আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ইং

‘প্রধানমন্ত্রীর নজরে আসতে মামলা করেন ব্যারিস্টার সুমন’

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-১১-১৪ ১৮:৪৯:২২

সিলেটভিউ ডেস্ক :: সামাজিক, রাজনৈতিক ও আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন আমার বিরুদ্ধে এ মামলা করেছেন। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর নজরে আসতে মামলা করেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালে ফেনীর মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির বক্তব্য ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগে করা মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থনের বক্তব্যে এসব কথা বলেন মামলার আসামি সোনাগাজী মডেল থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেন। তবে তার এ বক্তব্যের বিরোধিতা করেন মামলার বাদী ব্যারিস্টার সুমন। তিনি বলেন, ‘সারা দেশের ওসিরা যেন নারীদের সম্মান করেন, এজন্য আমি মামলা করি।’

আত্মপক্ষ সমর্থনের বক্তব্যে ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন অঝোরে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘এ মামলায় যে সাজা আমি এর চেয়ে বেশি পেয়ে গেছি। রংপুরে আমাকে যখন বদলি করা হয়, তখন রংপুরবাসী আমার বিরুদ্ধে জুতা মিছিল করে। আমার ছেলে এখন স্কুলে যেতে পারে না। আমার পরিবার এখন নিঃস্ব হয়ে গেছে। আমার চিন্তায় আমার মা বিছানায় অসুস্থ হয়ে পড়ে আছেন। প্রিন্সিপাল সিরাজ-উদ-দৌলাকে গ্রেফতার করার জন্য নুসরাতসহ তিনজনের ভিডিও করি। এতে আমার কোনো খারাপ উদ্দেশ্য ছিল না। আমি নির্দোষ। আমি আপনার (আদালত) কাছে ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করছি।’

এরপর বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আস-শামস জগলুল হোসেন আত্মপক্ষ সমর্থন শেষে যুক্তি উপস্থাপনের জন্য ২০ নভেম্বর দিন ধার্য করেন। ওসি মোয়াজ্জেম আদালতে লিখিত বক্তব্য জমা দেন। এ মামলায় ১২ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দেন।

মামলার বাদী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন বলেন, ‘সামাজিক বা কারও নজরে আসার জন্য একজন ওসির বিরুদ্ধে মামলা করে সারাজীবন শত্রুতা টানব-এটার জন্য মামলা করেনি। সারা দেশের ওসিরা যেন নারীদের সম্মান করেন, এজন্য আমি মামলা করেছি। আমি ওসি মোয়াজ্জেমের বক্তব্য যুক্তি উপস্থাপনে খণ্ডন করব। কোনো নারীর ভিডিও যেন এভাবে ছড়িয়ে না যায় তার জন্য মামলা করেছি।’

ওসি মোয়াজ্জেমের আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ বলেন, ‘আত্মপক্ষ সমর্থনে ওসি মোয়াজ্জেম নিজের পক্ষে সকল যুক্তি তুলে ধরেছেন। আমার বিশ্বাস, ওসি মোয়াজ্জেম মামলার দায় থেকে খালাস পাবেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘মামলার বাদী ভিডিও-ভাইরাল ব্যক্তি। তিনি এ ভিডিও ফেসবুকে দিয়ে মাসে ৩০ হাজার টাকা ইনকাম করেন। মাদরাসার প্রিন্সিপালকে গ্রেফতার করার জন্য নুসরাতসহ তার দুই বান্ধবীর ভিডিও করেছেন ওসি মোয়াজ্জেম।’

গত ১৭ জুলাই বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আস-শামস জগলুল হোসেন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। ১৭ জুন আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। ১৬ জুন রাজধানীর শাহবাগ থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

২৭ মে বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক পিবিআইয়ের প্রতিবেদন আমলে নিয়ে এ গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। আসামি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেন মামলার বাদী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।

১৫ এপ্রিল ফেনীর সোনাগাজী মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (প্রত্যাহার হওয়া) মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার আবেদন করেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। আদালত তার জবানবন্দি নিয়ে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮’ এর ২৬, ২৯ ও ৩১ ধারায় করা অভিযোগটি পিটিশন মামলা হিসেবে গ্রহণ করেন। পরে এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন আদালত।

গত ২৭ মার্চ নুসরাত জাহান রাফিকে শ্রেণিকক্ষে নিয়ে যৌন নিপীড়ন করেন মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ দৌলা। এমন অভিযোগ উঠলে দুজনকে থানায় নিয়ে যান ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন। এ সময় ওসি নিয়ম ভেঙে জেরা করেন এবং নুসরাতের বক্তব্য ভিডিও করেন।

মৌখিক অভিযোগ নেয়ার সময় দুই পুরুষের কণ্ঠ শোনা গেলেও সেখানে নুসরাত ছাড়া অন্য কোনো নারী বা তার আইনজীবী ছিলেন না। ভিডিওটি প্রকাশ হলে অধ্যক্ষ ও তার সহযোগীদের সঙ্গে ওসির সখ্যতার বিষয়টি স্পষ্ট হয়।

ভিডিওতে দেখা যায়, থানার ওসির সামনে অঝোরে কাঁদছেন নুসরাত জাহান রাফি। সেই কান্নার ভিডিও করছিলেন সোনাগাজী থানার ওসি। নুসরাত তার মুখ দুই হাত দিয়ে ঢেকে রেখেছিলেন। তাতেও ওসির আপত্তি। বারবার ‘মুখ থেকে হাত সরাও, কান্না থামাও’ বলার পাশাপাশি তিনি এ-ও বলেন, ‘এমন কিছু হয়নি যে এখনও তোমাকে কাঁদতে হবে।’

মামলায় অভিযোগ করা হয়, ওসি মোয়াজ্জেম অনুমতি ছাড়া নিয়মবহির্ভূতভাবে নুসরাতকে জেরা এবং তা ভিডিও করেন। পরে ওই ভিডিও ফেসবুক ও ইউটিউবসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

ভিডিওতে দেখা যায়, ওসি মোয়াজ্জেম অত্যন্ত অপমানজনক ও আপত্তিকর ভাষায় নুসরাতকে একের পর এক প্রশ্ন করে যাচ্ছেন। নুসরাতের বুকে হাত দিয়ে শ্লীলতাহানি করা হয়েছে কি-না, এমন প্রশ্নও করতে শোনা যায় ওসি মোয়াজ্জেমকে।

অধ্যক্ষের নিপীড়নের ঘটনায় রাফির মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় একটি মামলা করেন। গত ৬ এপ্রিল সকালে নুসরাত পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসায় গেলে মাদরাসার এক ছাত্রী তার বান্ধবী নিশাতকে ছাদের ওপর কেউ মারধর করছে-এমন সংবাদ দিলে তিনি ওই বিল্ডিংয়ের চার তলায় যান।

সেখানে মুখোশ পরা চার-পাঁচজন তাকে অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ দৌলার বিরুদ্ধে মামলা ও অভিযোগ তুলে নিতে চাপ দেন। নুসরাত অস্বীকৃতি জানালে তারা তার গায়ে আগুন দিয়ে পালিয়ে যান। গত ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় নুসরাতের।

গত ২৪ অক্টোবর আলোচিত নুসরাত হত্যা মামলায় ১৬ আসামির ফাঁসি ও এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড ঘোষণা করেন ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের বিচারক মো. মামুনুর রশিদ।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন-সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা, নূর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, সোনাগাজী পৌরসভার কাউন্সিলর মাকসুদ আলম, সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের, জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন জাবেদ, হাফেজ আব্দুল কাদের, আবছার উদ্দিন, কামরুন নাহার মনি, উম্মে সুলতানা ওরফে পপি ওরফে তুহিন ওরফে শম্পা ওরফে চম্পা, আব্দুর রহিম শরীফ, ইফতেখার উদ্দিন রানা, ইমরান হোসেন ওরফে মামুন, মোহাম্মদ শামীম, মাদরাসার গভর্নিং বডির সহ-সভাপতি রুহুল আমীন ও মহিউদ্দিন শাকিল।

সৌজন্যে :: জাগোনিউজ২৪
সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৪ নভেম্বর ২০১৯/জিএসি

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন