Sylhet View 24 PRINT

আম্ফান ও একটি ঘোড়ার কান্না

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৫-২১ ০৪:১৯:৩৩

সিলেটভিউ ডেস্ক :: বুধবার রাত সাড়ে ১২টা। ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে বঙ্গোপসাগর তীব্র উত্তাল। চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে আছড়ে পড়ছে অন্তত ১২ ফুট উঁচু ঢেউ। তীব্রগতির বাতাসের সঙ্গে প্রবল বৃষ্টি। চারদিকেই ভয়ংকর চিত্র। সমুদ্রের তর্জ্জন-গর্জ্জনের সঙ্গে বৃষ্টি পাল্লা দিচ্ছে।

এরই মধ্যে সৈকতের একস্থানে দেখা গেল একটি ঘোড়া দাঁড়িয়ে। ঘোড়ার কাছে যেতেই দেখা গেল চোখ দিয়ে পানি ঝড়ছে। ঘোড়াটি কাঁদছে!

ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের এই দুর্যোগ মুহূর্তে ঘোড়াটিকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যায়নি মনিব। সাধারণ সময়ে সৈকতে আসা পর্যটকদের ঘোড়ার পিঠে সোয়ার করে টাকা আয় করে মনিব। কিন্তু দুর্যোগ সময়ে ঘোড়াটিকে নিরাপদ আশ্রয়ে নেওয়ার প্রয়োজন মনে করেনি মনিব। এমন এক অমানবিক মনিব জুটেছে ঘোড়ার!

সমুদ্র সৈকতে আগের রাতে গিয়ে দেখা গিয়েছিল অন্তত আট ফুট উঁচু হয়ে ঢেউ আছড়ে পড়তে। আর আজ রাতে আম্ফানের প্রভাবে উত্তাল সাগরে আছড়ে পড়ছে ১২ ফুট উঁচু ঢেউ। প্রবল বৃষ্টি আর তীব্র বাতাসে যেখানে কোনো মানুষের দাঁড়িয়ে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়েছে, সেখানে সৈকতে শুধুমাত্র একটি একা ঘোড়াই ছিল কান্নারত।

ঘোড়াটি দেখতে হাড্ডিসার। বোঝা যায়, দীর্ঘদিন সৈকত বন্ধ থাকায় ঘোড়ার মালিক এই ঘোড়াকে দিয়ে আয় করতে পারছিলেন না। তাই খাবারও দিচ্ছিলেন না। ক্ষুধার্ত ঘোড়ার সামনে কোনো খাবার দেখা যায়নি। এমন দুর্যোগ সময়ে আকাশের কান্নার সঙ্গে পাল্লা দিয়েই যেন পানি পড়ছিল ঘোড়ার চোখ থেকে।

যুক্তরাজ্যের সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল মনোবিজ্ঞানীর গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, পোষ মানানো হলে ঘোড়া মানব আচরণ বুঝে। মানুষের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর কৌশলও আয়ত্ব করতে পারে। গবেষণাকরা দাবি করেছিলেন, কোনো প্রাণী যখন মানুষের অনুভূতিসহ অন্যান্য সংকেত শনাক্ত করতে পারে, এর বৈজ্ঞানিক ও প্রায়োগিক তাৎপর্য থাকে, বিশেষ করে গৃহপালিত প্রাণীর ক্ষেত্রে।

এই ঘোড়াও তার মনিবের সঙ্গে খাপ খাইয়ে বছরের পর বছর ধরে পতেঙ্গা সৈকতে আসা পর্যটকদের সাময়িক বিনোদন দিয়েছে নিজের পিঠে তুলে পর্যটকসহ সওয়ার হয়ে। ঘোড়াটি মনিবের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলতে শিখলেও মনিবের কাছে মানবিক আচরণ পায়নি।

আবার করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রাদুর্ভাবে নগরীর অনেক বেওয়ারিশ অভুক্ত কুকুরকে নগরীর মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনকে খাবার দিয়েছেন। সঙ্গে অন্য একাধিক ব্যক্তি ও সংগঠনও বেওয়ারিশ কুকুরকে খাবার দিয়েছে। ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের আগেই অনেক মানুষ ও গবাদী পশু নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধান পেয়েছে।

প্রশাসন ও গবাদী পশুর মালিকেরা নিজেদের পশুগুলোকে নিরাপদে নিয়েছে। কিন্তু পতেঙ্গার নির্জন সৈকতে একা দাঁড়িয়ে থাকা ঘোড়াটি পায়নি আশ্রয় ও খাবার। তাইতো করোনাকালের নির্মমতা ও ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের তাণ্ডবের শিকার ঘোড়ার চোখে এখন ঝড়ছে অঝোর কান্না।

সৌজন্যে : কালের কণ্ঠ

সিলেটভিউ২৪ডটকম/২১ মে ২০২০/ডেস্ক/মিআচৌ

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.