Sylhet View 24 PRINT

৩০০ টাকা কেজিতেও মিলবে না ব্রয়লার মুরগি

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৫-২২ ২১:৫৩:১১

সিলেটভিউ ডেস্ক :: গত ২২ এপ্রিল ফার্মে এক কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম ছিল ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। আজ ২২ মে এক মাসের ব্যবধানে তার দাম ১৯০ টাকা। আর কিছুদিন পর হয়তো ৩০০ টাকা কেজিতেও মিলবে না ব্রয়লার মুরগি। কারণ খামারে এখন আর মুরগি নেই। খামারিরা লস খেয়ে ঘরে বসে গেছেন। ব্রয়লার মুরগির খামারগুলো খা খা করছে। করোনার পর আর মুরগি না তুলে একদম বেকার বসে আছেন খামারিরা।

এদিকে বাচ্চা উৎপাদনকারীরা জানান, মুরগির বাচ্চাও বেচাকেনা তেমন নেই। যাওবা হচ্ছে প্রতি পিস বাচ্চায় ১০/১২ টাকা লস হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতি কোন দিকে যায় চাষিরা সেদিকে তাকিয়ে আছেন। তাদের ভয় মুরগি তুললে আবার যদি লস হয় তখন সামাল দিতে পারবেন না। এদিকে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী তাদের দেখবেন বলে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মাঠ পর্যায়ে তার কোনো নিদর্শন নেই।

এক মাস আগে দেখা গেছে, ৩৫ টাকার মুরগির বাচ্চার দাম ছিল ১ টাকা, তাও কেউ খামারে তুলছে না! ফ্রি মুরগির বাচ্চা দিতে চাইলেও কোনো খামারি নতুন করে মুরগির বাচ্চা নেয়নি। লাখ লাখ বাচ্চা প্রতিদিন মেরে ফেলতে হয়েছে খামারিদের। কারণ করোনার শুরুতে গোটা দেশ যখন অচল হয়ে যায় তখন মুরগি, বাচ্চা ও ডিম কোনো কিছুই বেচাকেনা হয়নি। লস খেয়ে হাজার হাজার খামারি পথে বসে গেছে। সরকার পোল্ট্রি খাতে প্রণোদনা দিয়েছে। তারা লোন নিয়ে আবার ব্যবসা শুরু করতে পারবেন। কিন্তু দেশের বিভিন্ন প্রান্তে খামারিদের কাছে খবর নিয়ে জানা গেছে, সরকারের পক্ষ থেকে তাদের কাছে কোনো লোক যায়নি। প্রণোদনার টাকাটা তারা কিভাবে পাবেন সেটাও তারা বলতে পারেন না।

গাজীপুর জেলার কুদাবো এলাকার তুষার পোল্ট্রি খামারের মালিক সেলিনা পারভীন গণমাধ্যমরে সঙ্গে আলাপকালে বলেন, আমার এখন আর কোনো ব্যবসা নেই। খামার খালি পড়ে আছে। ব্রয়লার এবং লেয়ার কোনো সেডেই মুরগি নেই। শুনলাম সরকার নাকি আমাদের লোন দেবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে কিছুই জানি না। করোনার শুরুতে ১০ লাখ টাকা লোকসান দিয়ে ডিমপাড়া মুরগিগুলো বিক্রি করে দিয়েছি। ডিমের দাম ক্রমান্বয়ে কমতে থাকা এবং খাবারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য ডিম পাড়া মুরগি বিক্রি করেছি। তিন হাজার ব্রয়লার মুরগি ছিল। কেজি প্রতি খরচ হয়েছে ১১০ টাকা। আর বিক্রি করেছি ৪০/৪৫ টাকা। এখানেও কয়েক লাখ টাকা লস হয়েছে।

তিনি বলেন, এখন আমরা ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি ব্রয়লার মুরগি কিনে খাচ্ছি। এ ব্যাচটা ফুরিয়ে গেলে ৩০০ টাকা কেজিতেও মুরগি কিনতে পাওয়া যাবে না বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, আমাদের আশেপাশে যতো ফার্ম ছিল সব বন্ধ হয়ে গেছে।

যশোরে সবচেয়ে বেশি বাচ্চা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান আফিল এগ্রো লিমিটেড এর পরিচালক মাহবুব আলম লাবলু গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের এখানে ব্রয়লার মুরগি হোল সেল হচ্ছে ১৪০-১৪৫ টাকা কেজি। আগে আমরা প্রতি সপ্তাহে ৩ লাখ ৫০ হাজার কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি করতাম। এখন সপ্তাহে শুধু ৫০ হাজার কেজি মুরগি বিক্রি করতে পারছি। ১০টি সেডের মধ্যে ৮টি সেডের মুরগি ফুরিয়ে গেছে। এখন মাত্র ২টি সেডে মুরগি আছে। এই দুই সেডের মুরগি ফুরিয়ে গেলে আবার মুরগি আসতে দেরি হবে।

তিনি বলেন, শুধু আমাদের সেডে নয়। হাজার হাজার খামারির সেড ফাকা পড়ে আছে। আমরা এখনো প্রতিপিস মুরগির বাচ্চা ১০/১২ টাকা লোকসানে বিক্রি করছি। তাও নেওয়ার লোক পাচ্ছি না। খামারিরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। করোনার পরিস্থিতি ভালো না হওয়া পর্যন্ত খামারিরা মুরগি তুলতে চাচ্ছেন না। ফলে আগামী কিছুদিনের মধ্যে অনেক দাম দিয়েও হয়তো ব্রয়লার মুরগি পাওয়া কষ্টকর হবে।

সরকার পোল্ট্রি ফার্মের জন্য প্রণোদনা দিচ্ছে এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মন্ত্রী বলেছে, এটা শুনেছি, কিন্তু এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো কার্যক্রম নজরে পড়েনি।

টাঙ্গাইলের পোল্ট্রি খামারি ফরহাদ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, এখন আমার খামারে কোনো মুরগি নেই। যাদের খামারে আছে তারা প্রতি কেজি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা বিক্রি করছে। লকডাউনের পর এক কেজি ব্রয়লার মুরগির মাংস উৎপাদনে খরচ হয় ১১০ টাকা। তখন আমরা প্রতি কেজি ৪০-৪৫ টাকায় বিক্রি করেছি। এভাবে লস খেয়ে এখন বাচ্চা উঠানো বন্ধ করে দিয়েছি। এখন আর বাচ্চা উঠাচ্ছি না। পরিস্থিতি দেখে-শুনে তারপর বাচ্চা উঠাবো। এখন অধিকাংশ খামারে মুরগি নেই। অনেক জায়গায় এমন সময় আসবে যে ১৯০ নয়, তার চেয়ে বেশি টাকা দিলেও ব্রয়লার মুরগি পাওয়া যাবে না।

এক প্রশ্নের জবাবে ফরহাদ বলেন, প্রণোদনার কথা শুনেছি। কিন্তু এখনো খামারিদের কাছে এ বিষয়ে কোনো খবর আসেনি। প্রাণিসম্পদ অফিস থেকেও কেউ যোগাযোগ করেনি।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের উপ-পরিচালক (প্রজনন) একেএম আরিফুল ইসলাম এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত পোল্ট্রি খামারিদের তালিকা করা হচ্ছে। আমাদের তালিকা তৈরি করতে বলা হয়েছে, আমরা তালিকা করছি। প্রণোদনা কে কীভাবে পাবে সে বিষয়ে আমাদের কাছে এখনো স্পষ্ট কোনো নির্দেশনা আসেনি। তালিকা হয়ে গেলে সেগুলো মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

সৌজন্যে :: জাগোনিউজ২৪
সিলেটভিউ২৪ডটকম/২২ মে ২০২০/ জিএসি

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.