আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ইং

যশোরে ১৫ ঘণ্টার শ্বাসরুদ্ধকর অভিযান ‘মেল্টেড আইচ’ সমাপ্ত

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৭-১০-০৯ ২০:০১:৩১

যশোরে ‘জঙ্গি আস্তানায়’ শ্বাসরুদ্ধকর ১৫ ঘণ্টার অভিযান ‘মেল্টেড আইচ’ শেষ হয়েছে। যশোর শহরের ঘোপ নওয়াপাড়া রোড এলাকার একটি বাড়িতে ওই আস্তানায় রবিবার রাত ২টা থেকে শুরু হওয়া এ অভিযান সোমবার বিকাল ৫টায় শেষ হয়।

অভিযানে সন্দেহভাজন জঙ্গি হাফিজুর রহমান সাগর ওরফে মশিউর রহমানের স্ত্রী খোদেজা আক্তার খাদিজা তিন সন্তান নিয়ে আত্মসমর্পণ করেছেন। পরে ওই বাড়ি থেকে তিনটি সুইসাইডাল ভেস্ট উদ্ধার করা হয়েছে।

এর আগে খাদিজার শর্ত অনুযায়ী তার বাবা-মাকে ওই বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। খাদিজা নিহত নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতা নুরুল ইসলাম মারজানের বোন। আর অভিযানের দুদিন আগে পালিয়ে যাওয়া জঙ্গি হাফিজুর রহমান সাগর ওরফে মশিউর রহমান নবগঠিত জেএমবির খুলনা অঞ্চলের নেতা।

অভিযান শেষে সোমবার বিকাল সোয়া ৫টায় ঘোপ নওয়াপাড়া রোডের ওই বাড়ির সামনে ব্রিফিং করেন খুলনা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি ইকরামুল হাবিব। তিনি জানান, গোয়েন্দা তথ্য পাওয়ার পর পুলিশ, র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা রবিবার রাত ২টার দিকে ওই বাড়িটি ঘিরে ফেলে। এরপর সোয়াট, কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট, বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দলসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এই অভিযানে অংশ নেয়।

অভিযানে সন্দেহভাজন শীর্ষ জঙ্গি হাফিজুর রহমান সাগর ওরফে মশিউর রহমানের স্ত্রী খোদেজা আক্তার খাদিজা তিন সন্তান নিয়ে আত্মসমর্পণ করেছেন। এরপর ওই বাড়ি তল্লাশি চালিয়ে তিনটি সুইসাইডাল ভেস্ট উদ্ধার করা হয়েছে। পাশাপাশি কয়েকটি নকশা পাওয়া গেছে। এগুলো কোনো প্রতিষ্ঠানের নকশা কি না বা এ নিয়ে কোনো হামলা পরিকল্পনা ছিল কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রাথমিক অভিযান শেষ হয়েছে। এখন পুরো বাড়ি তল্লাশি করে আর কোনো অস্ত্র-বিস্ফোরক আছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। উদ্ধার হওয়া খাদিজাকে তিন সন্তানসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে নেয়া হয়েছে। তাদের ব্যাপারে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। তবে ‘জঙ্গি’ সাগর দুদিন আগে ওই বাড়ি থেকে চলে গেছেন।

এর আগে শহরের ঘোপ নওয়াপাড়া রোড এলাকার চারতলা ওই বাড়িটি রবিবার মধ্যরাত থেকে ঘিরে রাখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সোয়াটের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এ পদক্ষেপ নেয়। ঘোপ নওয়াপাড়া রোড মসজিদের পেছনের বাড়িটি মালিক যশোর জিলা স্কুলের শিক্ষক হায়দার আলী জানান, বাড়ির দ্বিতীয় তলার ভাড়াটিয়া মশিউর রহমানের ফ্ল্যাটে জঙ্গি রয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। তিনি একটি হারবাল কোম্পানিতে চাকরি করেন। তার বাড়ি কুষ্টিয়ায়।

বাড়িটি ঘিরে রাখার পর বেলা ১১টার দিকে সেখানে আসেন যশোরের পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান। বেলা ১১টা ১৫ মিনিটের দিকে যশোরের পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান হাত মাইকে খাদিজা ও তার পরিবারের সদস্যদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানান। তিনি মাইকে বলেন, ‘খাদিজা আপনি বেরিয়ে আসুন। আপনার সঙ্গে আমরা কথা বলতে চাই। আপনার সঙ্গে শিশুরাও রয়েছে। তাদের কথা চিন্তা করে আপনি বেরিয়ে আসুন, আমরা কথা বলবো। আপনি আত্মসমর্পণ করেন। আমরা আপনার সব সহযোগিতা করবো।’ বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত পুলিশ সুপারের আহ্বানে সাড়া দেয়নি জঙ্গিরা।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঘটনাস্থলে ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান বলেন, ওই বাড়িতে পাঁচটি পরিবার ছিল। তাদের নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়। বাড়িটির দ্বিতীয় তলায় জঙ্গি মারজানের বোন খাদিজা রয়েছেন। তার সঙ্গে একাধিক শিশু রয়েছে বলে নিশ্চিত হয়েছি। আমরা আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়েছি।

এই আহ্বানের পর দুপুর পৌনে দুইটার দিকে ব্যালকনিতে এসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সাথে কথা বলেন খাদিজা। খাজিদা পুলিশকে বলেন, ‘আমার মা-বাবাকে এনে দেন। তারপর আপনাদের সঙ্গে কথা বলবো।’ এরপর তিনি আবার ভেতরে চলে যান।

এরপর নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতা নুরুল ইসলাম মারজান ও খাদিজার পিতা-মাতাকে পাবনা থেকে যশোরে নিয়ে আসা হয়। বেলা ৩টা ৫ মিনিটের দিকে পুলিশ খাদিজার মা বাবাকে সেখানে হাজির করলে তিনি আত্মসমর্পণ করেন। তার সঙ্গে তিন শিশু সন্তান রয়েছে। খাদিজা, তার মা-বাবা ও তিন সন্তান বর্তমানে পুলিশ হেফাজতে রয়েছে।-ঢাকাটাইমস

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন