আজ শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ইং

একসঙ্গে ৪৭ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন খাদ্য পরিদর্শক

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-১১-২০ ১৯:০৮:১০

সিলেটভিউ ডেস্ক :: ভৈরবের সাবেক খাদ্য পরিদর্শক (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) খোরশেদ আলমের বিরুদ্ধে করা ঘুষ-দুর্নীতির মামলার তদন্ত প্রতিবেদন ঢাকার খাদ্য অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) এ তদন্ত প্রতিবেদন খাদ্য অধিদপ্তরে পাঠিয়েছেন বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ময়মনসিংহের খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. জাহাঙ্গীর আলম। অভিযুক্ত খোরশেদ আলম সরকারি চাকরি করেও ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) যুবলীগের সহ-সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল হোসেন সম্রাট ওরফে ক্যাসিনো সম্রাটের সহযোগী হিসেবে পরিচিত। খোরশেদ আলম বর্তমানে টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার খাদ্য পরিদর্শক হিসেবে কর্মরত।

এর আগে ভৈরবে খাদ্য পরিদর্শক থাকাকালে দুজন রাইস মিল মালিকের কাছ থেকে ৪৭ লাখ টাকা ঘুষ নেয়ার ঘটনায় খাদ্যমন্ত্রী ও দুদক চেয়ারম্যানের কাছে ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে লিখিত দেয়া হয়।

গত ১ নভেম্বর ভৈরবের মা অটো রাইস মিল মালিক আবদুল্লাহ আল মামুন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যানের কাছে একটি লিখিত অভিযোগে জানান, ২০১৭ সালে বোরো মৌসুমে সরকারি গুদামে চাল সরবরাহ করতে গিয়ে ভৈরব খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খোরশেদ আলম প্রতি টন চালে ৩ হাজার টাকা ঘুষ নেন। মিল মালিক চাল সরবরাহ দিতে গেলে চালের মান ভালো নয় বলে কায়দা করে এই ঘুষ আদায় করেন ওই কর্মকর্তা।

মিল মালিক তার অভিযোগে আরও উল্লেখ করেন, ঘুষের টাকা খোরশেদ আলম তার একজন প্রতিনিধির মাধ্যমে নিয়েছেন এবং ঘুষের ২৫ লাখ টাকা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মেঘ রৌদ্দ নামের একটি হিসেবে সোনালী ব্যাংকে জমা দিয়েছেন।

একইভাবে ভৈরবের তামজিদ অটো রাইস মিল মালিক তারিক আহমেদ ২০১৮ সালের ৬ নভেম্বর খাদ্যমন্ত্রীর কাছে লিখিত অভিযোগ করে জানান, তার কাছ থেকেও চাল সরবরাহের সময় প্রতি টনে ৩ হাজার টাকা করে ঘুষ নেন খোরশেদ আলম। তিনি চাল সরবরাহ দিতে গিয়ে খোরশেদ আলমকে ২২ লাখ টাকা ঘুষ দেন।

দুজন মিল মালিকই জেলা প্রশাসকসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে অভিযোগের কপি ডাকযোগে পাঠিয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, ভৈরব খাদ্য গুদামের এই কর্মকর্তা নিয়মিত অফিস করেন না। তিনি ঢাকায় থাকেন এবং সপ্তাহে বা ১০-১৫ দিন পরপর ভৈরব অফিসে এসে একসঙ্গে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেন।

তাদের অভিযোগ প্রাথমিকভাবে তদন্তে প্রমাণিত হলে চলতি বছরের ১৬ মে খোরশেদ আলমের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। একই সঙ্গে খাদ্য অধিদপ্তর থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। গত ৮ জুলাই তদন্ত কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম ভৈরবে এসে স্বাক্ষীসহ অভিযোগকারীদের বক্তব্য ও অফিসের খাতাপত্র পরীক্ষা করে অভিযোগের সত্যতা পান।

এর আগে গত বছরের ২৫ নভেম্বর কিশোরগঞ্জ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মামুনুর রশিদ তদন্ত কমিটি গঠন করে এ ঘটনা তদন্ত করেন। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় খোরশেদ আলমকে দেড় মাস আগে টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলা খাদ্যগুদামে বদলি করা হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সরকারি চাকরি করেও ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) যুবলীগের দায়িত্ব পালন করছেন খোরশেদ আলম। তিনি সম্রাটের সহযোগী হিসেবে পরিচিত। ভৈরবে কর্মরত অবস্থায় মাসে ৪-৫ দিন অফিস করতেন তিনি। ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ করতেন না খোরশেদ আলম। ঘুষের ঘটনা তদন্ত ছাড়াও তার বিরুদ্ধে আরও দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে খাদ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে।

এরই মধ্যে রোববার (১৭ নভেম্বর) ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীসহ রাজনীতিবিদ, প্রকৌশলী, কাস্টমস কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীসহ ১০৫ জনের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এই তালিকায় খাদ্য পরিদর্শক খোরশেদ আলমের নাম রয়েছে বলে দুদক সূত্র জানায়।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত খাদ্য পরিদর্শক খোরশেদ আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমি কোনো কথা বলতে রাজি নই। এসব বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।

ময়মনসিংহের খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, খাদ্য পরিদর্শক খোরশেদ আলমের বিরুদ্ধে ওঠা ঘুষসহ অন্যান্য অভিযোগের তদন্ত শেষে মঙ্গলবার খাদ্য অধিদপ্তরে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। তবে তদন্তের বিষয়টি গোপনীয়, তাই এ ব্যাপারে মন্তব্য করা ঠিক হবে না। যেসব অভিযোগ পেয়েছি তা তদন্ত প্রতিবেদনে সঠিকভাবে উল্লেখ করেছি।

খাদ্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক (প্রশাসন) মামুন আল মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, তদন্ত প্রতিবেদনটি এখনো আমার হাতে এসে পৌঁছায়নি। তবে খাদ্য পরিদর্শক খোরশেদ আলমের বিরুদ্ধে ওঠা নানা অভিযোগ তদন্তে তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, সরকারি চাকরি করে কেউ যুবলীগের পদে থাকতে পারেন না। বিষয়টি তদন্ত করছে কমিটি। খোরশেদ আলম যদি যুবলীগের পদে থাকেন তবে সরকারি কর্মচারী আচরণবিধিমালার ১৯৭৯-এর ২৫ ধারা অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলেই তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মামুন আল মোর্শেদ চৌধুরী আরও বলেন, দুদকের বিষয়টি আমরা দেখি না। কাজেই খোরশেদ আলমের বিরুদ্ধে আসা দুর্নীতির অভিযোগগুলো দেখবে দুদক। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে দুদক কর্মকর্তারা।


সৌজন্যে :: জাগোনিউজ২৪
সিলেটভিউ২৪ডটকম/২০ নভেম্বর ২০১৯/জিএসি

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন