Sylhet View 24 PRINT

ওসি প্রদীপ ও তার স্ত্রীর সম্পদের অনুসন্ধানে দুদক

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৮-০৯ ১৮:৫৭:২০

সিলেটভিউ ডেস্ক :: অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ হত্যা মামলার আসামি টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাস ও তার স্ত্রীর অবৈধ সম্পদের বিষয়ে অনুসন্ধান করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অনুসন্ধান শেষে যত দ্রুত সম্ভব প্রতিবেদন দেওয়া হবে।

রোববার বিষয়টি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন দুদকের চট্টগ্রাম সমন্বিত কার্যালয় ২-এর উপপরিচালক মো. মাহবুবুল আলম।

দুদক জানিয়েছে, এ অভিযোগটির অনুসন্ধান সম্প্রতি শুরু হয়। অনুসন্ধানের একপর্যায়ে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের হিসাব চেয়ে ওসি প্রদীপ কুমার দাস ও তার স্ত্রীর কাছে নোটিশ পাঠানো হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে এই দম্পতি আলাদাভাবে তাদের সম্পদের হিসাব কমিশনে জমা দিয়েছেন।

দুদক সূত্র জানায়, দুদকের অনুসন্ধানে ওসি প্রদীপ কুমার ও তার স্ত্রীর নামে-বেনামে জ্ঞাত-আয়বহির্ভূত সম্পদ থাকার প্রমাণ মিলেছে। এর মধ্যে স্ত্রীর নামে চট্টগ্রাম মহানগরে ছয়তলা বাড়ি, প্লট, ফ্ল্যাট, একাধিক গাড়ি ও অন্যান্য সম্পদের প্রমাণ পাওয়া যায়।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রাথমিক তদন্তে বেরিয়ে আসে, টেকনাফ থানার সদ্য বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ অবৈধ অর্থে চট্টগ্রামে গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। স্ত্রী চুমকি কারণের নামে করেছেন মৎস্য খামার, বিলাসবহুল বাড়ি-গাড়ি, বিপুল পরিমাণ কৃষি-অকৃষি জমি। স্ত্রীর নামে তিনি ব্যাংকে রেখেছেন বিপুল পরিমাণ টাকা। বিদেশে টাকা পাচারের অভিযোগও উঠেছে তার বিরুদ্ধে।

এক বছর আগে প্রদীপ দাশের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের অনুসন্ধান শুরু করেছিল দুদক। কিন্তু মাঝপথে সেই অনুসন্ধান কার্যক্রম স্তিমিত হয়ে পড়ে। মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় গ্রেফতারের পর প্রদীপের ব্যাপারে এখন নড়েচড়ে বসেছে দুদক। ইতোমধ্যে তার সম্পদের খোঁজখবর নেয়া শুরু করেছেন দুদক কর্মকর্তারা। তার দুর্নীতি অনুসন্ধানের ফাইলও সচল হয়েছে।

দুদকে জমা দেয়া হিসাব বিবরণীতে প্রদীপের নিজের নামে জমি কিংবা বাড়ি থাকার কথা উল্লেখ করেননি। নথিতে তিনি তার আয় দেখিয়েছেন বেতনভাতা, শান্তিরক্ষা মিশন থেকে প্রাপ্ত ভাতা ও জিপিএফ’র সুদ থেকে প্রাপ্ত টাকা। চট্টগ্রাম দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়-২ এর উপ-পরিচালক মো. মাহবুবুল আলম গণমাধ্যমকে বলেন, প্রদীপ কুমার দাশ ও তার স্ত্রী চুমকি কারণের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের তদন্ত চলছে। তারা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত কোনো সম্পদ অর্জন করেছে কি না, সে বিষয়টি দেখা হচ্ছে। তাদের জমা দেয়া সম্পদ বিবরণী যাচাই-বাছাই করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, দুদকে প্রদর্শিত সম্পদের বাইরে প্রদীপ দাশের লালখান বাজারে একটি ফ্লাট, কক্সবাজারে দুটি হোটেলের মালিকানা, দেশের বিভিন্ন স্থানে জায়গা-জমি ও ভবন রয়েছে। এছাড়া ভারতের আগরতলা, কলকাতার বারাসাত, গৌহাটি এবং অস্ট্রেলিয়ায় তার বাড়ি রয়েছে। এসব বিষয়ে দুদক কর্মকর্তারাও খোঁজখবর নেয়া শুরু করেছেন। জানা গেছে, প্রদীপ তার অবৈধ আয়ের অর্থ দিয়ে স্ত্রী চুমকির নামে বেশি সম্পদ কিনেছেন। বোয়ালখালীতে স্ত্রীর নামে কয়েক কোটি টাকার সম্পদ কিনেছেন। বোয়ালখালী সারোয়াতলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বেলাল হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, প্রদীপের স্ত্রীর নামে এলাকায় মৎস্য প্রজেক্ট রয়েছে। তার কর্মকাণ্ডে এলাকাবাসী হতভম্ব।

দুদক সূত্র জানায়, প্রদীপ কুমার দাশের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের বিষয়ে অভিযোগ ওঠায় ২০১৮ সালের জুনের মাঝামাঝি প্রাথমিক অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রদীপ ও তার স্ত্রী চুমকির নামে অস্বাভাবিক সম্পদের তথ্য পান দুদক কর্মকর্তারা। এরপর সম্পদ বিবরণী দাখিলের জন্য তাদের চিঠি দেয়া হয়। একই বছরের মে মাসে তারা সম্পদ বিবরণী দুদকে জমা দেন। একই বছরের ১৮ নভেম্বর দুদক চট্টগ্রাম কার্যালয়ের কর্মকর্তারা প্রদীপ ও তার স্ত্রীর সম্পদের বিষয়ে প্রতিবেদন ঢাকা প্রধান কার্যালয়ে পাঠান। তবে ঢাকা কার্যালয় থেকে এ বিষয়ে পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে কিছুই জানানো হয়নি। ফাইলটি সেখানেই স্তিমিত হয়ে পড়ে। সম্প্রতি প্রদীপ বরখাস্ত হওয়ায় ফাইলটি সচল করার উদ্যোগ নিয়েছে দুদক।

জানা গেছে, ১৯৯৫ সালের ১ জানুয়ারি সাব ইন্সপেক্টর হিসেবে পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেন প্রদীপ। ২০০৯ সালের ১৯ জানুয়ারি তিনি ইন্সপেক্টর পদে পদোন্নতি পান। তাদের বাড়ি চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার সারোয়াতলী ইউনিয়নের উত্তর কুঞ্জুরী গ্রামে। তার বাবা হরেন্দ লাল দাশ ছিলেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক) নিরাপত্তা প্রহরী। তার দুই সংসারে রয়েছে পাঁচ ছেলে ও ছয় মেয়ে। প্রদীপের ভাই সদীপ কুমার দাশ সিএমপির ডবলমুরিং থানায় ওসি হিসেবে কর্মরত। তাদের আরেক ভাই দিলীপ কুমার দাশ চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের হেডক্লার্ক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে তিনি অবসর নিয়েছেন। গ্রামের বাড়িতে তার সৎ ভাইয়েরা থাকেন।

স্ত্রী চুমকির নামে যত সম্পদ: প্রদীপ দাশের স্ত্রী চুমকি গৃহিণী হলেও দুদকে জমা দেয়া হিসাব বিবরণীতে তাকে মৎস্য খামারি হিসেবে দেখানো হয়েছে। ১৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূলধনে শুরু করা মৎস্য খামারে চুমকি প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা আয় করেছেন। মৎস্য চাষের লাভের টাকায় কিনেছেন চট্টগ্রাম নগরীতে জমি, গাড়ি-বাড়ি। হিসাব বিবরণীতে চুমকির স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে- নগরীর পাথরঘাটা এলাকায় চার শতক জমি (দাম ৮৬ লাখ ৭৬ হাজার টাকা)।


ওই জমিতে গড়ে তোলা ছয়তলা ভবনের (মূল্য এক কোটি ৩০ লাখ ৫০ হাজার); পাঁচলাইশে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে কেনা হয় ৬ গণ্ডা ১ কড়া ১ দন্ত জমি (দাম এক কোটি ২৯ লাখ ৯২ হাজার ৬০০ টাকা); ২০১৭-১৮ সালে কেনা হয় কক্সবাজারে ঝিলংজা মৌজায় ৭৪০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট (দাম ১২ লাখ ৩২ হাজার টাকা)। সব স্থাবর সম্পদের মূল্য দেখানো হয়েছে তিন কোটি ৫৯ লাখ ৫১ হাজার ৩০০ টাকা। এছাড়া অস্থাবর সম্পদের মধ্যে দেখানো হয়েছে- প্রাইভেটকার (দাম পাঁচ লাখ টাকা), মাইক্রোবাস (দাম সাড়ে ১৭ লাখ টাকা) ও ৪৫ ভরি স্বর্ণ। ব্যাংকে ৪৫ হাজার ২০০ টাকা দেখানো হয়েছে।


সৌজন্যে : যুগান্তর
সিলেটভিউ২৪ডটকম/৯ আগস্ট ২০২০/ডেস্ক/জিএসি

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.