আজ শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ইং

করোনা : কেন মা কোলে নেয় না, আদর করে না ?

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৫-২৫ ২০:১২:৪৩

সিলেটভিউ ডেস্ক :: ছোট্ট শিশু অথৈ চাকমা। বয়স প্রায় চারের কাছাকাছি। ঘরের এক কোণে খেলনা হাড়ি-পাতিল আর পুতুল দিয়ে খেলছে। আরেক ঘর থেকে ভিডিও কলের মাধ্যমে মেয়েকে দেখছেন মা।

মাকে ধরা যায় না, ছোঁয়া যায় না, কাছে গিয়ে গায়ের গন্ধ নেওয়া যায় না। অভিমানে, কষ্টে মুখ ফোলায় অথৈ।

আব্দার করে, যখন খেলবে মা যেন ভিডিও কলে দেখে আর কথা বলে।

কিন্তু শিশুর মন কি আর সবসময় খেলার মাঝে পড়ে থাকে ? তখন ভিডিও কলও তার কাছে খেলনা মনে হয়। তাই সে তার মায়ের ঘরের দরজায় গিয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে মায়ের দিকে। কেঁদে কেঁদে বলে, কেন মা তাকে কোলে নেয় না ? কেন আদর করে না? কবে মাকে জড়িয়ে ধরব?

করোনাভাইরাস কী, তাই তো জানে না অথৈ।

গত ১৯ মে রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালের নার্স, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, অফিস সহায়কসহসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে ১৭ জনের নমুনা পরীক্ষায় করোনা  শনাক্ত হয়। তাদের মধ্যে অথৈয়ের মা রুমি চাকমা (৩৪) ও রয়েছেন। যিনি হাসপাতালের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট।

তিনি বলেন, গত ১৪ মে হাসপাতালের করোনা পজিটিভ রোগীর সংস্পর্শে আসায় তাদের অনেক জনকে নমুনা দিতে হয়। পাঁচ দিন পর রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতাল থেকে মোবাইল বার্তায় জানিয়ে দেওয়া হয় তার করোনা পজিটিভ।

তিনি বলেন, প্রতিদিন স্বাস্থ্যবিধি মেনে দিন শুরু করছেন। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কিছু ওষুধ খাচ্ছেন। এক সপ্তাহ আগে কিছুটা গলা ব্যথা ছিল। এখন তেমন কোনও সমস্যা নেই।

তিনি বলেন, ‘খবরটি শোনার পর আমি ভেঙে পড়িনি। কারণ আমি এজন্য প্রস্তুত ছিলাম। আইসোলেশনে থাকার জন্য আমি, মেয়ে ও স্বামীর কাছ থেকে ঘরের একটি রুমে আলাদা হয়ে যাই। মেয়ের সাথে আলাদা হওয়ার পর মেয়ে সারাক্ষণ কেঁদে চলেছে তার বাবা কিছুতেই বোঝাতে পারছে না। মেয়েটি সবসময় আমার কোলে আসতে চাইছে, আমারও মন কাঁদছে। তবুও মনকে সান্তনা দিচ্ছি।’

তিনি জানান প্রযুক্তির কল্যাণে তবুও মেয়ের কাছাকাছি থাকছেন। ‘এক রুম থেকে আরেক রুমে ভিডিও কলের মাধ্যমে ভালোবাসার সম্পর্কটা রয়েছে অটুট। কিন্তু তবুও  যেন কী একটা অপূর্ণতা থেকে যায়! ইচ্ছা করলেও মেয়েকে ছুঁয়ে দেখতে পারছি না।’

সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, গত ৬ মে জেলায় প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর আজ পর্যন্ত রাঙামাটিতে ৫৫ জন আক্রান্ত হয়েছেন। আজ (২৫ মে) পর্যন্ত জেলা থেকে ৯২৬টি নমুনা পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে ৭৭০টির প্রতিবেদন এসেছে। এ পর্যন্ত জেলায় সুস্থ হয়েছেন ৫ জন। আইসোলেশনে আছেন ১১ জন।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/২৫ মে ২০২০/ডেস্ক/মিআচৌ

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন