আজ শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ইং

বুয়েটে কক্ষে ডেকে নিয়ে শিক্ষার্থী নির্যাতন অহরহ

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-১০-০৯ ১৭:২৪:৫২

সিলেটভিউ ডেস্ক :: বুয়েটের শের-ই বাংলা হলের রুম ২০১১-তে আগেও ডেকে নিয়ে মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছিল তড়িৎ প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে। গত রোববার রাতে একনাগাড়ে পাঁচ ঘণ্টা নির্যাতনের করে তাকে হত্যা করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

৩ অক্টোবর বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদি হাসান রাসেলের নেতৃত্বে সেই একই গ্রুপ আবরারসহ আরও ছয় থেকে সাত শিক্ষার্থীকে ডেকে নিয়েছিল। ফেসবুকে পোস্ট দেয়ার অভিযোগে তাদের ওপর মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছিল তখন।

সেই রাতে ঘটনাস্থলে থাকা দুই শিক্ষার্থী এমন তথ্যই দিয়েছেন। তাদের একজন বলেন, তারা আমাদের কক্ষে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর ফেসবুকে পোস্ট করা কয়েকটি স্ট্যাটাস নিয়ে জেরা করেন। তখন অবশ্য মারধর করেননি। তবে সামাজিকমাধ্যমে এমন কিছু না লিখতে হুশিয়ারি করে দিয়েছিলেন।

ওই শিক্ষার্থীর অভিযোগ, ভবিষ্যতে ফেসবুকে কিছু লিখলে হল থেকে বের করে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়েছিল।

তবে রাসেলের নাম বললেও ছাত্রলীগের অন্য নেতাদের নাম বলতে অস্বীকার জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে শিক্ষার্থীরা বলেন, তুচ্ছ কারণে তাদের হল থেকে বের করে দেয়া ও র‌্যাগিং করা হয়। এছাড়া নতুনদের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিতে বাধ্য করার ঘটনা নতুন কোনো খবর না।

তারা বলেন, হলে শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনা অহরহ। গত বছরের ৭ আগস্ট রাসেলের নেতৃত্বাধীন কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতাকর্মী মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৫তম ব্যাচের দাইয়ান নাফিসকে ব্যাপক মারধর করেন।

নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনে অংশ নেয়ায় এই মারধর করা হয়েছে বলে নির্যাতিত ওই শিক্ষার্থীর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সহপাঠী বলেন।

পরবর্তী সময়ে দাইয়ানকে চকবাজার থানায় হস্তান্তর করেন ছাত্রলীগের বরখাস্ত হওয়া সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানি।

এক ফেসবুক ভিডিওতে দাইয়ানের মেকানিক্যাল সার্কিট বক্সকে ‘সিম বক্স’ উল্লেখ করে রাব্বানি অভিযোগ করেন, তিনি ছাত্র শিবিরের সঙ্গে যুক্ত এবং যোগাযোগের জন্য বিভিন্ন ফোন নম্বর ব্যবহার করছেন।

দাইয়ানকে পুলিশের কাছে হস্তান্তরের প্রতিবাদ জানালে সেই একই রাতে ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৫তম ব্যাচের ইহতেশামুল আজিমকেও নির্যাতন করে ছাত্রলীগ।

২ অক্টোবর হলের ২০২ নম্বর কক্ষে ডেকে ইহতেশামকে চড়-থাপ্পর ও লাথি-ঘুষি মারেন রাসেল। এরপর তাকে হল থেকে বেরিয়ে যেতে বাধ্য করেন তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দাইয়ান ও ইহতেশাম মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছেন।

মতিউর রহমান নামের আরেক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, সালাম না দেয়ায় সোহরাওর্দী হলের ৫১১ থেকে ১০১০ রুমে ডেকে নিয়ে যান দুই ছাত্রলীগ কর্মী মুবাশ্বির শান্ত ও মাহাদি হাসান।

‘কেন তাদের সালাম দিইনি, তারা আমাদের সেই প্রশ্ন করেন। জবাব দেয়ার সময় যখন ফিসফিস করছিলাম, তখন আরও দুই পাঠী ও আমাকে চরথাপ্পর মরেন ওই দুই ছাত্রলীগকর্মী।’

মতিউর বলেন, আমি চিকিৎসকের কাছে গেলাম। ডাক্টার বললেন, আমার কানের ভেতরে রক্ত ঝরেছে।

পরের দিন সোহরাওয়ার্দী হলের চত্বরে ১৮ ব্যাচের ২০ শিক্ষার্থীকে ডেকে পাঠায় শান্ত ও মাহাদি। ওই ২০ শিক্ষার্থীর মধ্যে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, সেখানে সিনিয়রদের শনাক্ত করতে নির্দেশ দেন মাহাদি। একজন বাদে সবাইকেই আমি শনাক্ত করি। এরপর যাকে শনাক্ত করতে পারিনি, তাকে থাপ্পর দিতে বলে আমাকে। কিন্তু আমি তার কথা মতো কাজ না করায়, মাহাদি আমাকে থাপ্পর দেন।

এ বিষয়ে কথা বলতে অস্বীকার করেছেন শান্ত ও মাহাদি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে র্যাগিংয়ের নামে নির্যাতন কিংবা মারধরের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিতে ভয় পান শিক্ষার্থীরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, অতিরিক্ত আরও হয়রানির ভয়ে রাজনৈতিক নেতাদের নিপীড়নের শিকার শিক্ষার্থীরা অভিযোগ দাখিল করতে সাহস পান না। হামলাকারীদের শাস্তি কিংবা র্যাগিং সংস্কৃতি বন্ধে কর্তৃপক্ষের অনাগ্রহও এখানে ভয়কে আরও বাড়িয়ে দেয়।

বিচার না পাওয়ার আতঙ্ক থেকে নির্যাতন সত্ত্বেও সবাই নীরব হয়ে যান বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।

১৭ ব্যাচের এক শিক্ষার্থী বলেন, অনেকেই বাইরে বাসা ভাড়া করে থাকার সামর্থ রাখেন না। কাজেই তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে থাকতে বাধ্য। রাজনৈতিক নেতা কিংবা সিনিয়ররা হল থেকে বের করে দেবেন, এই ভয়ে নিপীড়ন কিংবা র্যাগিং সংস্কৃতি নিয়ে কথা বলতে সাহস করেন না তারা।

ওই শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, কর্তৃপক্ষ কেবল শিক্ষার্থীদের হল বরাদ্দ দিয়ে থেমে যান। কিন্তু এরপর শিক্ষার্থীদের প্রতি খুবই কম খেয়াল রাখেন তারা।

‘র‌্যাগিংয়ের নামে নির্যাতনে মাত্রারিক্ত বেড়ে গেলেও বছরের পর বছর ধরে কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি,’ বললেন ওই শিক্ষার্থী।

এক নবাগত শিক্ষার্থীকে থাপ্পর দেয়ায় কর্তৃপক্ষ কেবল আহসান উল্লাহ হল থেকে এক শিক্ষার্থীকে বরখাস্ত করেন। কিন্তু তিনি এখনো হলে অবস্থান করছেন। প্রাণের ভয়ে শিক্ষার্থীরা তাকে কিছু বলতে সাহস করছেন না।

ওই শিক্ষার্থীর প্রশ্ন, এমন লোক দেখানো শাস্তির পর পরবর্তীতে কোনো অভিযোগ দেয়ার সাহস কি কোনো শিক্ষার্থীর থাকার কথা?


সৌজন্যে : যুগান্তর
সিলেটভিউ২৪ডটকম/০৯ অক্টোবর ২০১৯/জিএসি

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন