আজ শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ইং

মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার আসামি সুনামগঞ্জের মনিরের মহড়া!

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৮-০৫ ১৬:৫৯:৪৭

সিলেট ভিউ ডেস্ক: একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার আসামি সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের বাসিন্দা জোবায়ের মনির জামিনের শর্ত ভঙ্গ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে তার জামিন বাতিল চেয়ে আবেদন জানিয়েছেন প্রসিকিউশন।

বুধবার (৫ আগস্ট) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জামিন বাতিলের আবেদন করা হয়েছে বলে জানান প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম।

জেয়াদ আল মালুম বলেন, ‘আসামি জোবায়ের মনিরকে ঢাকার বাসায় থাকার শর্তে জামিন দিয়েছিলেন ট্রাইব্যুনাল। কিন্তু সে শর্ত তিনি ভঙ্গ করে নিজ এলাকায় গিয়ে দলবল নিয়ে মহড়া দিচ্ছেন। আমাদের সাক্ষীদের ভয় ভীতি দেখাচ্ছেন। এ কারণে তার জামিন বাতিল চাওয়া হয়েছে।’

এখন ট্রাইব্যুনাল থেকে দিন নির্ধারণ করা হলে আবেদনটির ওপরে শুনানি হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

এর আগে ২০১৬ সালের মার্চ মাসে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে একটি লিখিত অভিযোগ দেন পেরুয়া গ্রামের বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা রজনী দাস। এরপর ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা এই গণহত্যার বিষয়ে খোঁজখবর নিতে শুরু করে। একপর্যায়ে এই গণহত্যায় যুক্ত থাকা ১১ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

এরপর ২০১৮ সালের ১৯ ডিসেম্বর জোবায়ের মনির, জাকির হোসেন, তোতা মিয়া, সিদ্দিকুর রহমান, আবদুল জলিল, আবদুর রশিদকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে ২০১৯ সালের ১৭ জুন রজনী দাসের করা মামলায় জোবায়ের মনিরসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগপত্র দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. নুর হোসেন।

তবে জোবায়ের মনির অসুস্থতাজনিত কারণ দেখিয়ে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ‘ঢাকা শহরে নিজ বাসায় অবস্থান করবেন, শহর ছেড়ে অন্য কোথাও যেতে পারবেন না’এই শর্তে ট্রাইব্যুনাল থেকে জামিন পান। কিন্তু তিনি জামিনের শর্ত ভঙ্গ করে ঈদের আগের দিন শাল্লা উপজেলার দৌলতপুর গ্রামে নিজ বাড়িতে যান। ঈদের দিন পশু কোরবানি করেন। এরপর লোকজনকে নিয়ে নৌকা ও স্পিডবোটে করে এলাকায় ঘুরে বেড়ান। পরে গণমাধ্যমে বিষয়টি অবহিত হওয়ার পর তার জামিন বাতিল চেয়ে আবেদনের সিদ্ধান্ত নেয় প্রসিকিউশন।

জানা যায়, সুনামগঞ্জের শাল্লায় যুদ্ধাপরাধ মামলায় গ্রেফতারকৃত আসামি জোবায়ের মনির অসুস্থতা দেখিয়ে আদালত থেকে জামিন নিয়ে জামিনের শর্ত ভঙ্গ করে গোপনে এলাকায় এসে ঘুরে গেছেন। তিনি ঈদের আগের দিন গ্রামের বাড়ি শাল্লা উপজেলার দৌলতপুরে গিয়ে পশু কোরবানিতে অংশ নেন। পরে নিজস্ব লোকজন নিয়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে সোমবার (৩ আগস্ট) ঢাকায় ফিরেন।  এ ঘটনায় মামলার বাদী, সাক্ষী ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষজন আতঙ্কে আছেন। এ এলাকায় একক প্রভাবশালী হিসেবে এখনও প্রতিষ্ঠিত জোবায়ের মনিরের পরিবার। এ কারণে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষজন সব সময়ই তটস্থ থাকেন।

যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবিতে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৬ সালে ট্রাইব্যুনালে একাত্তরে গণহত্যা, নারী নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের অভিযোগে জোবায়ের মনির, তার ভাই প্রদীপ মনির ও চাচা মুকিত মনিরসহ যুদ্ধাপরাধে সম্পৃক্তদের বিরুদ্ধে চারটি অভিযোগ দায়ের করা হয়। ওই বছরের ২১ মার্চ অভিযোগের তদন্ত শুরু করে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। পেরুয়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা রজনী দাসের দায়েরকৃত মামলায় ২০১৮ সালের ২০ ডিসেম্বর জোবায়ের মনির, জাকির হোসেন, তোতা মিয়া টেইলার, সিদ্দিকুর রহমান, আব্দুল জলিল, আব্দুর রশিদসহ অভিযুক্ত ৬ যুদ্ধাপরাধীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। অভিযোগ দায়েরের পরই আমেরিকায় পালিয়ে যায় অভিযুক্ত জুবায়ের মনির, যুদ্ধাপরাধ মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত কামরুজ্জামানের আইনজীবী ও ইসলামি ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি শিশির মনিরের বাবা যুদ্ধাপরাধী মুকিত মনির। ২০১৯ সালের ১৭ জুন তদন্ত সংস্থা একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে জোবায়ের মনিরসহ ১১ জন জড়িত বলে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দাখিল করে। গত ফেব্রুয়ারিতে আদালতকে অসুস্থতার সাজানো তথ্য দিয়ে জোবায়ের মনির ‘টাউন জামিন’ মঞ্জুর করিয়ে নেয়। শর্ত মতে শহরে বাসায় অবস্থানের নির্দেশনা দিয়ে জামিন মঞ্জুর করা হলেও সুস্থ জোবায়ের মনির প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ান এলাকায়ও।


সৌজন্যে : বাংলা ট্রিবিউন

সিলেট ভিউ ২৪ ডটকম/ ৫ আগস্ট ২০২০/ পিটি

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন