Sylhet View 24 PRINT

লাইসেন্স পেতে এত ঝামেলা জানলে গাড়িই কিনতাম না

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-১২-০১ ১৮:১২:০২

সিলেটভিউ ডেস্ক :: দুটি আলাদা দীর্ঘলাইনে মানুষের ভিড়। পাশের একটি রুমে চলছে প্রায় ৫০-৬০ জনের পরীক্ষা। বাকি যে দুটি দীর্ঘলাইন সেখানের একটিতে মানুষ অপেক্ষা করছে সিরিয়াল অনুযায়ী পরীক্ষার আসনে বসার জন্য। অন্য যে লাইন, সেটি আসলে পরীক্ষা দেয়ার আগে স্বাক্ষরসহ অনুমোদনপত্র নেয়ার লাইন। এরপর তারা গিয়ে দাঁড়াবেন পরীক্ষার আসনে বসার লাইনে।

ঘণ্টা দু-তিন বা তার চেয়েও বেশি সময় লাইনে দাঁড়িয়ে হয়তো বা বসতে পারবেন পরীক্ষা দেয়ার আসনে। তবে এখানেই শেষ নয়, এরপর আরও কিছু কাজ বাকি আছে। যদি পরীক্ষায় পাস করেন তবেই অন্য আরেকটি (তৃতীয়) লাইনে গিয়ে দাঁড়াতে হবে।

লাইনের পর লাইনের এমন ভোগান্তির দৃশ্যটি সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) জোয়ারসাহারা কার্যালয়ের। এখানে সবাই এসেছেন ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার জন্য পরীক্ষা দিতে। এখানে এসেই যে তারা ভোগান্তি-বিড়ম্বনায় পড়েছেন, তা নয়। এর আগেও এক-একজনকে দুই মাস আবার কাউকে তিন-চার মাস ড্রাইভিং লাইসেন্সের লার্নার কার্ডের (শিক্ষানবিশ) জন্য একইভাবে বিআরটিএ’র মিরপুর কার্যালয়ে লাইনে দাঁড়াতে হয়েছে। দীর্ঘ ভোগান্তি শেষে হাতে পেয়েছিলেন লার্নার কার্ড, আর সেই কার্ডে উল্লেখ করা লিখিত ও ব্যবহারিক পরীক্ষার তারিখ অনুযায়ী আজ দু-তিন মাস পর তারা পরীক্ষা দিতে এসেছেন। এ পর্বে যদি পাস করে আরও একদিন এভাবেই লাইনে দাঁড়াতে হবে লাইসেন্স প্রত্যাশিত ব্যক্তিকে ফিঙার প্রিন্ট দেয়ার জন্য। সবকিছু যদি ঠিক থাকলে আবেদন প্রক্রিয়ার শুরু করার পর থেকে প্রায় ছয়-সাত মাসের মাথায় হাতে আসবে বহুল প্রতীক্ষিত সেই ড্রাইভিং লাইসেন্স।

সংশ্লিষ্টরা জানান, গত ১ নভেম্বর থেকে নতুন সড়ক পরিবহন আইন কার্যকর হওয়ার পর বিআরটিএ অফিসে ভিড় বাড়ছে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রার্থীদের। যে কারণে বিআরটিএ হিমশিম খাচ্ছে লাইসেন্সের চাহিদা সামাল দিতে।

ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার পরীক্ষায় অংশ নিতে সম্প্রতি সকাল ৯টার পর জোয়ারসাহারা কার্যালয়ে এসে লাইনে দাঁড়ান বেসরকারি চাকরিজীবী সাজ্জাদ হোসেন। তার সঙ্গে কথা হয় গণমাধ্যমের। বলেন, ‘আজ ড্রাইভিং লাইসেন্সের পরীক্ষা, তাই অফিস থেকে কয়েক ঘণ্টার ছুটি নিয়ে এখানে এসেছি। কিন্তু এসে দেখছি দৃশ্যটা একেবারে ভিন্ন। ছয়শ’র বেশি লোক লাইনে দাঁড়ানো।’

তিনি বলেন, ‘তিন মাস আগে ড্রাইভিং লাইসেন্সের লার্নার কার্ডের জন্য একইভাবে মিরপুর বিআরটিএর লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম। ওটা হাতে পাওয়ার পর পরীক্ষার জন্য আজকের ডেট দেয়া হয়। পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য কর্তৃপক্ষের অনুমোদনসহ ক্লিয়ারেন্স পেতে লাইনে দাঁড়িয়েছি। এরপর দ্বিতীয় লাইনে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য। এখানেই শেষ নয়, এরপর পরীক্ষায় পাস করলে ব্যবহারিকের জন্য তৃতীয় লাইনে দাঁড়াতে হবে।’

ড্রাইভিং লাইসেন্সের পরীক্ষা দিতে আসা আরেক লাইসেন্সপ্রত্যাশী কবির আহমেদ বলেন, ‘আজ লিখিত ও ব্যবহারিক পরীক্ষা। পাস করলে আরেক দিন এভাবে এসে লাইনে দাঁড়িয়ে ফিঙার প্রিন্ট দিতে হবে। সব মিলিয়ে একটি লাইসেন্স পেতে ছয়-সাত মাস বা তারও চেয়ে অনেক বেশি সময় লেগে যায়। সেই সঙ্গে তো আছে সীমাহীন ভোগান্তি আর বিড়ম্বনা।’

তিনি বলেন, ‘বিআরটিএর উচিত এত সব ভোগান্তির পরিস্থিতি পরিহার করে সঠিক ও বৈধভাবে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান নিশ্চিত করা।’

একটা মোটরসাইকেল কেনার খুব শখ ছিল কবির আহমেদের। অবশেষে সেই শখ পূরণ করেছেন। তিনি বলেন, ‘রাজধানীতে যানজট ও গণপরিবহনের ভোগান্তি থেকে রক্ষা পেতে প্রায় দেড় লাখ টাকায় একটি মোটরসাইকেল কিনেছি। এখন এসে পড়েছি আরেক ভোগান্তিতে। মোটরসাইকেল কেনা সহজ কিন্তু ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া বড় কঠিন এবং বিড়ম্বনার। লাইসেন্স পেতে এতটা বিড়ম্বনা পোহাতে হবে আগে জানলে মোটরসাইকেলই কিনতাম না। গাড়ি কিনতে একদিন কিন্তু লাইসেন্স করতে সময় লাগে এক বছর। এটা জানলে মানুষ আর গাড়িই কিনবে না।’

বিআরটিএ’র জোহারসাহারা কার্যালয়ের দায়িত্বরতরা এ বিষয়ে কথা বলতে না চাইলেও নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেকে জানান, নতুন সড়ক পরিবহন আইন হওয়ার পর থেকেই লাইসেন্সের চাহিদা অনেকাংশে বেড়ে গেছে। এ আইনে সড়কে নিয়ম ভঙ্গে জরিমানা বেড়েছে অনেকগুণ। ড্রাইভিং লাইসেন্স কিংবা ফিটনেস সনদ না থাকলে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রয়েছে নতুন আইনে। হতে পারে ছয় মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড। আগে এ অপরাধের জরিমানা ছিল ৫০০ টাকা। গাড়ির রেজিস্ট্রেশন না থাকলে জরিমানা দিতে হবে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত। গাড়ির ট্যাক্স টোকেন হালনাগাদ না থাকলে জরিমানা ১০ হাজার টাকা। তাই বিআরটিএতে লাইসেন্সপ্রত্যাশী মানুষের ভিড় বেড়েছে। যে কারণে লাইসেন্স দিতে কিছুটা হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।

বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, গত সেপ্টেম্বরে ড্রাইভিং লাইসেন্স পেন্ডিং ছিল সোয়া এক লাখ। ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরির সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠান ‘টাইগার বিডি’ কালো তালিকাভুক্ত হবার পর নতুন করে টেন্ডার ছাড়া হয়েছে। নতুন প্রতিষ্ঠান দায়িত্ব না নেয়া পর্যন্ত ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরি ও সরবরাহ বিলম্ব হচ্ছে। যে কারণে গত সেপ্টেম্বর থেকে পৌনে তিন মাসে প্রায় সাড়ে ছয় লাখ ড্রাইভিং লাইসেন্স ঝুলে আছে বিআরটিএ কার্যালয়ে।

এ ব্যাপারে বিআরটিএ পরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) এ কে এম মাসুদুর রহমান বলেন, ‘নতুন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কাজ পেলে আমরা দ্রুতই লাইসেন্স দিতে পারব। তবে বর্তমানে কেউ যদি ড্রাইভিং লাইসেন্স না-ও পান, সমস্যা হবে না। যারা লাইসেন্সের জন্য টাকা জমা দিয়েছেন, পরীক্ষায় পাস করে লাইসেন্সপ্রাপ্তির জন্য অপেক্ষায় আছেন, ওই পেপার দেখালেই কেউ পানিশমেন্ট পাবেন না। এছাড়া অস্থায়ীভাবে একটা অনুমোদনপত্রও দেয়া হচ্ছে।’

ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে যা যা করতে হয়

অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার জন্য ন্যূনতম ১৮ বছর এবং পেশাদার লাইসেন্সের জন্য ন্যূনতম ২০ বছর বয়স্ক ব্যক্তি আবেদন করতে পারবেন। লাইসেন্স দেয়া হয় বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) থেকে। ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার প্রথম ধাপ হলো শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্সের (লার্নার) জন্য আবেদন করা। প্রথমে এর জন্য বিআরটিএ থেকে বা ওয়েবসাইট থেকে আবেদনপত্র এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আবেদন করতে হবে।

শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

১. নির্ধারিত ফরমে আবেদন। ২. রেজিস্ট্রার্ড চিকিৎসকের দেয়া মেডিকেল সার্টিফিকেট। ৩. ন্যাশনাল আইডি কার্ড/জন্মসনদ/পাসপোর্টের সত্যায়িত ফটোকপি। ৪. নির্ধারিত ফি, ক্যাটাগরি-১ এর জন্য ৩৪৫ টাকা ও ক্যাটাগরি-২ এর জন্য ৫১৮ টাকা বিআরটিএর নির্ধারিত ব্যাংকে (ব্যাংকের তালিকা www.brta.gov.bd তে পাওয়া যাবে) জমাদানের রশিদ। ক্যাটাগরি-১ শুধু মোটরসাইকেল অথবা শুধু হালকা মোটরযানের জন্য। ক্যাটাগরি-২ মোটরসাইকেল এবং হালকা মোটরযান একসঙ্গে। ৫. সদ্য তোলা তিন কপি স্ট্যাম্প ও এক কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি।

আবেদনপত্রটি নিজ হাতে পূরণ করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ নিজ এলাকা অনুযায়ী বিআরটিএর সার্কেল অফিসে জমা দিতে হবে।

সার্কেল অফিস আপনাকে একটি নির্দিষ্ট মেয়াদের শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স দেবে। এরপর তাদের দেয়া সময় অনুযায়ী ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য লিখিত, মৌখিক ও ব্যবহারিক পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। এসময় আপনাকে লার্নারের মূল কপি নিয়ে যেতে হবে।

লিখিত, মৌখিক ও ফিল্ড টেস্টে উত্তীর্ণ হওয়ার পর পুনরায় একটি নির্ধারিত ফরমে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও ফি দিয়ে স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য সংশ্লিষ্ট সার্কেল অফিসে আবেদন করতে হবে। গ্রাহকের বায়োমেট্রিক্স (ডিজিটাল ছবি, ডিজিটাল স্বাক্ষর ও আঙুলের ছাপ) গ্রহণ করে স্মার্টকার্ড ইস্যু করা হয়। স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রিন্টিং সম্পন্ন হলে গ্রাহককে ক্ষুদেবার্তার (এসএমএস) মাধ্যমে তা গ্রহণের বিষয়টি জানিয়ে দেয়া হয়। স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদন করার পর বিআরটিএ একটি প্রাপ্তি রিসিট গ্রাহককে দেবে। স্লিপটি স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স না পাওয়া পর্যন্ত ড্রাইভিং লাইসেন্স হিসেবে গণ্য করা হয়।

স্মার্টকার্ড লাইসেন্সের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

১. নির্ধারিত ফরমে আবেদন। ২. রেজিস্ট্রার্ড চিকিৎসকের দেয়া মেডিকেল সার্টিফিকেট। ৩. ন্যাশনাল আইডি কার্ড/জন্মসনদ/পাসপোর্টের সত্যায়িত ফটোকপি। ৪. নির্ধারিত ফি (পেশাদার এক হাজার ৬৮০ টাকা ও অপেশাদার দুই হাজার ৫৪২ টাকা) বিআরটিএর নির্ধারিত ব্যাংকে জমাদানের রশিদ। ৫. পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য পুলিশি তদন্ত প্রতিবেদন। ৬. সদ্য তোলা এক কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি।

অপেশাদার লাইসেন্স ১০ বছর পরপর নবায়ন করাতে হবে। পেশাদার লাইসেন্স পাঁচ বছর পরপর নবায়ন করাতে হয়।

সৌজন্যে :: জাগোনিউজ২৪
সিলেটভিউ২৪ডটকম/১ ডিসেম্বর ২০১৯/জিএসি

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.