আজ বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ইং

স্বামীর নির্দেশে লুট করতে গিয়ে বৃদ্ধাকে পেটায় সেই ভয়ঙ্কর গৃহকর্মী!

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২১-০১-২১ ২০:৫৩:৩৩

সিলেটভিউ ডেস্ক :: বাড়ির মালিক ৭৫ বছরের বৃদ্ধা বিলকিস বেগম শুয়ে আছেন বিছানায়। সেখান থেকে জোর করে তাকে বাথরুমে ঢোকায় গৃহকর্মী রেখা। এরই মাঝে খুলে ফেলে তার শরীরের সব কাপড়। শীতের সকালে বৃদ্ধার গায়ে ইচ্ছেমতো ঢালা হয় ঠাণ্ডা পানি। এরপর হঠাৎ করেই বৃদ্ধাকে লাঠি দিয়ে পেটাতে থাকে সে। মার খেয়ে বৃদ্ধা মেঝেতে পড়ে গেলেও ক্ষান্ত হয়রি রেখা। রড দিয়ে একের পর এক আঘাত করে। একপর্যায়ে মাথাতেও আঘাত করে রক্তাক্ত করে। এরপর আলমারির চাবির জন্য বুকে ওপর চেপে বসে। বটি হাতেও তেড়ে আসেন রেখা। এসব কিছুর মাঝে তার লক্ষ্য আলমারি। এক সময় অসহায়ের মতো আত্মসমর্পণ করেন বৃদ্ধা বিলকিস বেগম। একপর্যায়ে বৃদ্ধার গলা থেকে চেইন খুলে পরে নিয়ে আয়েশি ভঙ্গিতে রেখা পরখ করে নেয় হাতের বালা। তারপর আলমারির চাবির সন্ধান পায় নিষ্ঠুর এই গৃহকর্মী। কিন্তু খুলতে না পেরে রক্তাক্ত, অসুস্থ বৃদ্ধাকে টেনে নিয়ে বাধ্য করেন আলমারি খুলে দিতে। ড্রয়ার খুলে স্বর্ণ, নগদ টাকা, মোবাইল সবই হস্তগত করে সে। তারপর খুলে আনে টিভি। জোগাড় করে ব্যাগ। সব হাতানোর পর কক্ষে তালা দেয় রেখা। সবকিছু গুছিয়ে ফাকা বাসায় আহত বৃদ্ধাকে ফেলে বেরিয়ে যায় ভয়ঙ্কর এই গৃহকর্মী।

এভাবে গত সোমবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে রাজধানীর মালিবাগে ৭৫ বছরের বৃদ্ধাকে বিবস্ত্র করে নির্মম নির্যাতনের পর স্বর্ণালঙ্কারসহ ২১ লাখ টাকার মালামাল লুটের ঘটনায় ভয়ঙ্কর সেই গৃহকর্মী রেখা আকতার ও তার স্বামী এরশাদকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার ভোরের দিকে ঠাকুরগাঁও জেলার রানীশংকৈল থানা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় তাদেরকে। এ সময় তাদের কাছ থেকে চোরাই স্বর্ণালঙ্কার, টাকা ও মালামাল উদ্ধার করা হয়। বিকাল ৫টায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রেলেশন্স সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির উপ-কমিশনার ওয়ালিদ হোসেন।

ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, বৃদ্ধা বিলকিস বেগম কিডনির সমস্যাসহ বিভিন্ন বার্ধক্যজনিত রোগে শয্যাশায়ী। কর্মব্যস্ত সন্তানরা তার সেবা করার জন্য রেখা নামের ওই গৃহকর্মীকে বাসায় নিয়োগ করে। সেই গৃহকর্মীর হাতে নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে বৃদ্ধা বিলকিস এখন সংকটাপন্ন! সন্তানরা বাসায় না থাকার সুযোগে বিবস্ত্র করে বৃদ্ধাকে পেয়ে জখম করে রেখা। শরীরে ঢেলে দেয় ঠাণ্ডা পানি। রড দিয়ে মাথায় আঘাত করে রক্তাক্ত করে। এরপর শরীর থেকে সোনার গহনা খুলে নেয়। এরপর বাসার আলমিরা থেকে স্বর্ণালঙ্কার, টাকাসহ ২১ লাখ টাকার মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে পালিয়ে যায়। গত সোমবার রাজধানীর মালিবাগের এই ঘটনাটি বৃদ্ধার সন্তানরা বুঝতে পারেন বাসায় ফিরে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে। পরবর্তীতে ওই ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এ ঘটনায় শাজাহানপুর থানায় মামলা দায়েরের পর পুলিশ প্রথম রেখাকে গ্রেপ্তার করে। এরপর তার স্বামী এরশাদকে একই এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে।  

জানতে চাইলে শাহজাহানপুর থানার ওসি শহিদুল হক বলেন, ‘অমানবিক নির্যাতন চালানো হয় ওই বৃদ্ধাকে। পরে ওই বৃদ্ধাকে হলি ফ্য্যামিলি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে প্রাথমিক চিকিত্সার পর তিনি এখন অনেকটাই ভালো।’

পুলিশ জানায়, এ ঘটনায় বৃদ্ধার মেয়ে মেহ্বুবা জামান শাহজাহানপুর থানায় একটি মামলা করেন। তিনি এজাহারে বলেন, তার নিজ বাসাতে মা বিলকিস বেগমসহ ভাই বোনদের নিয়ে থাকতেন তিনি। গত ১৭ জানুয়ারি বোন দিলরুবা জামান, মা বিলকিস বেগম ও গৃহকর্মী রেখা আক্তারকে বাসায় রেখে তিনি ব্যক্তিগত কাজে বরিশাল যান। পরের দিন সকাল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তার বোন দিলরুবা মা ও গৃহকর্মীকে বাসায় রেখে ব্যাংকিং কাজে বাসার বাইরে যায়। সেই সুযোগে গৃহকর্মী রেখা আকতার তার বৃদ্ধা মাকে একা পেয়ে মারপিট করে হত্যার উদ্দেশ্যে গুরুতর যখম করে। এরপর তার বাসা থেকে নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কার, টেলিভিশনসহ ২১ লাখ টাকার মালামাল নিয়ে পালিয়ে যায়।  

তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ জানায়, ঘটনার পর বাসা থেকে উদ্ধার করা সিসি ক্যামেরার ফুটেজে এই ঘটনা দেখা যায়। স্বজনদের বরাত দিয়ে পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, এক বছর আগে ছয় হাজার টাকা বেতনে রেখাকে নিয়োগ করা হয়। এক সময় রেখা ওই বাড়িই ভাড়াটিয়া ছিল সেই সূত্রে পরিচয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রেখার বরাত দিয়ে তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ জানায়, রেখাকে বিয়ের পর স্বামী অন্য আরেকটি বিয়ে করে। এই নিয়ে পরিবারে চরম অশান্তি ছিল তাদের। এরপর স্বামীর নির্দেশে রেখা ওই বাসা থেকে স্বর্ণালঙ্কার ও মালামাল লুট করে। তবে এর বাইরে ঘটনায় অন্য কারণও থাকতে পারে জানিয়ে ডিসি (মিডিয়া) ওয়ালিদ হোসেন বলেন, ঘটনার নেপথ্যে অন্য কোরণ আছে কি না তার তদন্ত চলছে



সিলেটভিউ২৪ডটকম/ কালের কণ্ঠ /জিএসি- ১১

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন