Sylhet View 24 PRINT

‘ছেলের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার গুজবে সাতক্ষীরায় মায়ের মৃত্যু’

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০২-১৩ ১৮:২৪:১৭

ফাইল ছবি

সিলেটভিউ ডেস্ক :: ‘তোমার ছেলের করোনাভাইরাস হয়েছে। পুলিশ তাকে খুঁজছে। হাসপাতালের লোকজন তাকে খুঁজছে’, সোমবার এলাকাবাসীর এমন নানা কথাবার্তায় ভীষণ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন রেণুকা বালা। ওই রাতেই হার্ট অ্যাটাক করে মারা যান তিনি।

ঘটনাটি ঘটেছে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার পদ্মপুকুর ইউনিয়নের পাতাখালি গ্রামে। অবশ্য এই ছেলের বিপদ নিয়ে উদ্বেগই রেনুকা বালার হার্ট অ্যাটাকের কারণ কি না, সেটা স্পষ্ট হয়নি চিকিৎসকদের সাথে কথা বলে।
তবে এই ঘটনাটি ওই এলাকায় দারুণ আলোড়ণ সৃষ্টি করেছে। যাকে নিয়ে আলোচনা, সেই রেণুকা রপ্তানের ছেলে রতন রপ্তানের সাথে কথা হয়েছে বিবিসির।

তিনি জানান, তিনি গত সোমবার ভারত থেকে বাংলাদেশে ফেরেন। সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে পৌঁছালে সবার মতো তারও স্ক্রিনিং করা হয়।

এ সময় তার শরীরে জ্বর সেইসঙ্গে সর্দি-কাশি ধরা পড়ে। পরে ইমিগ্রেশনের চেকআপ ইউনিটের কর্মকর্তারা তাকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন পরবর্তী স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য।

সেখানকার চিকিৎসকরা তার রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা নিরীক্ষা করেন। সেই পরীক্ষার ফল হাতে পেয়ে বৃহস্পতিবার রতন রপ্তান জানালেন, তার শরীরে করোনাভাইরাসের কোন উপস্থিতি পাওয়া যায়নি।

তবে তার লক্ষ্মণগুলো করোনাভাইরাসের লক্ষণগুলোর সঙ্গে মিলে যাওয়ায় চিকিৎসকরা তাকে সামনের কয়েকদিন বাড়িতে আলাদা হয়ে থাকার এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে চলার পরামর্শ দেন।

পদ্মপুকুর ইউনিয়নের চেয়ারমান আতাউর রহমান বলেন, রতন রপ্তানের এই ঘটনাটি এক কান দুকান হয়ে পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছিল এবং এর মধ্যেই নানা গুজব ডালপালা মেলেছিল।

কারা এই গুজব ছড়িয়েছে তা স্পষ্ট করে বলতে না পারলেও রহমান বলেন, অনেকে রতন রপ্তানের মায়ের কাছে এসে এমন কথাও বলছিল যে "রতন সাতক্ষীরা হাসপাতাল থেকে পালিয়ে গেছেন বলে পুলিশ ও স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজন তাকে হন্যে হয়ে খুঁজছে"।

এরই মধ্যে গুজবটি আরো শক্ত ভিত্তি পায় যখন শ্যামনগরের স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা রতন রপ্তানের স্বাস্থের খোঁজখবর নিতে চেয়ারম্যান আতাউর রহমানকে ফোন করেন।

রতন রপ্তান বলছেন, সারাদিনের এসব ঘটনাপ্রবাহ ভীষণ উদ্বিগ্ন করে তুলেছিল তার মাকে।

রাত থেকে তার বুকে ব্যথা হতে শুরু করে। পরে সোমবার রাত ১১টার দিকে তাকে শ্যামনগর হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

রতন রপ্তান বলেন, "আমার রক্ত নিয়ার পর যখন রিপোর্ট নিতি যাবো। আমাকে ভেতরেই ঢুকতে দেয়নি। এখন এতো ব্যাগ নিয়ে কতোক্ষণ দাঁড়ানো যায়। পরে আমি রিপোর্ট ছাড়াই বাড়ি ফিরলাম। দেখি যে আমার মা একবার ঘরের ভেতরে ঢুকছে আর বাইরে বেরুচ্ছে।"

"শুনি যে মানুষ ওসব কথা বলছে যে আমারে নাকি ভাইরাসে ধরিছে। পুলিশ পেলে ডাক্তার পেলে মেরি ফেলবে। মায়ের টেনশন হচ্ছিল স্বাভাবিক"।

রতন রপ্তান জানাচ্ছেন তিনি এখন তার স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্ট হাতে পেয়েছেন যেখানে বলা হয়েছে তার শরীরে করোনাভাইরাসের কোন অস্তিত্ব নেই। কিন্তু সেটা "কেউ বিশ্বাস করছে না। কেউ আমাদের বাড়ির আশেপাশে আসছে না।"

সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন ডা. হোসেন সাফায়েত বলছেন, "রেণুকা বালা আগে থেকেই অসুস্থ ছিলেন। এখন তার ওই আতঙ্কের কারণেই কি তিনি মারা গেছেন কিনা এটা তো বলা সম্ভব না।"

তিনি জানান, ইমিগ্রেশনে রতন রপ্তানের সর্দি-জ্বর ধরা পড়ায় তার স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। কিন্তু প্রাথমিক পরীক্ষায় করোনাভাইরাসের কোনও আলামত পাওয়া যায়নি। সাফায়েত বলেন, "আমরা পরে তার খোঁজ নিতে ফোন দিয়েছি। কিন্তু খবরগুলো এভাবে মানুষ ছড়াবে কেউ ভাবতেও পারিনি।"

করোনভাইরাস নিয়ে বিশ্বজুড়ে আতঙ্কের মধ্যে অনেকেই জেনে - না জেনে, বুঝে - না বুঝে গুজব ছড়াচ্ছেন। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম এবং অনলাইনে অনেক গুজব ডালপালা মেলছে। এই ব্যাপারটি পুলিশের নজরেও রয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন এবং তারা গুজব প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিচ্ছেন।

ডিএমপির সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম ডিভিশনের সহকারী উপ কমিশনার মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম বলছেন যারা এ ধরণের গুজব ছড়াবেন তাদেরকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতায় নেয়া হবে। ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, "এ ধরনের প্রোপাগাণ্ডা থেকে দুরে থাকুন আর এই ভাইরাসের ধ্বংস কামনা করুন।"

সৌজন্যে : বিবিসি বাংলা
সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০/জিএসি

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.