আজ মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ইং

ডিবির এসআই, ঈদে খাই খাই!

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৭-০৬-১৯ ০০:৪০:৩৫

লিমন বাসার :: ঈদ ঘিরে বগুড়া জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ মানুষজনকে ধরে এনে টাকা নিয়ে ছেড়ে দিচ্ছে। আবার অপরাধীদের ধরার ভয় দেখিয়েও টাকা নেওয়া হচ্ছে।

যাকে বলা হচ্ছে ‘সামারি’। এসবের মূলে রয়েছেন ডিবির এসআই আলমগীর হোসেন।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, গত ৬ জুন বিকেলে বগুড়া শহরের বাদুরতলার বাড়ি থেকে ডিবির একটি দল আটক করে মাদক সম্রাজ্ঞী এজেদা পাগলির মেয়ে রিনাকে। মায়ের অবর্তমানে মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি। এ অভিযানের নেতৃত্ব দেন ডিবির এসআই আলমগীর। তাঁর সঙ্গে ছিলেন একজন এএসআই ও দুজন কনস্টেবল। রাত দেড়টায় বগুড়া পুলিশ সুপার কার্যালয়ের পেছনে ডিবি অফিসের ভেতরে চলে দরকষাকষি। সর্বশেষ এক লাখ ৪০ হাজার টাকায় দফারফা হয়।

পাগলি বাহিনীর লোকজন নগদ টাকা পরিশোধ করে রাত পৌনে ২টায় ছাড়িয়ে নেন রিনাকে। মুখে ওড়না পেঁচিয়ে ম্যাক্সি পরা এই নারী বীরদর্পে ডিবি অফিস থেকে বের হয়ে চলে যান। এর আগে গত মের প্রথম দিকে শহরের অন্যতম মাদক জোন হাড্ডিপট্টিতে চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী ফাহিমার বাড়িতে অভিযান চালায় ডিবি। দলনেতা ছিলেন যথারীতি এসআই আলমগীর।

ছয় সদস্যের এই দলে আরো ছিলেন এসআই মোস্তফা, এএসআই রাসেল, এএসআই রতন ও দুজন কনস্টেবল। অন্য একটি মাদক মামলায় বর্তমানে ফাহিমা জেলে রয়েছেন। তার পরও তাঁর ছেলে ও ছেলের স্ত্রীর কাছ থেকে ভয়ভীতি দেখিয়ে সাত লাখ টাকা আদায় করে ডিবি।

আলগীরের কাছে এই টাকা লেনদেন করেছেন এমন একজন এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ‘চাহিদামতো ঘুষ দেওয়ার পরও ফাহিমার ছেলেকে ১০০ পিস ইয়াবা দিয়ে মাদক মামলায় চালান দেয়। এর কারণ, এই সামারির (ঘুষ লেনদেন) তথ্য যেন বাইরে প্রকাশ হয়ে না পড়ে। ’

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এসআই আলমগীরের বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারি ও গ্রেপ্তার বাণিজ্য করার অভিযোগে চার দফা বগুড়া ডিবি থেকে অন্যত্র বদলির আদেশ হয়েছিল। সেই আদেশ বাতিল করে পুনরায় ডিবিতে ফিরেছেন। এর আগে বগুড়ার শাজাহানপুর থানাতে প্রায় সাড়ে চার বছর এএসআই ছিলেন। এরপর ২০১৪ সালে পদোন্নতি পেয়ে এসআই হিসেবে ওই থানাতে ছিলেন আরো দুই বছর।

২০১৬ সালের জুলাইয়ে সারিয়াকান্দি থানায় তাঁকে বদলি করা হয়েছিল। তা পরিবর্তন করে ডিবিতে যোগদান করেন। এর পর থেকে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। শাজাহানপুর থানায় থাকাকালে তিনি এক মেয়ের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন। পরে সেই মেয়ে পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগের তদন্ত করে সত্যতা মিললে তাঁকে চাঁপাইনবাবগঞ্জে বদলি করা হয়। তিনি সেই আদেশ বাতিল করেন।

এ ছাড়া আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন), পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ও স্পেশাল সিকিউরিটি অ্যান্ড প্রটেকশন ব্যাটালিয়নে (এসপিবিএন) বদলির আদেশ তিনি রোধ করেন।

শাজাহানপুর থানার একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, এসআই আলমগীর ২০১৫ সালের ৫ জুলাই চোরাচালানের অর্ধলক্ষাধিক টাকার ব্যাগভর্তি ভারতীয় চোরাই থ্রিপিসসহ সাংবাদিকদের হাতে ধরা পড়েন। অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, সম্প্রতি সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর থেকে ট্রাক বোঝাই শাড়ি ও লুঙ্গি ডাকাতি হয়।

ডাকাতির মালামাল বগুড়ার দুপচাচিয়া ও আদমদীঘি উপজেলার সীমান্তবর্তী একটি চাতালের গুদামে খালাস করা হচ্ছিল। গোপনে খবর পেয়ে রাত ২টায় অভিযান চালায় বগুড়া ডিবি। বেশ কিছু মালামাল উদ্ধার হলেও গুদাম মালিক ফরিদ পালিয়ে যান। তখন পাশের বাড়ি থেকে আটক করে থানায় আনা হয় ফরিদের সিঙ্গাপুরপ্রবাসী বড় ভাইকে। তাঁকে ডিবি অফিসে আনার পর বড় অঙ্কের ঘুষ লেনদেন করে ভোরে ছেড়ে দেওয়া হয়।

এ ছাড়া ডাকাতি হওয়া মালামালের মালিকদের কাছ থেকেও চাঁদা আদায় করা হয়।

এসআই আলমগীর হোসেন বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে শক্রতা করে মিথ্যা অভিযোগ দেওয়া হচ্ছে। শাজাহানপুর ও বগুড়া ডিবিতে আমি অনেক ভালো কাজ করেছি। সেসব বাদ দিয়ে মিথ্যা তথ্য দেওয়া হচ্ছে।

এ বিষয়ে বগুড়া গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) আমিরুল আসলাম বলেন, ‘যাদের বিরুদ্ধে সামারি-বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে, তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’
-সূত্র : কালের কন্ঠ

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন