আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ইং

বিদ্যুতের খুঁটি রেখেই চলছে সড়কের উন্নয়ন কাজ

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০১-১৭ ২০:৫৪:৩৪

সিলেটভিউ ডেস্ক :: গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভা এলাকার জনগুরুত্বপূর্ণ সড়ক আনসার রোড থেকে শ্রীপুর ও আনসার রোড থেকে বহেরারচালা। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের সঙ্গে সংযুক্ত এই সড়ককে কেন্দ্র গড়ে উঠেছে দেশের বিখ্যাত বহু শিল্প প্রতিষ্ঠান। শিল্প-কারখানার ভারি যানবাহন চলার কারণে গত কয়েক বছর ধরেই সড়কটির বেহাল অবস্থা। জনদুর্ভোগ লাঘবে সড়কটির সংস্কার কাজ শুরু হলেও নতুন করে জটিলতা তৈরি হয়েছে সড়কের ওপরে থাকা বিদ্যুতের খুঁটি নিয়ে।

খুঁটি সরাতে পৌরসভা ও বিদ্যুৎবিভাগের মধ্যে চিঠি চালাচালি হলেও কার্যত কোনো ফল পাওয়া যায়নি। ফলে খুঁটি রেখেই কাজ করেছে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। এতে যানবাহন চলাচলে সমস্যার পাশাপাশি দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, শিল্প কারখানা সমৃদ্ধ এই পৌরসভার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সড়ক আনসার রোড থেকে শ্রীপুর ও আনসার রোড থেকে বহেরারচালা। এই সড়ককে কেন্দ্র করে এর উভয় পাশে গড়ে উঠেছে প্রায় অর্ধশত শিল্প কারখানা। শিল্প কারখানার ভারি যানবাহনের চাপের কারণে গত কয়েক বছর ধরেই সড়কের বেহাল অবস্থা। এতে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়ে দেখা দেয় জনদুর্ভোগ। দুর্ভোগ লাঘবে চলতি অর্থবছরে (২০১৯-২০২০) বাংলাদেশ মিউনিসিপল ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের (বিএমডিএফ) অর্থায়নে ১১ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ব্যায়ে ৩ হাজার ৭০০ মিটার সড়কের দরপত্র আহ্বান করা হয়। এর কার্যাদেশ দেয়া হয় জেনেভা ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে।

পূর্বে সড়কটি সরু থাকায় শিল্প কারখানার ভারি যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হতো। তাই বর্তমানে সড়কটি প্রশস্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আর এতে প্রধান প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দেখা যায় বিদ্যুতের খুঁটি। প্রায় এক কিলোমিটার সড়কের ওপর ৪৩টি বিদ্যুতের খুঁটি রয়েছে। কোনোটি সড়কের দুই থেকে আড়াই ফুট আবার কোনোটি তিন ফুটের মধ্যে আছে।

এদিকে সড়ক উন্নয়নের প্রতিবন্ধকতার জন্য সড়কের ওপর বিদ্যমান খুঁটি সরিয়ে দিতে পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করলে তারা প্রাক্কলন নির্ধারণ করে পৌরসভা কর্তৃপক্ষকে অর্থ জমা দিতে বলেন। কিন্তু এই অর্থের কোনো ব্যবস্থা পৌরসভার না থাকায় তারা তা দিতে পারেনি। তবে কার্যাদেশের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া ও সামনের বর্ষা মৌসুমের কথা বিবেচনা করে সড়কে খুঁটি রেখেই দ্রুত কাজ শেষ করছে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ।

শ্রীপুর পৌর এলাকার বহেরারচালা গ্রামের পর্যটক শাফি কামাল জানান, প্রতিটি কাজের আগে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রয়োজন। এই সড়কে যা হচ্ছে তা হলো পরিকল্পনাবিহীন কাজ। সরকারের প্রতিটি সংস্থার মধ্যে সমন্বয়হীনতার ফলেই সড়কে খুঁটি রেখে কাজ করছে পৌরসভা। কাজ শেষে একদিকে পৌরসভা দায় এড়িয়ে যাবে, অন্যদিকে নানা অজুহাত তৈরি করবে বিদ্যুৎ বিভাগ। ফলে খুঁটি রয়েই যাবে। এতে দুর্ঘটনার মাধ্যমে প্রাণহানির আশঙ্কা যেমন থাকবে তেমনি সড়ক প্রশস্তকরণের কোনো সুফল আসবে না।

সমাজকর্মী মেহেদী হাসান রনি বলেন, বহেরারচালা (নতুন বাজার) থেকে আনসার রোড এই সড়ক মেরামতের কাজ চলছে। আশেপাশে অনেক শিল্প কারখানা থাকায় এবার সময়োপযোগী ঢালাই পদ্ধতিতে রাস্তা তৈরি হচ্ছে। এটা ভালো খবর হলেও সমস্যা ও ঝুঁকি কিন্তু রয়েই গেছে। কারণ রাস্তার দুই পাশে হাঁটার জন্য কোনো জায়গা খালি করা হয়নি। আর বৈদ্যুতিক খুঁটিগুলোও সরানো হয়নি। পুরো রাস্তাজুড়ে বৈদ্যুতিক খুঁটি থাকায় দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনাও তৈরি হলো।

তিনি বলেন, এ রকম অপরিকল্পিত উন্নয়ন আমরা চাই না। আমরা চাই পরিকল্পিত উন্নয়ন। রাস্তার দুই পাশে ফুটপাত থাকবে। রাস্তায় বৈদ্যুতিক খুঁটি থাকবে না। বিশেষ জায়গাগুলোতে রঙ করা গতিরোধক থাকবে।

শ্রীপুর পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আমজাদ হোসেন বলেন, আগেই আমরা সড়কের নির্দিষ্ট জায়গায় খুঁটি স্থাপনে বিদ্যুৎ বিভাগকে নিষেধ করেছিলাম, তারা শুনেনি। পৌরসভার সকল রাস্তাঘাটে অপরিকল্পিতভাবে বিদ্যুতের খুঁটি স্থাপন করা হয়েছে। উন্নয়ন কাজে বর্তমানে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে বিদ্যুতের খুঁটি। এর ফলে যেমন দুর্ঘটনার আশঙ্কা বাড়ছে তেমনি সড়ক প্রশস্তকরণেও প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে।

শ্রীপুর পৌরসভার উপ-সহকারী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) মিজানুর রহমান জানান, জনগুরুত্বপূর্ণ এই সড়ক ৩০ ফুট প্রশস্ত করে সঙ্গে ড্রেন নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু বিদ্যুতের খুঁটির কারণে ড্রেন নির্মাণের পরিকল্পনা বাতিল হয়ে যায়। সঙ্গে প্রশস্ত কমিয়ে ২০ ফুট করা হয়। তবুও সড়কে খুঁটি রয়েই যায়। সড়ক থেকে খুঁটি সরানোর জন্য বিদ্যুৎ বিভাগের নিকট আবেদন করলে তারা ২৭৮টি খুঁটি সরানোর জন্য ১ কোটি ১০ লাখ প্রাক্কলন বাবদ পৌরসভাকে জমা দিতে বলে। কিন্তু এ অর্থ জমা দেয়ার মত কোনো ব্যবস্থা বর্তমানে পৌরসভার নেই। তবে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ খুঁটিগুলোকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় তুলে নেয়ার জন্য বিদ্যুৎ বিভাগের নিকট আবেদন করা হয়েছে।

ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ মাওনা জোনাল অফিসের সহকারী মহাব্যবস্থাপক কামাল পাশা জানান, বিধি অনুযায়ী খুঁটি সরানোর জন্য প্রাক্কলন নির্ধারণ করে পৌরসভাকে অর্থ জমা দিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তারা সে অর্থ এখনও জমা দেয়নি। তবে সড়কের মধ্যে যেসব খুঁটি দুর্ঘটনার ঝুঁকি তৈরি করবে সেসব খুঁটি স্থানান্তরের পরিকল্পনা করা হয়েছে।

সৌজন্যে :: জাগোনিউজ২৪
সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৭ জানুয়ারি ২০২০/জিএসি

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন