিস্তান ন্যাপের সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি অবিভক্ত পাকিস্তান ন্যাপের যুগ্ম সম্পাদকও ছিলেন। ১৯৬৯ সালে আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন এবং কারাবরণ করেন। তিনি আইয়ুব খান আহৃত রাওয়ালপিন্ডির গোলটেবিল বৈঠকে পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্ব করেন। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রামে মূল নেতৃত্বের একজন ছিলেন তিনি। প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যও ছিলেন তিনি। তিনি স্বাধীনতার পক্ষে আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সফর করেন। ওই সময় তিনি জাতিসংঘে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় ন্যাপ, সিপিবি ও ছাত্র ইউনিয়নের নিজস্ব ১৯ হাজার মুক্তিযোদ্ধা গঠনের ক্ষেত্রে তার ভূমিকা অবিস্মরণীয়। ১৯৭৯ সালে এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৮১ সালে ন্যাপ, সিপিবি ও প্রগতিশীল শক্তির প্রার্থী হিসেবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের শুরুতে কারারুদ্ধ হন।


সৌজন্যে : বিডি প্রতিদিন

সিলেটভিউ২৪ডটকম/২৩ আগস্ট ২০১৯/জিএসি

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.