আজ শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ইং

বাঈজী সরদারনি যুব মহিলালীগ নেত্রী পাপিয়ার উত্থান যেভাবে

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০২-২৩ ১৯:৫৬:৪৫

সিলেটভিউ ডেস্ক :: নরসিংদী জেলা যুব মহিলালীগের সাধারণ সম্পাদক শামীমা নূর পাপিয়া ওরফে পিউ ও তার স্বামী শহর ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক মফিজুর রহমান চৌধুরী সুমন ওরফে মতি সুমনকে নিয়ে দেশজুড়ে চলছে সমালোচনার ঝড়। রাজনীতির অন্তরালে অস্ত্র, মাদক ও দেহ ব্যবসায় জড়িত থাকার দায়ে শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) র‌্যাব তাদের আটক করে। এ ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল বাঈজি সর্দারনিবেশে পাপিয়ার ভিডিও। নারী নেত্রীর অন্তরালে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের কথা বের হতে শুরু হয়েছে। মুখ খুলতে শুরু করেছে সাধারণ মানুষ।

সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও পতিতা ব্যবসার পাশাপাশি ব্ল্যাকমেইল করে গড়ে তুলেছেন কোটি কোটি টাকার সাম্রাজ্য। সুন্দরী নারীদের নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে অনৈতিক ব্যবসা করে আসছিলেন তিনি। অনৈতিক কার্যকলাপের ভিডিও ধারণ করে ধর্ণাঢ্য ব্যক্তিদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেয়াই তাদের প্রধান পেশা। এছাড়া অনিয়মের মাধ্যমে অঢেল সম্পদের মালিক বনে গেছেন এই পাপিয়া।

সুন্দরী নারীদের নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে অনৈতিক ব্যবসাসহ ভয়ঙ্কর সব অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িত পাপিয়া ইতোমধ্যে অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। রাজধানীর অভিজাত একটি হোটেলে তিন মাসে তার খরচ ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা। প্রতিদিন শুধু বারের খরচ বাবদ প্রায় আড়াই লাখ টাকা পরিশোধ করতেন পাপিয়া। আর এ অর্থ খরচের কারণেই গোয়েন্দাদের চোখ পড়ে পাপিয়ার ওপর। একের পর এক বেরিয়ে আসতে থাকে তার সব অপকর্মের কাহিনী।

জানা গেছে, সব পাঁচ তারকা হোটেলেই ছিল পাপিয়ার এসব ব্যবসা। নিজেকে পরিচয় দিতেন ক্ষমতার রাঘববোয়ালদের কর্মী হিসেবে। রাজনৈতিক কর্মসূচিতে গিয়ে নেতাদের ফুল দিয়ে সেই ছবিরও অপব্যবহার করতেন তার সব খারাপ কাজে। তিনি নিজেকে কেন্দ্রীয় নেত্রী হিসেবেও পরিচয় দিতেন। সর্বশেষ প্রচার করতেন সংরক্ষিত এমপি পদ পাচ্ছেন। কিন্তু তা না পেলেও থেমে ছিল না তার অপরাধমূলক কাজকর্ম।

পাপিয়া ও সুমনের নেপথ্যের কাহিনী গণমাধ্যমে প্রকাশের পর সন্ত্রাসী দম্পতির কথা এখন ‘টপ অব দ্য কান্ট্রি’। এরই মধ্যে রোববার র‌্যাবের একটি দল তাদের বাড়ি অভিযান চালিয়ে অস্ত্র ও বিপুল পরিমাণ মাদক উদ্ধার করে। অপরদিকে অনৈতিক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়া যুব মহিলালীগের শামীমা নুর পাপিয়াকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করেছে কেন্দ্রীয় যুব মহিলালীগ।

নরসিংদীর স্থানীয় রাজনীতিবিদ ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নরসিংদী শহর ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক মফিজুর রহমান চৌধুরী সুমনের রাজনীতিতে হাতেখড়ি প্রয়াত মেয়র লোকমান হোসেনের হাতে। ২০০০ সালের দিকে সুমনের উত্থান শুরু। শৈশব থেকেই চাঁদাবাজি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও ব্ল্যাকমেইল ছিল সুমনের প্রধান পেশা। দূরদর্শী চতুর ও মাস্টারমাইন্ড সুমন রাজনীতিবিদদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। ২০০১ সালে পৌরসভার কমিশনার মানিক মিয়াকে যাত্রা প্যান্ডেলে গিয়ে হত্যার অভিয়োগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ওই হত্যাকাণ্ডের এজাহারভুক্ত আসামি সুমন ওরফে মতি সুমন। হত্যাকাণ্ড ও সন্ত্রাস কর্মকাণ্ডের ওপর ভর করে তার উত্থান। বছর দশেক আগে প্রেমের সম্পর্কের পর পাপিয়া চৌধুরীকে বিয়ে করেন সুমন। এরপর তার স্ত্রী পাপিয়াকে রাজনীতিতে কাজে লাগান।

লোকমান হত্যাকাণ্ডের পর বর্তমান মেয়র কামরুজ্জামানের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। মেয়রের ক্যাডার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। বছর তিনেক পর পাপিয়া চৌধুরীর ওপর সন্ত্রাসী হামলা হয়। ওই সময় পাপিয়াকে গুলি করে সন্ত্রাসীরা। একপর্যায়ে সন্ত্রাসী সুমন ও তার স্ত্রী পাপিয়াকে আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ডে আসতে নিষেধ করেন মেয়র কামরুজ্জামান। পরে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের বিভাজকে কেন্দ্র করে পাপিয়া চৌধুরী ও তার স্বামী সদর আসনের এমপি লে. কর্নেল (অব.) মো. নজরুল ইসলামের (বীরপ্রতীক) বলয়ে যোগ দেয়। পাশাপাশি তাদের ঢাকায় সংরক্ষিত আসনের মহিলা এমপি সাবিনা আক্তার তুহিনের সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে। তুহিনের আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন তারা। ওই এমপির সঙ্গে তার গাড়ির ব্যবসা আছে বলে জানা গেছে। নরসিংদীর শালিদা এলাকায় আরএসএম কার ওয়াশ নামে একটি গাড়ির সার্ভিস সেন্টার রয়েছে।

২০১৪ সালের ১৩ ডিসেম্বর জেলা যুব মহিলা লীগের সম্মেলনে তৌহিদা সরকার রুনা সভাপতি ও পাপিয়া চৌধুরী সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

নরসিংদীতে রয়েছে সুমন ও তার স্ত্রী পাপিয়ার বিশাল কর্মীবাহিনী। নরসিংদী কলেজ শাখা ছাত্রলীগ ও জেলা ছাত্রলীগের অনেক নেতা-কর্মী যারা তার অনুসারী তারা ‘কিউ অ্যান্ড সি’ ট্যাটু ব্যবহার করেন। মাঝেমধ্যেই তারা বিশাল শোডাউন দেন আওয়ামী লীগের মিছিল-মিটিংয়ে। মাস্টারমাইন্ড সুমনের সন্ত্রাসের পাশাপাশি অস্ত্র ব্যবসার সঙ্গেও সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে।

সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান প্রয়াত নেতা আসাদুজ্জামানের স্মরণসভায় বিশাল শোডাউন আর শত শত লোক নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রতিটি মিছিল ও সভায় তারা যোগ দেন। এছাড়া স্থানীয় এমপির সভা-সমাবেশে তাদের সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। রাজনীতিতে তারা স্থানীয় এমপি নজরুল ইসলামের সমর্থক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।

নরসিংদী জেলা শহরে বাগদী মারকাজ মসজিদ এলাকায় একটি পাকা ও আরেকটি সেমিপাকা টিনশেড বাড়ি আছে পাপিয়ার। সেমিপাকা টিনশেড বাড়িটি তিনি এবং তার অনুসারীরা বিরোধীদের শায়েস্তা করার জন্য টর্চার সেল হিসেবে ব্যবহার করেন। একই এলাকার বেলদী মোড়ে প্রায় ২ কোটি টাকা মূল্যের ১০ শতাংশ এবং আরেকটি ৬ শতাংশের মূল্যবান দুটি প্লট রয়েছে। তার শ্বশুরবাড়ি ব্রাহ্মণদীতে স্বামীর দোতলা একটি বাড়ি আছে। রাজধানীর ফার্মগেট ইন্দিরা রোডে ‘রওশন ডমিনো রিলিভো’ বিলাসবহুল ভবনে তার ও তার স্বামীর নামে দুটি ফ্ল্যাট রয়েছে। এ ছাড়া তার কালো ও সাদা রঙের দুটি হায়েস মাইক্রোবাস, একটি হ্যারিয়ার, একটি নোয়া ও একটি ভিজেল কার আছে।

নরসিংদী শহরে পাঁচটি মোটরসাইকেল রয়েছে বলে জানা গেছে। মোটরসাইকেলগুলো তার অনুসারীরা ব্যবহার করেন। নরসিংদী জেলা শহরে সুমন চৌধুরীর কেএমসি কার ওয়াশ নামে একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আছে। কার ওয়াশ ব্যবসার আড়ালে এখানে মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন সন্ত্রাস কর্মকান্ড চলে। তার স্বামীর মালিকানায় থাইল্যান্ডে একটি বারও আছে। নরসিংদীর এসএমই শাখায় গত বছরের জুন পর্যন্ত ১ লাখ ২৩ হাজার ৮২৯ টাকা জমা ছিল। শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের নরসিংদী শাখায় পাপিয়ার হিসাবে ১ লাখ ৯৯ হাজার ৭৭০ টাকা ছিল। সিটি ব্যাংকে তার তিনটি হিসাব নম্বরের খোঁজ পাওয়া যায়। এর একটিতে ১ লাখ, অন্য দুটিতে ৫০ হাজার ও ১ লাখ ২০ হাজার টাকার ডিপোজিট পাওয়া যায়। তার সিটি ব্যাংকের একটি এমেক্স গোল্ড ক্রেডিট কার্ড ও একটি এমেক্স গ্রিন ক্রেডিট কার্ড রয়েছে। রাজধানীর এফডিসি গেটের সঙ্গে ‘কার এক্সচেঞ্জ’ নামে তার একটি গাড়ির শোরুম আছে বলে জানা গেছে।

এদিকে অসামাজিক কার্যকলাপ ও অবৈধ কর্মকাণ্ড এবং দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার পাপিয়াকে দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। দুপুরে যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আকতার ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক অপু উকিল স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ কথা জানানো হয়।

যুব মহিলালীগ নেত্রী সাবিনা আক্তার তুহিন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘পাপিয়া নরসিংদী জেলা যুবমহিলালীগের সাধারণ সম্পাদক, তাই যুবমহিলালীগের পিকনিকে অপুদির সাথে গেলে তাকে আমি চিনেছি। আমি যেহেতু কর্মী বান্ধব কর্মী তাই সব জেলার বা মহানগর মেয়েদের সাথে আমি ভালো ব্যবহার করি। আমার সাথে পাপিয়ার একবছর যাবত দেখা হয় না।

আমি ঢাকা মহানগর উত্তর সভাপতি, জেলা কমিটি দেয়ার এখতিয়ার আমি রাখি না, যারা তাকে নেতৃত্বে এনেছে তারা তার ব্যাপারে জবাব দিহি করবে। আমি তীব্র নিন্দা জানাই আমার বিরুদ্ধে যারা উদ্দেশ্য প্রনোদিত ভাবে মিথ্যা অপ প্রচারে লিপ্ত হয়েছে, আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি পাপিয়ার সাথে আমার কোন গাড়ীর ব্যবসা বা অন্য কোন ব্যবসা নেই। এসব আগামীতে যুবমহিলালীগের সম্মেলন কে কেন্দ্র করে আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত। আমার স্বামী একজন ক্লীন ইমেজের ব্যবসায়ী। যারা এগুলি করাচ্ছে সে নেত্রীদের পরিবার কে কি ব্যবসা করে সে ফাইল তলব করা হোক।

আমি আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে অনুরোধ করবো রিমান্ডে নিয়ে বের করা হোক পাপিয়া বা তার স্বামীর সাথে কে কে জড়িত। কেউ মানুষের ভেতরে প্রবেশ করতে পারে না, তাই সে যেহেতু জেলার সাধারণ সম্পাদক আর সে যেহেতু ঢাকা থাকতো তাই পিকনিকে অপুদির মাধ্যমে দেখা হলে সে নিজে থেকে আমার বিভিন্ন কর্মসূচীতে আসতো। আমি কি জানি সে ভালো না মন্দ। সব জেলার মেয়েরা এলেই আমি ভালো ব্যবহার করি। আমি পাপিয়া কে অল্প সময় চিনতাম, যারা ফেসবুকে আছে তারা দেখছে তার সাথে একবছর যাবত আমার সাক্ষাত ও নেই।

আমি প্রকাশিত সংবাদের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই তার সাথে আমার কেবল মাত্র সাংগঠনিক সম্পর্ক ছিলো যার দায় দায়িত্ব সংগঠনের সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের। আমি যদি তার সাথে তার ব্যক্তিগত কোন কর্মে থাকি তবেই কেবল আমার দায়িত্ব। আমি দুবাই আওয়ামী লীগের নিমন্ত্রণে ২১ ফেব্রুয়ারি উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠানে থাকা অবস্থায় এই চক্রান্ত করা হয়েছে। যাই হোক কেউ অপরাধী হলে তাকে সাজা দেয়া হোক আর তাদের পিছনে কে কে আছে তাও বের করা হোক, আশাকরি সত্য বের করে সকল অপরাধীর সাজা নিশ্চিত করা হবে।’

যুব মহিলালীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক অপু উকিল ফেসবুকে লিখেছেন, ‘এই সকল সমাজের কীটদের অপকর্মের দায় সংগঠন কখনোই নিবে না। এদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হোক।’

প্রসঙ্গত, শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সকালে স্বামী মফিজুর রহমান চৌধুরী সুমন, সাবিক্ষর খন্দকার (২৯), শেখ তায়্যিবাসহ (২২) আরও দুজন বিদেশে যাওয়ার প্রাক্কালে বিমানবন্দর এলাকা থেকে তাকে আটক করেছে র‌্যাব। শুরুতে পাপিয়া প্রথমে নিজের দাপুটে অবস্থানের পরিচয় দেন। তবে কোনো কিছুতে গুরুত্ব না দিয়ে পাপিয়ার কাছ থেকে র‌্যাব কর্মকর্তারা উদ্ধার করতে থাকেন অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য।

জানা গেছে, এই পাপিয়া হেন অপকর্ম নেই, যার সঙ্গে জড়িত নন। পাঁচ তারকা হোটেলে নারী ও মাদক ব্যবসাই তার আয়ের মূল উৎস। দেশের অভিজাত কিছু মানুষ ও বিদেশিরাই এর গ্রাহক। ইন্টারনেটে স্কট সার্ভিস খুলে বসে খদ্দেরদের কাছে তাদের চাহিদামতো সুন্দরী তরুণী পাঠাতেন। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে শিক্ষিত সুন্দরী তরুণীদের সংগ্রহ করতেন। একপর্যায়ে তাদেরকে ধনাঢ্য ব্যক্তিদের শয্যাসঙ্গী হতে বাধ্য করতেন পাপিয়া। এরই মধ্যে পাপিয়ার কাছ থেকে গোপন ক্যামেরায় ধারণকৃত অনেক ধর্ণঢ্য ও প্রভাবশালী ব্যক্তির অন্তরঙ্গ দৃশ্যের ভিডিও ক্লিপ উদ্ধার করেছেন র‌্যাব কর্মকর্তারা। গোপন ক্যামেরায় মেয়েদের ছবি ধারণ করে তাদের নিয়মিতভাবে ব্ল্যাকমেইল করতেন তিনি। পাপিয়ার কাছ থেকে উদ্ধারকৃত একটি ভিডিও ক্লিপে দেখা যায়- পাপিয়া বসে আছেন বাইজিবাড়ির সর্দারনির মতো। তার হাতে মোটা একটি বেতের লাঠি। তার কব্জায় থাকা মেয়েরা কথা না শুনলে পেটাতেন। পাপিয়া একাধিক অভিজাত হোটেলের রুম ভাড়া নিতেন নামে-বেনামে। সর্বশেষ শনিবার পর্যন্ত একটি হোটেলের প্রেসিডেনশিয়াল স্যুটে তার নামে পাওয়া গেছে। এই পাঁচ তারকা হোটেলে বিভিন্ন মেয়েকে পাপিয়া নিজেই নিয়ে যেতেন। তাদেরকে দিয়ে করাতেন অবৈধ দেহব্যবসা। এরই মধ্যে জিজ্ঞাসাবাদে সবকিছুই কবুল করেছেন পাপিয়া।

গত ১২ অক্টোবর থেকে চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে ৫৯ দিন প্রেসিডেনশিয়াল স্যুট ভাড়া ছিল পাপিয়ার নামে। ওই ৫৯ দিনে তিনি ৮১ লাখ ৪২ হাজার টাকা নগদ (ক্যাশ) পরিশোধ করেছেন। পাপিয়ার স্বামী সুমন চৌধুরী বেশির ভাগ সময় থাইল্যান্ডে অবস্থান করলেও গত থার্টিফার্স্ট নাইটে রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে অবস্থান করেন। ওই রাতে তার কক্ষেও চার-পাঁচ জন সুন্দরী নারী ছিল বলে গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য রয়েছে। পাপিয়ার সব কর্মকাণ্ডের অন্যতম অংশীদার তার স্বামী সুমন। একসময় নরসিংদী শহর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক ছিলেন সুমন। পরে ছিলেন নরসিংদীর প্রয়াত পৌর মেয়র লোকমানের বডিগার্ড।

র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল শাফি উল্লাহ বুলবুল জানান, তার বার্ষিক আয় ১৯ লাখ টাকা হলেও পাপিয়া গত তিন মাসে শুধু একটি পাঁচ তারকা হোটেলে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা বিল পরিশোধ করেছেন! এ ছাড়া তার নামে একটি হোটেলের প্রেসিডেন্ট স্যুট সব সময় বুকড থাকত। ওই হোটেলেই তার নিয়ন্ত্রণে ছিল সাতটি মেয়ে। গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে সাতটি পাসপোর্ট, নগদ ২ লাখ ১২ হাজার ২৭০ টাকা, ২৫ হাজার ৬০০ জাল টাকা, ১১ হাজার ৯১ ইউএস ডলার, বিভিন্ন দেশের মুদ্রাসহ বিপুল পরিমাণ জাল মুদ্রা জব্দ করা হয়।

সৌজন্যে : পূর্বপশ্চিম
সিলেটভিউ২৪ডটকম/২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০/জিএসি

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন