আজ বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ইং

করোনা রোগীদের আটকাচ্ছে না শাহজালাল বিমানবন্দর!

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৭-০২ ১২:২৫:৫৯

সিলেটভিউ ডেস্ক :: বাংলাদেশ থেকে আন্তর্জাতিক গন্তব্যে আবারও বিমান চলাচল শুরু হওয়ায় অনেকে বিভিন্ন ফ্লাইটে বিদেশে যাচ্ছেন। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অন্য দেশের বিমানবন্দরে ধরা পড়ছেন তারা, যাদের অনেকেই কোভিড-১৯ রোগী! অথচ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের স্ক্রিনিং ঠিকই পেরিয়ে গেছেন এসব যাত্রী। এ কারণে সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
সংশ্লিষ্ট অনেকের মন্তব্য, করোনা আক্রান্ত যাত্রীদের এভাবে ছেড়ে দেওয়া অত্যন্ত বিপজ্জনক। ভবিষ্যতে এ কারণে বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।

করোনাভাইরাসের কারণে পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশই বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক রুট বন্ধ করে দিয়েছিল। বাংলাদেশ গত ৩১ মার্চ থেকে আকাশপথে বিদেশে যাতায়াত সাময়িকভাবে স্থগিত ঘোষণা করে। ধারণা করা হচ্ছে, বিমান ভ্রমণ আর আগের মতো ‘স্বাভাবিক’ থাকবে না। যাত্রী, বিমানবন্দর ও ফ্লাইটসহ সবক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে। এর মধ্যে বিমানবন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি করাকে অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু এদিক দিয়ে বাংলাদেশের চিত্রটা কতটা নাজুক তা অন্য দেশের বিমানবন্দরে করোনা রোগী ধরা পড়ার ঘটনাতেই বোঝা যায়।

ইতালিতে গত মার্চে করোনাভাইরাসের প্রকোপ উচ্চপর্যায়ে থাকার সময় সেখান থেকে অনেক বাংলাদেশি ফেরত এসেছিল এবং তাদের কোয়ারেন্টিন ঠিকমতো নিশ্চিত না হওয়ায় জীবাণু ছড়িয়ে পড়েছে বলে ধারণা রয়েছে। জুন মাস শেষে দেখা যাচ্ছে, ইতালিতে কোভিড-১৯ রোগের প্রকোপ অত্যন্ত কম, কিন্তু বাংলাদেশে বেশি। এমন অবস্থায় অনেক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ইতালির নাগরিক বা রেসিডেন্ট পারমিটধারী ইউরোপের দেশটিতে ফেরত যাচ্ছে। কিন্তু বিমানবন্দরে ধরা পড়ছে তারা করোনায় আক্রান্ত।

সম্প্রতি করোনা আক্রান্ত একজন রোমের বাংলাদেশ দূতাবাসে সেবার জন্য গিয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে তা জানাজানি হলে ওইদিন অন্য যারা সেবার জন্য এসেছিল তাদের হোম কোয়ারেন্টিনে যাওয়ার নির্দেশ দেয় ইতালি সরকার।

জানা যায়, গত এক মাসে প্রায় ৮৫০ জন বাংলাদেশি বিশেষ ফ্লাইটে ইতালি গেছেন। তাদের মধ্যে অন্তত ২০ জন করোনায় আক্রান্ত। অথচ শাহজালাল বিমানবন্দরের স্ক্রিনিংয়ে ধরা পড়লো না তাদের রোগ। অথচ বিমানবন্দরের সক্ষমতার ওপর বিদেশে বাংলাদেশের ফ্লাইট চলাচল করবে কিনা এবং অন্যান্য বিমানবন্দরের দুয়ার খোলা থাকবে কিনা তা নির্ভর করছে।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরপররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘করোনা রোগী পার পেয়ে যাওয়ার ঘটনা খুব বিপজ্জনক। কারণ একই ঘটনা দক্ষিণ কোরিয়ায় হওয়ার কারণে তাদের ভিসা দেওয়া বন্ধ ও ফ্লাইট স্থগিত রয়েছে।’

ইতালির প্রতিক্রিয়া কী জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তার উত্তর, ‘তারা আমাদের বিমানবন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির ওপর জোর দিতে বলেছেন। আমরা ইতোমধ্যে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি অবহিত করেছি।’

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র ফেলো মোহাম্মাদ শহীদুল হকের মন্তব্য, বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপনা অতীতের মতো থাকলে বড় ধরনের ঝুঁকির মধ্যে পড়বে বাংলাদেশ। তিনি উল্লেখ করেন, প্রথাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ এখন প্রতিটি বিমানবন্দরের জন্য অবশ্য পালনীয় কর্তব্য।

কয়েক বছর আগের একটি ঘটনা উদাহরণ হিসেবে টেনে আনেন সাবেক পররাষ্ট্র সচিব। তখন শাহজালাল বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ত্রুটি থাকায় ইউরোপে বাংলাদেশের বিমান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। বাংলাদেশের বিমানবন্দরে স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আন্তর্জাতিক মানের না হলে অন্য কোনও বিমানবন্দর আর খোলা থাকবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন তিনি।

গোটা বিষয়টি একটি সমন্বিত প্রচেষ্টা হিসেবে অভিহিত করে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সিনিয়র ফেলোর পরামর্শ, ‘প্রথমে আমাদের মনোভাবে পরিবর্তন দরকার। বিমানবন্দরের স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা যে জরুরি বিষয় তা অনুধাবন করতে হবে সবাইকে। বড় ধরনের ধাক্কা আসার পর ব্যবস্থা গ্রহণের মানসিকতা ভুলে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভাবলে দেশের জন্য মঙ্গল।’


সিলেটভিউ২৪ডটকম / ২ জুলাই, ২০২০ / বাংলা ট্রিবিউন / ডালিম

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন