Sylhet View 24 PRINT

পথের কুকুর-বিড়ালের সেবার নামেও চাঁদাবাজি!

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৭-০৫ ১৬:১২:০৫

সিলেটভিউ ডেস্ক :: পথের কুকুর-বিড়ালের সেবার নামে চাঁদাবাজিতে মেতে উঠেছেন নিজেকে ‌'আদি গুরু' পরিচয় দেওয়া নাঈম ইবনে ইসলাম নামের এক ব্যক্তি। পথপ্রাণির সেবার নামে দেশ-বিদেশের পশুপ্রেমি সংগঠন ও মানুষের কাছ থেকে অনুদান নিয়ে তা আত্মসাৎ করে গড়ে তুলেছেন বিত্ত-বৈভব। পাশাপাশি সেবার নামে রাস্তা থেকে কুকুর-বিড়াল ধরে নিয়ে আটকে রেখে সেগুলোকে অনাহারে-বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। কিছু সমমনা ব্যক্তির সহযোগিতায় নিজেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় পশুপ্রেমী হিসেবে পরিচিত করে তোলা এই নাঈম ইবনে ইসলামের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে পশুপ্রেমি সংগঠনগুলো। এমনকি ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সংগঠনগুলো আইনের দ্বারস্থ হয়েছে।

পথপ্রাণিদের নিয়ে কাজ করা সংগঠন পিপল ফর এনিমেল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন ও কেয়ার ফর পজ দীর্ঘদিন ধরে নাইম ইবনে ইসলামের কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করে পেয়েছে অমানবিক চিত্র। সংগঠন দুটি জানায়, নাঈম ইবনে ইসলাম গত তিন বছর ধরে ছদ্মনাম “আদি গুরু” ব্যবহার করে বাংলাদেশের প্রাণিকল্যাণের ক্ষেত্রে বিচরণ করছেন। এই সময় তিনি রাস্তার সুস্থ-অসুস্থ কুকুর-বিড়াল উদ্ধার করার নামে মূলত বাসায় ফেলে রাখছেন। কিন্তু ফেসবুকে বিভিন্ন প্রাণিপ্রেমী গ্রুপে পোস্ট দিয়ে নিজেকে প্রাণি উদ্ধারকারী এবং প্রাণিপ্রেমী হিসেবে পরিচিত করেছেন। ২০১৮ সালে রাজধানীর হাজারীবাগ থানায় তার বিরুদ্ধে মৌখিক অভিযোগ করেন ইসরাত জাহান এবং কিছু প্রাণী অধিকারকর্মী। একজন পুলিশ সদস্য তার জিগাতলার ফ্ল্যাটে গিয়ে ঘটনার সত্যতা পান। ভবিষ্যতে শুধরাবে এই মর্মে ক্ষমা পেলেও বর্তমানে জিগাতলা থেকে পালিয়ে রায়েরবাজারের বারুইখালি এলাকায় একটি জমি ভাড়া করে তার অবৈধ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। এরই মাঝে প্রায় শতাধিক কুকুর-বিড়াল তুলে নিয়ে মানবেতরভাবে আটকে রাখেন। কিছুদিন পর পর এসব প্রাণির ওষুধ, খাবার, ইত্যাদি লাগবে বলে ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে মোটা অঙ্কের অনুদান সংগ্রহ করছেন। স্বল্প খরচে কোন রকম ছাপড়া ঘর তুলে বিড়াল-কুকুর একসাথে রেখে এটাকে শেল্টার হিসেবে প্রচার করছেন। অসুস্থ-সুস্থ প্রাণিদের পঁচা-বাসি ছত্রাক পড়া রুটি-কেক খেতে দেন। নতুন টিন কেনার জন্য টাকা তুলেও সেগুলো পরিবর্তন করেননি। খাবারের জন্য ফান্ড তুলেও প্রাণিদের খাবার দেওয়া হয় না। সেখানে নেই কোন পশু চিকিৎসক। নিজেকে প্রাণিচিকিৎসক হিসেবে প্রমাণ দিতে নিজেই ভুল চিকিৎসা প্রয়োগ করে পরীক্ষা চালান। বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিজেকে ভেট/প্যারাভেট নাম দিয়ে প্রাণিদের চিকিৎসা দিয়ে অর্থ আদায় করেন। নীলা হাবিবা নামের একজন প্রাণিপ্রেমীর কাছ থেকে কুকুর-বিড়ালের জন্য প্রতি মাসে অনুদান হিসেবে পাওয়া বিদেশি খাবার প্রাণিগুলোকে না খাইয়ে বাইরে বিক্রি করে দেন।

তার সঙ্গে নারী স্বেচ্ছাসেবীরা কাজ করতে গেলে তাদেরকে শারীরিকভাবে হয়রানি করারও অভিযোগ করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুইজন নারী স্বেচ্ছাসেবী। এছাড়াও একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থী তার শেল্টারে উদ্ধার করা চারটি কুকুর রাখার পর থেকে শুরু হয় মেসেঞ্জারে উত্যক্ত করা ও অশ্লীল ভয়েস রেকর্ড পাঠানো। জায়গার মালিক নাসিমা আক্তার গত ৭ জুন তাকে জায়গা ছাড়ার নোটিশ দিলে ১১ জুন রাতেই তিনি একটি ফেসবুক লাইভ করে নাহার চাকলাদার এবং হাবীব আহমেদ নামে দুই ব্যক্তির কাছে প্রাণীদের ওই শেল্টার ছেড়ে দিয়ে পালিয়ে যান। এরপর থেকে এই দুই ব্যক্তি শতাধিক প্রাণির দায়িত্ব নিতে অপারগ হন এবং প্রাণিকল্যাণ সংগঠনগুলোর সহায়তা চান। মানবেতর অবস্থায় ফেলে যাওয়া কুকুর-বিড়ালকে বাঁচাতে পিপল ফর এনিমেল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন এবং কেয়ার ফর পজসহ বেশকিছু প্রাণিপ্রেমী সংগঠন এগিয়ে যায়। গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি কুকুর-বিড়াল মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। এদিকে পলাতক নাঈম ইবনে ইসলাম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় থাকেন। এ সময় তিনি তার কিছু ফেসবুক ফলোয়ার নিয়ে সাইবার জগতে নোংরা খেলায় মেতে ওঠেন। প্রাণিগুলোর সাহায্যে এগিয়ে যাওয়া সংগঠন ও স্বেচ্ছাসেবীদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার এবং শেল্টার/ জমি দখলের অভিযোগ তোলেন, যদিও জমির মালিক তিনি নন। এছাড়া শেল্টারে শতাধিক অসুস্থ কুকুর-বিড়াল ছাড়া দখল করার মত কিছুই নেই। এ সময় পলাতক নাঈম ফেসবুকে বিভিন্ন লাইভে প্রচার করতে থাকেন, তিনি সংগঠনগুলোর চাপ, ছাত্রলীগ, যুবলীগের হুমকি এবং পুলিশের ভয়ে লুকিয়ে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তির কাছে অনুনয় বিনয় করে তার অপরাধ ধামাচাপা দেবার চেষ্টা করতে থাকেন। এরপর গত ৪ জুলাই তিনি আবার অবৈধ শেল্টারে ফিরে আসেন।

সংগঠন দুটি'র পক্ষ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আদি গুরু নামধারী নাঈম ইবনে ইসলামের এসব কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের প্রচলিত বিভিন্ন আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। প্রাণিদের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ প্রাণিকল্যাণ আইন-২০১৯ মোতাবেক শাস্তিযোগ্য অপরাধ। একই সাথে নিবন্ধিত ভেট না হয়ে অথবা সাধারণ ব্যক্তি হিসেবে ভেটেরিনারি চিকিৎসা প্রদান করা বাংলাদেশ ভেটেরিনারি কাউন্সিল আইন-২০১৯ অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সাধারণ মানুষের অনুভূতির সুযোগ নিয়ে নিবন্ধন বা লাইসেন্স ছাড়া প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে প্রতারণা করে অর্থ সংগ্রহ করা বাংলাদেশ দণ্ডবিধি-১৮৬০ অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এছাড়াও জঘন্য অপরাধ হচ্ছে নারীদের সাথে অশালীন ও যৌন হয়রানিমূলক আচরণ করা। নাঈম ইবনে ইসলামের এসব অবৈধ ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে সমাজের কয়েকজন সচেতন নাগরিক তার বিরুদ্ধে গত ১১ জুন হাজারীবাগ থানা এবং ১৫ জুন রমনা মডেল থানায় দুইটি সাধারণ ডায়েরি করেন। এছাড়াও নিয়ম অনুযায়ী উক্ত এলাকার থানা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করা হলে তিনি সরেজমিনে অবৈধ শেল্টার পরিদর্শন করেন।  হাজারীবাগ থানায় প্রাণির প্রতি নিষ্ঠুরতাসহ নারী স্বেচ্ছাসেবীকে যৌন হয়রানি এবং রমনা মডেল থানায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একজন নারী স্বেচ্ছাসেবীকে অশ্লীল ভয়েস রেকর্ড পাঠানো হয়েছে এই মর্মে সাধারণ ডায়েরি লেখা হয়।

এ ব্যাপারে পিপল ফর এনিমেল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান স্থপতি রাকিবুল হক এমিল  বলেন, এদেশে প্রাণিকল্যাণের প্রাতিষ্ঠানিক ধারণা একেবারেই নবীন পর্যায়ে রয়েছে। প্রতিবেশী প্রাণিকূল নিয়ে কাজের ক্ষেত্র এবং বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে ধরে রাখতে হলে যে কোন ধরণের অবৈধ ও প্রতারণামূলক কার্যক্রম বন্ধ করতে সবাইকে সতর্ক ভূমিকা নিতে হবে। একই সাথে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরকে নতুন প্রাণিকল্যাণ আইন-২০১৯  প্রয়োগের ক্ষেত্রে সুদৃঢ় অবস্থান নিতে হবে। এই ধরণের অবৈধ কার্যক্রমকে প্রশ্রয় না দিয়ে মানসম্মতভাবে প্রাণিকল্যাণ কাজকে এগিয়ে নিতে সচেতন প্রাণিপ্রেমীদের ভূমিকাও অনস্বীকার্য।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/৫ জুলাই ২০২০/বিডিপ্রতিদিন/মিআচৌ

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.