আজ মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ইং

নেচে গেয়ে শতবর্ষী বৃদ্ধ-বৃদ্ধার বিয়ে

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২১-০২-২২ ১৯:৪৫:৪৪

সিলেটভিউ ডেস্ক ::  ‘যদিদং হৃদয়ং মম-তদিদং হৃদয়ং তব’- বিবাহবাসরে সনাতনী এ বেদমন্ত্র দিয়ে বরাবরই হিন্দু সম্প্রদায়ের তরুণ-তরুণীরা বিয়ে সম্পন্ন করেন। তবে এবার এই বেদমন্ত্র পড়ে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন শতবর্ষী বৃদ্ধ-বৃদ্ধা।

বরের বয়স শতবর্ষ ও কনের বয়স শতবর্ষ ছুঁই ছুঁই। এরপরও বিয়ের আয়োজনে ছিল না কোনো কমতি। বিবাহবাসরে ব্রাহ্মণ দিয়ে বিয়ে শুধুমাত্র সনাতনী এ বেদমন্ত্র দিয়েই নয়, নাচ-গান, বাদ্য-বাজনা আর সনাতন রীতিতে ধুমধামের সঙ্গে সম্পন্ন হয়েছে এই বিয়ে। বিয়ের নিমন্ত্রণ কার্ড থেকে শুরু করে সহস্রাধিক মানুষের তিন দিন ধরে ভোজনের আয়োজন ছিল।

দিনাজপুরের বিরল উপজেলার সীমান্ত সংলগ্ন গ্রাম দক্ষিণ মেড়াগাঁওয়ে রোববার রাতে ধুমধামের সঙ্গে সম্পন্ন হয়েছে ব্যতিক্রমী এ বিয়ে।

বর দক্ষিণ মেড়াগাঁও গ্রামের স্বর্গীয় ভেলগু দেবশর্মার পুত্র বৈদ্যনাথ দেবশর্মা। আর কনে তারই ৯০ বছর আগে বিয়ে করা স্ত্রী পঞ্চবালা দেবশর্মা।

বিয়ের নিমন্ত্রণপত্রে তিনি উল্লেখ করেন ‘পরম করুনাময় ঈশ্বরের অশেষ কৃপায় আমার বয়স ১০৭ বছর। আমার স্ত্রী শ্রীমতি পঞ্চবালার সহিত প্রায় ৯০ বছর পূর্বে বিবাহ সুসম্পন্ন হয়। আমাদের বিবাহের পঞ্চম পীড়ি (পাঁচ প্রজন্ম) উত্তীর্ণ হওয়ায় ৮ ফাল্গুন রোজ রোববার এক সনাতনী বেদমন্ত্র উচ্চারণে ‘যদিদং হৃদয়ং মম-তদিদং হৃদয়ং তব’ পুনঃবিবাহ মিলনের অনুষ্ঠান সুসম্পন্ন হইবে। উক্ত পুনঃবিবাহ মিলন ও প্রীতিভোজ অনুষ্ঠানে আমার নিজ বাসভবনে উপস্থিত থাকার বিশেষভাবে অনুরোধ করছি। পত্র দ্বারা নিমন্ত্রণ করিলাম। ত্রুটি মার্জনীয়।’

নিমন্ত্রণপত্রে বিয়ের লগ্ন-তিথি, বৌভাতসহ সব অনুষ্ঠানের সময়সূচি উল্লেখ করা হয়। পরিবারের সদস্যরা জানান, পাঁচ শতাধিক কার্ড ছাপিয়ে বিয়ের নিমন্ত্রণ দেয়া হয় আত্মীয়স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীকে।

দক্ষিণ মেড়াগাঁওয়ে প্রায় মাসখানেক ধরেই আয়োজন চলে শতবর্ষী এই বর-কনের বিয়ের। এ আয়োজনের পর রোববার রাত ৮টায় বর আসেন গাড়িতে চড়ে। যথারীতি পূজাপার্বণের মাধ্যমে বরকে বরণ করে নিয়ে বসানো হয় বিবাহবাসরে এবং সাজিয়ে-গুছিয়ে তার পাশেই বসানো হয় কনেকে। এরপর ব্রাহ্মণ নিয়ে উচ্চারণ করা হয় সনাতনী বেদমন্ত্র। এভাবেই সনাতনী রীতিতে মালাবদলসহ সবরকম আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয় বিয়ে।

ধর্মীয় রীতির পাশাপাশি ধুমধামের কোনো কমতি ছিল না বিয়েতে। ছিল বাদ্য-বাজনা, নাচগান, প্রীতিভোজ। বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দেন পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন, জনপ্রতিনিধিসহ সহস্রাধিক মানুষ।

বয়সের ভারে ন্যুয়ে পড়া বৈদ্যনাথ তার বিয়ের কার্ডে বয়স ১০৭ উল্লেখ করলেও জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী বর্তমানে তার বয়স ৯২ বছর। এ বিষয়ে তিনি বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্রে তার বয়স ভুল আছে। তার পিতা স্বর্গীয় ভেলগু দেবশর্মার হাতে লিখে যাওয়া জন্মতারিখ অনুযায়ী তার বর্তমান বয়স ১০৭ বছর।

তিনি বলেন, বিয়ের পঞ্চম পাঁচ প্রজন্ম পার হয়েছে। এজন্যই ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী আবার এ বিয়ে। বংশধরদের মঙ্গলের জন্যই এ বিয়ের আয়োজন বলে জানান তিনি।

বিয়ের পিঁড়িতে বসে বয়সের ভারে ন্যুয়ে পড়া কনে পঞ্চবালা দেবশর্মা জানালেন, ছোটবেলা বিয়ে সম্পন্ন হওয়ায় বিয়ে কি- তা তিনি বোঝেননি। কিন্তু এবার এ বিয়েতে বেশ আনন্দ পাচ্ছেন তিনি। আমাদের বংশধররাও যাতে আমাদের মতো দীর্ঘজীবী হয়-এজন্য ভগবানের কাছে প্রার্থনা করছি।

রোববার রাতে ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী বেদমন্ত্র দিয়ে বিয়ে পড়িয়েছেন ব্রাহ্মণ মহাদেব ভট্টাচার্য। তিনি জানান, এর আগে এমন বিয়ে তিনি কখনই দেননি এবং দেখেননি। এ রকম বিয়েতে পুরোহিতের কাজ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ওই এলাকার হিন্দু বিবাহ রেজিস্ট্রার বিভূতিভূষণ সরকার। তিনিও জানান, এর আগে তার এলাকায় এ রকম বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়নি। হয়তো বাংলাদেশে এ বয়সের মানুষের বিয়ের অনুষ্ঠান এটিই প্রথম।

বৈদ্যনাথ দেবশর্মার একমাত্র মেয়ে বৃদ্ধা ঝিনকো বালা দেবশর্মা জানান, তার পিতা-মাতার একমাত্র সন্তান তিনি। তারই নাতি-নাতনি আবার তাদের সন্তান ও নাতি-নাতনিসহ মোট ৪টি প্রজন্ম পার করছেন। আর তার বাবা-মা পার করছেন পাঁচটি প্রজন্ম। ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী ভবিষ্যৎ বংশধরদের কল্যাণেই এ বিয়ের আয়োজন করেছেন তারা। আর এ বিয়ের আয়োজন করতে পেরে পরিবারের সদস্যরা সবাই খুশি ও আনন্দিত। তাই তারা বিয়ে অনুষ্ঠানের কোনো কমতি রাখেননি।

তিনি আশা প্রকাশ করেন, তার বংশধররাও যাতে বাবা-মায়ের মতো দীর্ঘজীবী হয়।

পাড়া-প্রতিবেশী আর আত্মীয়স্বজনদের পাশাপাশি বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দেন এলাকার জনপ্রতিনিধিরাও। বিয়ের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে স্থানীয় ৮নং ধর্মপুর ইউপি চেয়ারম্যান সাবুল চন্দ্র সরকার জানান, ধুমধামের সঙ্গে ব্যতিক্রমী এ বিয়ের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে। এ রকম বিয়ে তারা কখনও দেখেননি। এমন বিয়ের অনুষ্ঠানে আসতে পেরে খুশি তারা।


সিলেটভিউ২৪ডটকম/ যুগান্তর /জিএসি-১৩

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন