আজ শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ইং

বিচারের আশায় আদালতের বারান্দায় শিশু সায়মার বাবা

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৮-২৫ ২০:০৮:৩১

সিলেটভিউ ডেস্ক :: আমার মেয়ে সামিয়া আফরিন সায়মাকে (৭) ধর্ষণের পর হত্যা করে হারুন আর রশিদ। হত্যার কথা স্বীকার করে সে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন। কিন্তু হত্যার ৫১ দিন পরেও আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট দিচ্ছে না মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। মেয়ে হত্যার বিচারের আশায় আমি প্রতি ধার্য তারিখে আদালতে উপস্থিত হচ্ছি। জানি না কবে এ হত্যাকাণ্ডের বিচার পাবো।

রোববার(২৫ আগস্ট)ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতের বারান্দায় কথা হয় রাজধানীর ওয়ারীতে সিলভারডেল স্কুলের নার্সারির ছাত্রী সামিয়া আফরিন সায়মার বাবা আব্দুস সালামের সঙ্গে। আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।

আব্দুস সালাম বলেন, আজ থেকে ৫১ দিন আগে আমার মেয়েকে ধর্ষণ করে হত্যা করে হারুন আর রশীদ। সে হত্যার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। কিন্তু আজ দুইটা ধার্য তারিখ পার হয়ে গেছে। তদন্ত কর্মকর্তা মামলার চার্জশিট দিচ্ছেন না। আসামি গ্রেফতারের পরও চার্জশিট না দেয়ায় আমি হতাশ। আদালত আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর চার্জশিট দাখিলের জন্য নতুন দিন ধার্য করেছেন। আমি সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি ওই তারিখের আগে যেন মামলার চার্জশিট দাখিল করা হয়।

এ মামলা তদন্ত করছেন গোয়েন্দা সংস্থা (ডিবি) ওয়ারি জোনাল টিমের পরিদর্শক আরজুন। তদন্তের অগ্রগতি জানতে চাইলে গোয়েন্দা সংস্থার (ডিবি) ওয়ারি জোনাল টিমের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার(এডিসি) বছির আহম্মেদ জাগো নিউজকে বলেন, মামলাটির তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে। আসামির ডিএনএ পরীক্ষার জন্য দেয়া হয়েছে। ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদন হাতে পেলেই আদালতে চার্জশিট দাখিল করবো।

তিনি আরও বলেন, এ মামলায় হারুন আর রশিদের নামে চার্জশিট দেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে আদালতে ধর্ষণের পর হত্যার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন হারুন।

এদিন মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য ছিল। কিন্তু মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক আরজুন প্রতিবেদন দাখিল করেনি। এ জন্য ঢাকা মহানগর হাকিম মাইনুল ইসলাম প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নতুন করে ১৬ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেছেন।

মামলার একমাত্র আসামি হারুন আর রশিদকে গত ৭ জুলাই তার বাড়ি কুমিল্লার তিতাস থানার ডাবরডাঙ্গা এলাকা থেকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। পরের দিন হাকিম সরাফুজ্জামান আনসারীর আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন হারুন। জবানবন্দি রেকর্ড শেষে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন।

জবানবন্দিতে যা বললেন ধর্ষক হারুন

জবানবন্দিতে হারুন বলেন, ‘আমার আপন খালাতো ভাই পারভেজের বনগ্রামের বাসায় দুই মাস ধরে থাকি। আমি খালাতো ভাইয়ের রঙের দোকানের স্টাফ। গত ৫ জুলাই সন্ধ্যা আনুমানিক সাড়ে ৬টায় খালাতো ভাইয়ের ছেলে আরাফের (১) জ্বরের ওষুধ নিয়ে আট তলায় তার বাসায় যাই। ওষুধ দিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে ফ্ল্যাটের দরজার সামনে গিয়ে দেখি ৬ষ্ঠ তলার ৬/বি ফ্ল্যাটের আব্দুস সালামের মেয়ে সায়মা এসেছে। সে মাঝে মধ্যে তার মাসহ খালাতো ভাইয়ের বাসায় আসতো এবং আরাফের সঙ্গে খেলাধুলা করতো। আরাফ অসুস্থ থাকায় সায়মা আমাকে বলে, ‘চাচু চাচু আমাকে ছাদটা দেখিয়ে নিয়ে আসেন।’ তখন আমি ও সায়মা একসঙ্গে সিঁড়ি দিয়ে ছাদে উঠি এবং তাকে ৯ তলায় একটি খালি রুমে নিয়ে যাই। রুমটি আগে থেকে খোলা ছিল। রুমে গিয়ে আমি তাকে জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করি। কিন্তু সে চিৎকার দিয়ে ওঠে। এরপর তার নাক ও মুখ চেপে জড়িয়ে ধরি। সে আবার চিৎকার দেয়। তখন আমি তাকে বুকে নিয়ে গলা টিপে ধরি। তখন সায়মা প্রায় আধামরা। এই অবস্থায় তাকে ফ্লোরে শোয়াই এবং ধর্ষণ করি। ধর্ষণ করার পর গলাটিপে মেরে ফেলি। এরপর রুমে থাকা রশি দিয়ে তার গলা পেঁচিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করি। কারণ সে আমাকে চেনে। সে বেঁচে থাকলে আমার কথা বলে দেবে। তার মৃত্যুর পর কিচেন রুমের সিংকের নিচে রেখে দেই। এ সময় মাগরিবের নামাজের আজান দেয়। খালাতো ভাই পারভেজের বাসায় গিয়ে গোসল করে জামা-কাপড় চেঞ্জ করে বাসার নিচে চলে যাই এবং মহল্লায় হাঁটাহাঁটি করি। এরপর রাত ১১টার দিকে আমার নিজের বাড়ি কুমিল্লায় চলে যাই। যাওয়ার পথে রাস্তায় মোবাইলের সিম ফেলে দেই। বাড়িতে যাওয়ার পর ঘটনাটি মা-বাবাকে বলি। ঘটনা শুনে তারা আমাকে বকাবকি করে। আমি আমার ফুফুর বাড়িতে আশ্রয় নেই।’

উল্লেখ্য, গত ৫ জুলাই সন্ধ্যার পর থেকে শিশু সায়মার খোঁজ পাচ্ছিল না তার পরিবার। আনুমানিক সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে নবনির্মিত ভবনটির নবম তলার খালি ফ্ল্যাটের ভেতরে সায়মাকে মৃত অবস্থায় দেখতে পান পরিবারের সদস্যরা। খবর পেয়ে রাত ৮টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে। ঘটনার পরের দিন সায়মার বাবা আব্দুস সালাম বাদী হয়ে ওয়ারী থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেন।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ওই ভবনের ছয় তলায় পরিবারের সঙ্গে থাকতো সায়মা। বাবা আব্দুস সালাম নবাবপুরের একজন ব্যবসায়ী। দুই ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে সবার ছোট সায়মা।

আব্দুস সালাম বলেন, ঘটনার দিন সন্ধ্যার পর ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সায়মা তার মাকে বলে, ‘আমি উপরে পাশের ফ্ল্যাটে যাচ্ছি, একটু খেলাধুলা করতে। এরপর থেকে নিখোঁজ হয় সায়মা। অনেক খোঁজাখুঁজির পর নবম তলায় খালি ফ্ল্যাটের ভেতরে গলায় রশি দিয়ে বাঁধা ও মুখে রক্তাক্ত অবস্থায় মেয়েকে দেখতে পাই।’

এরপর পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠায়। ময়নাতদন্ত শেষে ঢামেক হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সোহেল মাহমুদ বলেন, প্রাথমিকভাবে সায়মার শরীরে ধর্ষণের আলামত মিলেছে। ধর্ষণের পর তাকে গলায় রশি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। ময়নাতদন্তে তার যৌনাঙ্গে ক্ষতচিহ্ন, মুখে রক্ত ও আঘাতের চিহ্ন, ঠোঁটে কামড়ের দাগ দেখা গেছে।

সৌজন্যে : জাগোনিউজ২৪
সিলেটভিউ২৪ডটকম/২৫ আগস্ট ২০১৯/জিএসি

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন