আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ইং

‘জুয়া খেলা সম্রাটের একমাত্র নেশা’ স্ত্রীর বক্তব্যই সত্যি

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-১০-২১ ১৭:২৬:০১

সিলেটভিউ ডেস্ক :: অবৈধ ক্যাসিনোকাণ্ডে গত ৬ অক্টোবর গ্রেফতার যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের দ্বিতীয় স্ত্রী শারমিন চৌধুরী বলেছিলেনন, ‘জুয়া খেলা তার নেশা। সম্পত্তি করা তার নেশা নয়। দোকান গাড়ি ফ্ল্যাট-এগুলো তার নেশা নয়।’

স্ত্রীর কথাই সত্যি হল। ক্যাসিনোকিং খ্যাত বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের প্রধান ও একমাত্র নেশা ছিল জুয়া। খেলতে যেতেন সিঙ্গাপুরের মেরিনা বে ক্যাসিনোতে। সঙ্গে নিতেন লাগেজভর্তি ডলার। ভিআইপি লাউঞ্জ দিয়ে বিমানে উঠতেন সম্রাট। তার লাগেজ চেক করা দূরের কথা কখনই তাকে দেহতল্লাশির মুখোমুখিও হতে হয়নি। ক্যাসিনোতে তিনি দু’হাতে টাকা উড়ান। কখনও হারেন, কখনও জেতেন। একদিনে ৪৫ কোটি টাকা পর্যন্ত খুইয়েছেন জুয়ার বোর্ডে।

র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে নিজের জুয়ার নেশা থেকে শুরু করে ঢাকার ক্যাসিনো সাম্রাজ্যের আদ্যোপান্ত সবিস্তারে খুলে বলছেন সম্রাট। তিনি স্বীকার করেছেন জুয়া খেলাই তার একমাত্র নেশা।

সম্রাট গ্রেফতারের পর স্ত্রী শারমিন বলেছিলেনন, ‘ওর সম্পদ বলতে কিছুই নাই। ক্যাসিনো চালিয়ে ও যে আয় করে তা দলের জন্য খরচ করে, দল পালে। আর যা থাকে তা দিয়ে সিঙ্গাপুরে গিয়ে জুয়া খেলে।’

ক্যাসিনো চালিয়ে দল পালে এটা জানেন কী করে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওর জনপ্রিয়তা দেখেই বোঝা যায়। ওর মতো জনপ্রিয়তা আর কার আছে? একমাত্র সম্রাটের জনপ্রিয়তা আছে। উত্তরাতে নিখিল নামে একজন আছে, তার তো এত জনপ্রিয়তা নাই।’

ক্যাসিনো ব্যবসা চালাতে নিষেধ করতেন কিনা জানতে চাইলে সম্রাটের স্ত্রী বলেন, ‘না। আমার সঙ্গে ওর মিলতো কম। ছেলেপুলে নিয়ে ও চলতে বেশি ভালোবাসতো।’

তিনি বলেন, ‘সম্রাট অ্যারেস্ট হয়েছে আমি জানি। ওর সঙ্গে আমার দুই বছর ধরে কোনো সম্পর্ক নাই। ও যে ক্যাসিনো গডফাদার তা আমি জানি না। আমি জানি ও যুবলীগ করে, ও ভালো একটা নেতা। উত্তর দক্ষিণের সবাই জানে ও ভালো একটা নেতা। আর আমিও সেটা জানি।’

‘আমার সঙ্গে দুই বছরের দুরত্ব হওয়ায় ও যে এত বড় ক্যাসিনো চালাইতেন তা জানি না।’

সম্রাটের রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কে শারমিন বলেন, ‘ওর নাম যেমন সম্রাট ও শুরু থেকেই সম্রাট। ও কিন্তু সহসসভাপতি বা অন্যদের মতো না। ও খুব ভালোভাবে চলাফেরা করে। কিন্তু ক্যাসিনোতে ও কীভাবে আসল তা জানি না।’

সম্রাট সিঙ্গাপুরে কেন যেতেন-এমন প্রশ্নে শারমিন বলেন, ‘ও জুয়া খেলতে সিঙ্গাপুরে যেত। জুয়া খেলা তার নেশা। সম্পত্তি করা তার নেশা নয়। দোকান গাড়ি ফ্ল্যাট-এগুলো তার নেশা নয়।’

সিঙ্গাপুরে বিভিন্ন নারীর সঙ্গে সম্রাটের ছবি আছে- এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাকে দুই বছর ধরে সিঙ্গাপুরে নেয় না। ওখানে বোধ হয় চায়না প্লাস মালয়েশিয়া ব্রোনমিক্সড ওর সঙ্গে মনে সম্পর্ক হয়েছে। সিঙ্গাপুর গেলে ওর সঙ্গে সময় কাটায়।’

আপনাদের বিয়ে হয়েছে ১৯ বছর। তখন সম্রাটদের পারিবারিক অবস্থা কেমন ছিল আর এখন কেমন?

এ বিষয়ে শারমিন বলেন, ‘সম্পদের দিক থেকে আগে যেমন ছিল এখন ঠিক তেমনই। আমি বলি সম্রাটের কোনো নেশা নাই- ফ্ল্যাট করার, গাড়ি করার, একমাত্র নেশাই জুয়া খেলা।’

আপনি কত নম্বর স্ত্রী জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি সম্রাটের দ্বিতীয় স্ত্রী। আমার আগে একটা বিয়ে করেছিল ওটা ডিভোর্স হয়ে গেছে। সে বাড্ডাতে থাকতো।

আপনি যে বাসায় আছেন এটা কি সম্রাটের এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে শারমিন বলেন, ‘না, এটা সম্রাটের না। আবার সম্রাটেরও। আমি যখন কিনছি, তখন ২৫ লাখ ২৬ লাখ ঠিকাদার বিক্রি হতো। তখন কেনা হইছে।’

র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে সম্রাট তার গডফাদার কে, কিভাবে তিনি ক্যাসিনো জগতে এলেন এবং জুয়ার টাকা কার কার পকেটে গেছে সবার নামই তিনি বলছেন। জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া নামগুলোর তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। যাচাই-বাছাই শেষে নামের তালিকা পাঠানো হচ্ছে সরকারের উচ্চপর্যায়ে। তবে অকপটে সব খুলে বলছেন।

সূত্র বলছে, ক্যাসিনো কিং সম্রাটের অর্থ-সম্পদের একটি লম্বা ফিরিস্তি পাওয়া গেছে। দুবাই, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে টাকা জমা রেখেছেন সম্রাট। তার ভাই বাদলের নামে রাজধানীর আশপাশে কয়েকটি প্লট ও ফ্ল্যাট কিনে রেখেছেন তিনি। এছাড়া ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের জনৈক নেত্রী মৌসুমির সঙ্গে সম্রাটের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। মৌসুমির নামে পুলিশ প্লাজায় একাধিক দোকান কিনেছেন। যুবলীগ নেতা খালেদ ও আরমানের বিপুল অংকের টাকা আছে থাইল্যান্ড, দুবাই ও সৌদি আরবে। জুয়ার টাকায় আরমান সিনেমা প্রযোজনা শুরু করেন। দেশবাংলা চলচিত্র নামে একটি প্রডাকশন হাউস খোলেন তিনি। সিনেমা জগতে নাম লেখানোর পর আরমানের সঙ্গে শিরিন শিলা নামের জনৈক চিত্রনায়িকার ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়। প্রথমে বন্ধুত্ব হলেও পরে শিলার সঙ্গে আরমানের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। রাজধানীর বনশ্রী এলাকায় শিলার নামে একাধিক ফ্ল্যাট কেনেন আরমান।

র‌্যাব জানায়, সম্রাটের অস্ত্র ভাণ্ডারের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। কারণ বিভিন্ন সূত্রে খবর এসেছে সম্রাটের কাছে একাধিক আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে। বিশেষ করে তার কাছে একাধিক একে-৪৭ ও একে-২২ রাইফেল আছে। নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে সম্রাটের অস্ত্র ভাণ্ডারের তথ্য জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার অস্ত্রধারী ক্যাডারদের একটি তালিকা তৈরি করেছে র‌্যাব। অর্ধশতাধিক ক্যাডার বাহিনীর প্রত্যেকের কাছেই একের অধিক বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে। বিদেশে পালিয়ে থাকা একাধিক শীর্ষ সন্ত্রাসীর কাছ থেকে অবৈধ অস্ত্র সংগ্রহ করতেন খালেদ। তার ব্যক্তিগত গাড়িতে সার্বক্ষণিক ১০-১৫টি পিস্তল ও শটগান থাকত। কথায় কথায় তিনি গুলি ফুটিয়ে জনমনে আতঙ্ক তৈরি করতেন।


সৌজন্যে : যুগান্তর
সিলেটভিউ২৪ডটকম/২০ অক্টোবর ২০১৯/জিএসি

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন