আজ শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ইং

অন্যের জানমাল রক্ষায় জীবন দিলেন ঘূর্ণিঝড় যোদ্ধা শাহ আলম

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৫-২২ ০৩:২৬:৫৫

সিলেটভিউ ডেস্ক :: অন্যের জীবন রক্ষায় কাজ করতে গিয়ে মারা গেলেন পটুয়াখালীর কলাপাড়ার লোন্দা গ্রামের ঘূর্ণিঝড় যোদ্ধা সৈয়দ শাহ আলম। সরকার ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি পরিচালিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সেবামূলক প্রতিষ্ঠান ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) টিম লিডার তিনি। ঝড়ের প্রভাবে মানুষ যখন নিরাপদে থেকে নিজের ও পরিবারের জীবন রক্ষায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে, ঠিক তখনই জনসাধারণের জীবন ও সম্পদ রক্ষায় সচেতন করতে কাজ করেন স্বেচ্ছাসেবীরা। তারই একজন সৈয়দ শাহ আলম। পেশায় কৃষিজীবী শাহ আলম তিন যুগ ধরে ঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাসে জীবন বাঁচাতে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন। ঝড়-বন্যা-জলোচ্ছ্বাস এলেই অন্যের জানমাল রক্ষায় নিজের জীবন তুচ্ছ মনে করে নিজেকে বিলিয়ে দেন মানবসেবায়। সেই মানুষটি সুপার সাইক্লোন আম্ফানের থাবা থেকে সাধারণ মানুষকে বাঁচাতে কাজ করছিলেন। তবে কোনো ঝড় বা সুপার সাইক্লোন আম্ফান তার প্রাণ নিতে পারেনি। সেই তিনি নৌকাডুবিতে হলেন সলিলসমাধি! আম্ফানের প্রভাবে বুধবার সকালে মোংলা-পায়রা সমুদ্রবন্দর ও সংলগ্ন জেলাগুলোকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়। এ খবর পেয়েই সকাল ৯টায় নিজের স্কুলপড়ুয়া নবম শ্রেণির ছেলে সৈয়দ সিয়াম ও দুজন স্বেচ্ছাসেবীকে নিয়ে দুর্গম এলাকার মানুষকে সাহায্য করতে নেমে পড়েন শাহ আলম। ধানখালী ইউনিয়নের ছৈলাবুনিয়া গ্রামে তারা প্রচারকাজ চালান। এরপর পাশের লোন্দা নদীর ওপারে যান। সেখানে প্রচার ও অপসারণ কার্যক্রম পরিচালনা করতে যাওয়ার পথে হাফেজ প্যাদার বদ্ধ খালে খেয়ানৌকায় পার হওয়ার সময় ঝড়ের কবলে পড়েন। এ সময় নৌকা উল্টে ডুবে যান শাহ আলম, ছেলে সিয়াম ও সঙ্গী দুই সেচ্ছাসেবী। তারা সাঁতরে তীরে উঠলেও শাহ আলমের পায়ে গামবুট ও গায়ে জ্যাকেট থাকায় পানিতে তলিয়ে যান। কচুরিপানায় ভরা বদ্ধ খালে লুকিয়ে যায় তার দেহ।
প্রতিবেশী সাইদুল মীর বলেন, সৈয়দ শাহ আলম মানুষের জন্য কাজ করতে সব সময়ই উৎসাহবোধ করতেন। এ রকম মানুষ এ সমাজে বিরল। তার মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

সিপিপি পটুয়াখালীর সহকারী পরিচালক মো. আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘১৯৮৪ সাল থেকে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন সৈয়দ শাহ আলম। ইউনিয়নের একটি ওয়ার্ডের ইউনিট টিম লিডার হলেও তার সঙ্গে খুব কাছ থেকেই পরিচয় ছিল আমার। কারণ তিনি খুবই পরোপকারী একজন মানুষ। তাকে হারিয়ে আমরা একজন ঘূর্ণিঝড় যোদ্ধাকে হারালাম। এ ক্ষতি অপূরণীয়।

সিপিপির পক্ষ থেকে তার দাফন-কাফনের যাবতীয় খরচ বহন করা হয়েছে। এ ছাড়া তাৎক্ষণিকভাবে ২৫ হাজার টাকার চেক দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয়, সিপিপি ও ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশনের পক্ষ থেকে আর্থিক সাহায্য ও তার ছেলের যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরির ব্যবস্থা করা হবে।’ সরকারিভাবে আলাদা সহযোগিতা করা হবে বলেও জানান তিনি। কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসনাত মো. শহীদুল হক বলেন, ‘বিনা বেতনে নিজেকে মানবসেবায় বিলিয়ে দিতে পারেন তার জ্বলন্ত উদাহরণ সৈয়দ শাহ আলম। তার মৃত্যুর খবর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ থেকে শুরু করে আমেরিকা পর্যন্ত চলে গেছে। সিপিপি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলছে। তার পরিবারের জন্য যা যা করার তা অবশ্যই করব।


সৌজন্যে : বিডি প্রতিদিন

সিলেটভিউ২৪ডটকম/২২ মে ২০২০/ডেস্ক/মিআচৌ


শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন