আজ মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪ ইং

রিমান্ড শুনানিতে প্রশ্ন ‘সম্রাটের ফ্রিজে মদ নয়, মাছ-মাংস থাকার কথা’

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-১০-১৫ ২২:০৪:৪৫

সিলেটভিউ ডেস্ক :: ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের অফিস থেকে মদ উদ্ধারের সত্যতা নিয়ে রিমান্ড শুনানিতে প্রশ্ন তুলেছেন তার আইনজীবীরা।

শুনানি সম্রাটের এক আইনজীবী বলেন, কাকরাইলের ভূঁইয়া ট্রেড সেন্টারে এই যুবলীগ নেতার অফিসের ফ্রিজে মদ থাকার কথা নয়, মাছ-মাংস থাকার কথা।

মঙ্গলবার অস্ত্র ও মাদক আইনের দুই মামলায় ক্যাসিনো গডফাদার যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন সম্রাটকে ১০ দিনের রিমান্ড দিয়েছেন ঢাকা মহানগর হাকিম মো. তোফাজ্জল হোসেন।

এ ছাড়া তার সহযোগী এনামুল হক আরমানকে মাদক মামলায় পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। সম্রাটের রিমান্ড শুনানি উপলক্ষে এদিন আদালতে চত্বরে দলের নেতাকর্মীরা শোডাউন করেন। সকাল থেকেই তাদের ভিড় বাড়তে থাকে। গেটের বাইরে ও জনসন রোডে জটলা করে তারা স্লোগান দেন। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশি নিরাপত্তা ব্যবস্থাও জোরদার করা হয়।

শুনানি শেষে দুপুর পর সম্রাটকে রিমান্ডের জন্য আদালতের হাজতখানা থেকে রমনা থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।

প্রথমে অস্ত্র আইনের মামলায় রিমান্ড শুনানি হয়। আদালতের সংশ্লিষ্ট থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন আসামি সম্রাটের রিমান্ড আবেদনের শুনানি করেন। তিনি বলেন, আসামির কাছে আরও অবৈধ অস্ত্র আছে। অবৈধ অস্ত্রগুলো উদ্ধার লক্ষে আসামিকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ জরুরি।

ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলী আবদুল্লাহ আবু আসামির রিমান্ড শুনানি করেন। তিনি বলেন, ৬ অক্টোবর ভোরে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে তাকে (সম্রাট) গ্রেফতার করা হয়েছে। ক্যাসিনো অভিযান পরিচালনাকালে তিনি ঢাকা থেকে পালিয়ে যান। গ্রেফতারের পর তার দেখানো স্থান থেকে অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। উদ্ধারকৃত অস্ত্রের কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। আসামির কাছে থাকা আরও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে রিমান্ডের একান্ত প্রয়োজন। রাষ্ট্রপক্ষে আরও উপস্থিত ছিলেন- আইনজীবী তাপস কুমার পাল, শিহাব উদ্দিন, আজাদ রহমান প্রমুখ।

অপরদিকে আসামিপক্ষে বেলায়েত হোসেন, আক্তার হোসেন ভূইয়া, আফরোজা শাহনাজ পারভীন (হীরা) রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন শুনানি করেন।

শুনানিতে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বলেন, সম্রাট যুবলীগের আহ্বায়ক ছিলেন। এরপর সাংগঠনিক সম্পাদক ও পরে সভাপতি হন। তিনি সব সময়ই নেতাকর্মীদের আপদে-বিপদে পাশে থাকতেন। একটি কুচক্রীমহল তার বিরুদ্ধে এ মামলা করেছে। গ্রেফতারের পর দুপুরের দিকে তাকে মাল্টিস্টোর বিল্ডিংয়ে আনা হয়। সেটা তার বাসস্থান না, অফিস। অনেক লোক সেখানে যাওয়া-আসা করে। এমনকি তাকে ফাঁসানোরও সুযোগ আছে। প্রতিটি অভিযানে মিডিয়া ঢুকতে দেয়া হলেও তার বেলায় ঢুকতে দেয়া হয়নি। আসামি (সম্রাট) ওপেন হার্ট সার্জারির রোগী, ভাল্বে সমস্যাসহ নানা রোগে আক্রান্ত। প্রতি মাসে তাকে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাতপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়। এমতাবস্থায় রিমান্ডে নিলে তার জীবন হুমকিতে পড়বে। আগে তাকে বাঁচতে দিতে হবে। মামলায় অস্ত্র উদ্ধার হয়ে গেছে, এখন আর রিমান্ডের যৌক্তিকতা নেই। প্রয়োজনে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করা যেতে পারে।

আসামিপক্ষে আফরোজা শাহনাজ পারভীন (হীরা) নিজেকে সম্রাটের কমিটির আইন সম্পাদক পরিচয় দিয়ে শুনানিতে বলেন, ‘সম্রাট ভাই’ গ্রেফতার হওয়ার আগে, আমি ও আমার স্বামী তার কার্যালয়ে গিয়েছিলাম। অনেক নেতাকর্মী তাকে খাবার দিত। সেগুলো ফ্রিজে রখা হতো। আমরা যাওয়ার পর ওই ফ্রিজ থেকে আমাদের খাবার বের করে দিয়েছেন। আর সেই ফ্রিজেই নাকি বিদেশি মদ পাওয়া গেছে। সম্রাট পালাতে চাইলে যে কোনো সময়, যে কোনো স্থানে পালাতে পারতেন। তিনি রাজনীতি ভালোবাসেন। তাই তিনি পালাননি। কথা বলতে বলতে একপর্যায়ে এ আইনজীবী এজলাসেই কেঁদে ফেলেন।

এরপর মাদক মামলায় দুই আসামির রিমান্ড শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা বলেন, সম্রাটকে নিয়ে কাকরাইল অফিসে অভিযানে তার দেখানো স্থান থেকে ১৯ বোতল বিদেশি মদ (১৯ লিটার, আনুমানিক মূল্য ৯৫ হাজার টাকা), ৪ প্যাকেট তাস ও ১ হাজার ১৬০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়। আসামির হেফাজতে থাকা আরও মাদক উদ্ধারের লক্ষে আসামির রিমান্ড প্রয়োজন।

অপরদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বলেন, মাদকগুলো ব্রিফকেসে পেয়েছে। ওই ব্রিফকেস রুমের কোথায় ছিল? খাটের নিচে নাকি উপরে? উত্তর দিকে নাকি দক্ষিণ দিকে? রিমান্ড আবেদনে সে সব বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। আর সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া রিমান্ডের কোনো যৌক্তিকতা নেই। সুতরাং রিমান্ড হতে পারে না। আসামি অসুস্থ। তার জামিন প্রার্থনা করছি।

প্রসঙ্গত, গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মতিঝিলের ক্লাবপাড়ায় র‌্যাবের অভিযানে অবৈধ ক্যাসিনো চলার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর গাঢাকা দেন সম্রাট। পরে অনেক জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ৬ অক্টোবর কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে সম্রাট ও তার সহযোগী এনামুল হক আরমানকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।

ওই দিন বিকালে সম্রাটকে সঙ্গে নিয়ে কাকরাইলের ভূঁইয়া ট্রেড সেন্টারে তার কার্যালয়ে অভিযানে যায় র‌্যাব। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা অভিযান শেষে গুলিসহ একটি বিদেশি পিস্তল, ১ হাজার ১৬০ পিস ইয়াবা, ১৯ বোতল বিদেশি মদ, দুটি ক্যাঙ্গারুর চামড়া এবং বৈদ্যুতিক শক দেয়ার সরঞ্জাম পায় বলে জানায় র‌্যাব।

পরে ওই সময়ই ক্যাঙ্গারুর চামড়া পাওয়ায় বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে সম্রাটকে এবং গ্রেফতারের সময় মাতাল অবস্থায় পাওয়ায় তাদের দুজনকেই ৬ মাসের কারাদণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। পরে তাদের কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়।


সৌজন্যে : যুগান্তর
সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৫ অক্টোবর ২০১৯/জিএসি

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন