আজ শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ইং

৩ নেত্রীর আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন পাপিয়া

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০২-২৬ ২১:৩৭:৩৫

সিলেটভিউ ডেস্ক :: ‘টক অব দ্য টাউনে’ পরিণত হয়েছেন র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া জেলা যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক শামীমা নূর পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন। তারা কার হাত ধরে রাজনীতিতে খুঁটি গেড়েছিলেন তা নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের মাঝে চলছে দোষারোপের খেলা। এরই মধ্যে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।

যুব মহিলালীগের কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষস্থানীয় দুই নেত্রী এবং সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক এক সাংসদের আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন পাপিয়া। ওই তিনজনের মাধ্যমেই আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ হয় তাঁর। ১৫ দিনের রিমান্ডের প্রথম দিনের জিজ্ঞাসাবাদে পাপিয়া এসব তথ্য দিয়েছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।

রিমান্ডে যুবলীগ থেকে সদ্য বহিস্কৃত এই নেত্রী জানান, কেন্দ্রীয় যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আকতারসহ একাধিক কেন্দ্রীয় নেতার নাম ভাঙিয়ে চলতেন তিনি। গ্রেপ্তারের ঘটনায় তার ক্যারিয়ারের ক্ষতি হলেও এ নিয়ে কোনো অনুশোচনা নেই তার। হোটেলকেন্দ্রিক বিলাসী জীবন-যাপনের কথাও স্বীকার করেছেন পাপিয়া। বলেছেন, ছবি-ভিডিওর মাধ্যমে প্রতারণা করে অনেকের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা গতকাল সমকালকে এসব তথ্য জানান।

রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে মতি সুমন চৌধুরীকে তিন মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১৫ দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠিয়েছেন আদালত। এছাড়া তাদের সহযোগী সাব্বির খন্দকার ও শেখ তায়িব্যাকে এক মামলায় পাঁচ দিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়েছে। বিমানবন্দর থানা পুলিশ পাপিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।

পুলিশ-র‌্যাবের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, এক সময় পাপিয়া চক্রের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পেতেন না। গ্রেপ্তারের পর অনেকেই মুখ খুলতে শুরু করেছেন। কেউ কেউ বিমানবন্দর থানায় গিয়ে গতকাল পাপিয়ার মাধ্যমে নির্যাতিত হওয়ার কাহিনি বলছেন।

এদিকে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গতকাল রাজধানীর মহাখালীর সেতু ভবনে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের বলেছেন, পাপিয়াকে গ্রেপ্তার করতে এবং তদন্ত করে বিচারের আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাদের বলেন, দলের মধ্যে যাঁরা অপকর্ম করছেন, তাঁদের গ্রেপ্তার করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

এ ব্যাপারে যুব মহিলালীগের সভাপতি নাজমা আকতার বলেন, পাপিয়া প্রয়োজনে দু-একবার ফোন করেছে। জানতাম সে সমাজসেবা করে। তার ব্যবসা রয়েছে। এ ধরনের কাজে জড়িত, এটা জানা ছিল না।

তিনি আরও বলেন, টোকন নারী পাচারকারী। নরসিংদীতে ধরা পড়ার পর সে আমার পরিচয় দিয়েছিল। পরে এলাকার নেতারা তাকে ছাড়ানোর অনুরোধ করে। পাপিয়াকে বলি, তাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, পাপিয়ার দুষ্টচক্রে যারা জড়িত, তাদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। এ ধরনের কারও ব্যাপারে তথ্য পাওয়া গেলে তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে।

বিমানবন্দর থানার পরিদর্শক ও পাপিয়ার বিরুদ্ধে করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. কায়কোবাদ কাজী বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে পাপিয়ার অপরাধজগৎ সম্পর্কে চমকপ্রদ তথ্য বেরিয়ে আসছে। মূলত যুব মহিলা লীগের শীর্ষস্থানীয় দুই নেত্রী ও ঢাকার একজন সাবেক নারী সাংসদের আশ্রয়-প্রশ্রয় থেকে মাদক ব্যবসা, অনৈতিক কর্মকাণ্ড ও চাঁদাবাজি করতেন। এ ছাড়া চাকরি দেওয়ার কথা বলে কিংবা বিদেশে পাঠানোর নামে অনেকের কাছ থেকে তিনি বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

প্রসঙ্গত, পাপিয়া ও সুমনসহ চারজনকে শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। তারা দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করছিলেন। এ সময় তাদের কাছ থেকে সাতটি পাসপোর্ট, ২ লাখ ১২ হাজার নগদ টাকা এবং বিভিন্ন দেশের বিপুল পরিমাণ জাল মুদ্রা জব্দ করা হয়।

পরে র‌্যাব রোববার রাজধানীতে পাপিয়ার দুটি বাড়ি ও তার ভাড়া করা পাঁচতারকা হোটেলের প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুটে তল্লাশি চালিয়ে ৫৮ লাখ ৪১ হাজার নগদ টাকাসহ অন্যান্য সামগ্রী জব্দ করে।

এ ঘটনায় সোমবার পাপিয়া ও সুমনকে বিমানবন্দর ও শের-ই-বাংলানগর থানার তিন মামলায় ১৫ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করে ঢাকার দুই আদালত। সেই সাথে তাদের ব্যক্তিগত সহকারী সাব্বির খন্দকার ও শেখ তায়্যিবাকে এক মামলায় পাঁচ দিন করে রিমান্ড দেয়া হয়।

সৌজন্যে : পূর্বপশ্চিম
সিলেটভিউ২৪ডটকম/২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০/জিএসি

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন