Sylhet View 24 PRINT

জাবি ভিসি ফারজানাও বিতর্কের কাঠগড়ায়, অডিও ফাঁস

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৯-১৬ ১৭:১৪:২১

সিলেটভিউ ডেস্ক :: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প থেকে শাখা ছাত্রলীগকে টাকা দেওয়ার অভিযোগ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছিল অনেক আগেই। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর ক্যাম্পাসে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে আন্দোলন শুরু করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। প্রকল্পে দুর্নীতির বিচারবিভাগীয় তদন্ত দাবি করে আসলেও। অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযোগকারীদেরকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম। তবে এবার টাকা ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর সঙ্গে জাবি ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের ফোনালাপ ফাঁস হওয়ায় ফেঁসে যাচ্ছেন জাবি উপাচার্য। এতে স্পষ্টতই টাকা দেওয়ার বিষয়টি উঠে এসেছে।

সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর সঙ্গে কথা বলা জাবি ছাত্রলীগ নেতার পরিচয় এবং ফোনালাপ হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে। এ সংক্রান্ত একটি অডিও প্রতিনিধির হাতে এসেছে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে পাঁচটি নতুন আবাসিক হলের নির্মাণ কাজ যাতে নির্বিঘ্নে হয় সে জন্য প্রকল্পের সেই টাকা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগকে এক কোটি এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে এক কোটিসহ মোট দুই কোটি টাকা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত খবর প্রকাশিত হয় ‘৯ আগস্ট উপাচার্যের বাসভবনে এ টাকা ছাত্রলীগকে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ সময় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. জুয়েল রানা, সাধারণ সম্পাদক এস এম আবু সুফিয়ান চঞ্চলসহ পাঁচজন নেতা ও উপাচার্যের পরিবারের একাধিক সদস্য সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত এই সংবাদে উপাচার্যের সঙ্গে টাকা ভাগের বৈঠকে যে চার ছাত্রলীগ নেতা উপস্থিত ছিলেন বলে প্রকাশ হয়েছিল ফোনালাপকারী এই ছাত্রলীগ নেতা তাদের মধ্যে একজন।

ফোনালাপের শুরুতে রাব্বানী জিজ্ঞেস করেন, ‘টাকা নেওয়ার সময় কে কে ছিল, টাকাটা দিছে কোন জায়গায় বইসা।’

জবাবে জাবি ছাত্রলীগ নেতা বলেন, ‘ভাই আমি আপনারে বলছিলাম না যে, আমি (সাদ্দাম হোসেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক) তাজ (নিয়ামুল হক তাজ- সহসভাপতি), জুয়েল (সভাপতি), চঞ্চল (সাধারণ সম্পাদক) ছিলাম ওই মিটিংয়ের সময়।’

নিচে তাদের কথোপকথন তুলে ধরা হলো:

রাব্বানী: ম্যাম তো বলছে এ আন্দোলনও নাকি আমরা করাইছি! আন্দোলন কারা করছে সেটাও তো আমরা জানিনা।

সাদ্দাম হোসেন: বিষয়টা হচ্ছে উনি ছাত্রলীগের ওপর সব কিছু দিয়া নিজের ফ্যামিলিরে সেভ করতে চাচ্ছে।

রাব্বানী: আচ্ছা যখন টাকাটা দিছে তখন তুই ছিলি না?

সাদ্দাম হোসেন: হ্যাঁ ভাই আমি ছিলাম।

রাব্বানী: টাকাটা দিছে কীভাবে, ম্যাম নিজেই দিছে, অন্য কেউ ছিল না?

সাদ্দাম হোসেন: ওখানে হচ্ছে ভাই আর কেউই ছিল না। ম্যাম এবং তার পরিবার হচ্ছে আমাদের সঙ্গে ডিলিংসটা করছে। করে সে হচ্ছে টাকাটা আমাদের হলে পৌঁছে দিছে।

রাব্বানী: হলে পৌঁছে দিছে টাকা?

সাদ্দাম হোসেন: হ্যাঁ হ্যাঁ, একটা গাড়িতে করে এক লোক এসে দিয়ে গেছে।

রাব্বানী: কয় টাকা দিছে?

সাদ্দাম হোসেন: আমাদের বলছে এক কোটি। আমরা বাকিটা জানি না, জুয়েল আর চঞ্চলের সঙ্গে আলাদা সিটিং হইতে পারে।

রাব্বানী: আমি শুনলাম এক কোটি ষাট।

সাদ্দাম হোসেন: ওইটা ভাই ষাইটেরটা আমরা জানি না। উনি এক কোটি ভাগ করে দিছে। যে পঞ্চাশ হচ্ছে জুয়েলের, পঁচিশ আমাদের আর পঁচিশ চঞ্চলের।

রাব্বানী: ও ম্যাডাম এভাবে ভাগ করে দিছে? জুয়েল ভালো ছেলে এজন্য পঞ্চাশ আর চঞ্চল ক্যাম্পাসের বাইরে থাকে এজন্য পঁচিশ?

সাদ্দাম হোসেন: হ্যাঁ। চঞ্চল আমাদের তো বাদ দিতে পারে নাই। ঝামেলা এড়ানোর জন্য বা..

রাব্বানী: ও চঞ্চলের ভাগেরটাই তোরা পাইছস?

সাদ্দাম হোসেন: হ্যাঁ, চঞ্চলের ওখান থেকেই, আমরা বলছি যে ২৫% আমাদের দেওয়া লাগবে। তারা হচ্ছে ভাই তাহলে আমাদের না জানায়া তাদের আলাদা ষাট লাখ টাকা দিছে, এটা হইতে পারে।

রাব্বানী: ও তাহলে তোদেরকে না জানায়া দিছে?

সাদ্দাম হোসেন: হ্যাঁ হ্যাঁ, আমরা এটা জানি না আমরা এক কোটির হিসাব জানি।

রাব্বানী: তোমার ম্যাডাম যে আমাদের নাম জড়াইলো এখানে, টাকার ব্যাপারে আমার বা শোভনের কোনো আইডিয়াই তো নাই।

সাদ্দাম হোসেন: ভাই উনি খুব নোংরামি করতেছে। আপনারা ভাই সিদ্ধান্ত নেন আমাদের কি করা লাগবে আমরা সেটা করতেছি।

রাব্বানী: আমিও বুঝতেছি নিজে সেভ হওয়ার জন্য ফ্যামিলি সেভ করার জন্য। এ ছয়টা কাজ বেসিক্যালি ঠিকাদারদের সঙ্গে ডিল করছে কে?

সাদ্দাম হোসেন: ভাই মূলত ডিলটিল করছে তার ছেলে, তার পিএস সানোয়ার ভাই, আর পিডি (নাসির উদ্দিন) আর তার স্বামী- এ চারজন।

রাব্বানী: হাজবেন্ড-ছেলে পিডি নাসির আর পিএস সানোয়ার? ও তারাই আগে থেকে ছয়টা কোম্পানি ঠিক করে রেখেছে?

সাদ্দাম হোসেন: হ্যাঁ, শুরু থেকেই তারা সব কিছু করছে।

রাব্বানী: টেকনিক্যাল কমিটিতেও ভিসি ছিল? ভিসি তো থাকতে পারে না।

সাদ্দাম হোসেন: হ্যাঁ সে ছিল। প্রথমত সে তো সবাইরে ফেরত-টেরত পাঠায়া দিলো না! শিডিউল ছিনায়া-টিনায়া নিচ্ছিল। পরে হচ্ছে আমরা বলছি সবাইরে কিনতে দিতে হবে সবাইরেই ড্রপ করতে দিতে হবে। তখন হচ্ছে ড্রপ সবাইরেই করাইছে। কিন্তু কাজ হচ্ছে নিজ হাতে সব বিষয়গুলা করছে। উপাচার্যের হাসপাতালে ভর্তি নাটক ছিলো যাতে তাকে কেউ প্রশ্নবিদ্ধ করতে না পারে।
পরে আবার কথা বলবেন বলে রাব্বানী ফোনালাপ শেষ করেন।

ফোনালাপে প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জাবি ছাত্রলীগ নেতা সাদ্দাম হোসেন (যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক) বলেন, ‘গোলাম রাব্বানী ভাই সাধারণ সম্পাদক ছিলো কেন্দ্রের, আমি তার রাজনীতি করতাম, এখন ভাইয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী সে যা বলছে তাই বলছি, সে যা করতে বলছে তাই করছি। সে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কথা বলছে আমিও ওইভাবে কথা বলছি।”

তিনি টাকার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, “টাকার যে বিষয়টা হচ্ছে আমিও নিজেও গণমাধ্যমের মাধ্যমে জানছি।”

প্রসঙ্গত, ৮ আগস্ট রাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের সঙ্গে তার বাসভবনে দেখা করে ৮৬ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করেন ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। উন্নয়ন প্রকল্পের টেন্ডার পেয়েছে—এমন কোম্পানির কাছ থেকে ভিসিকে টাকার ব্যবস্থা করে দিতে বলেন তারা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য ১ হাজার ৪৪৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। নির্বিঘ্নে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ঈদুল আজহার আগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ টেন্ডার কমিটির কাছ থেকে দুই কোটি টাকা নেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সেখান থেকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে এক কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে বলেও জানা গেছে। তবে পুরো প্রকল্প থেকে ছয় ভাগ চাঁদা দাবি করেন শোভন-রাব্বানী।

সৌজন্যে : পূর্বপশ্চিম
সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯/জিএসি

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.