আজ বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ইং

দেবরের সঙ্গে বাবলু, ভাবির পক্ষে আনিস

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৯-০৫ ২১:৩৩:৫২

সিলেটভিউ ডেস্ক :: জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান, বিরোধী দলীয় নেতা এবং রংপুর-৩ আসনের মনোনয়নকে কেন্দ্র করে বিচ্ছেদের পথে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদ ও ভাই গোলাম মোহাম্মদ কাদের। একই সঙ্গে জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে যুগল হিসেবে পরিচিত দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুও এখন বিভক্ত। অতীতে দু’জন একসঙ্গে থাকলেও এবার দু’জন দুই দিকে অবস্থান নিয়েছেন।

জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান বেগম রওশন এরশাদকে দলের চেয়ারম্যান ঘোষণা করেছেন প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যরিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় রওশন এরশাদের গুলশানের বাসভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন তিনি।

তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, ‘ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদের এমন ঘোষণা দেয়ার এখতিয়ার নেই। দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

বনানী কার্যালয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের এ কথা বলেন তিনি। ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ রওশন এরশাদকে পার্টির চেয়ারম্যান ঘোষণার পর পাশে বসা রওশন এরশাদের কাছে চেয়ারম্যান হিসেবে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে কোনো কথাই বলেননি সাবেক এ বিরোধীদলীয় নেতা।

এদিকে পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা রওশন এরশাদ বা জিএম কাদের কারোর পাশেই ছিলেন না। দু’দিক থেকেই দাবি করা হয়েছে রাঙ্গা তাদের দলের মহাসচিব। তাদের সঙ্গেই আছেন।

ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ‘রওশন এরশাদ পার্টির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন। আগামী ছয় মাসের মধ্যে কাউন্সিল করে গণতান্ত্রিক উপায়ে স্থায়ী চেয়ারম্যান ঠিক করব।’

তিনি অভিযোগ করেন, জিএম কাদের জাতীয় পার্টির ‘গঠনতন্ত্র ভেঙে’ চেয়ারম্যান হয়েছেন। যে প্রক্রিয়ায় উনি নিজেকে পার্টির চেয়ারম্যান দাবি করছেন, সেই প্রক্রিয়ায় গলদ রয়েছে। তবে জি এম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যানের সম্মান দেবেন রওশন এরশাদ।

ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ‘কাদের পার্লামেন্টারি বোর্ড গঠনে গঠনতন্ত্র লংঘন করেছেন। স্পষ্ট করে বলা আছে, চেয়ারম্যান, মহাসচিবের বাইরে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে ৭ সদস্য থাকার কথা। উনি যা করেছেন সবই অবৈধ। এরশাদের অসুস্থতা ও মৃত্যুর কারণে আমরা এ নিয়ে প্রশ্ন তুলিনি।’

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে রওশন এরশাদ বলেন, ‘পার্টিতে কী হচ্ছে? জাপা অতীতেও ভাগ হয়েছে, এবারও কি সেটি হচ্ছে নাকি? হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এত কষ্ট করে পার্টি গড়ে তুলেছেন, এখন সেই পার্টিটা ভালোভাবে চলুক, মান-অভিমান ভুলে যারা চলে গেছে, তারা ফিরে আসুক। আমি চাই পার্টির সবাই মিলেমিশে জনগণের সেবা করুক।’

সংবাদ সম্মেলনে রওশন এরশাদ, ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ছাড়াও সংসদ সদস্যদের মধ্যে ছিলেন মজিবুল হক চুন্নু, ফখরুল ইমাম, সেলিম ওসমান, লিয়াকত হোসেন খোকা ও গোলাম বিকরিয়া টিপু। প্রেসিডিয়ামদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা, এসএম ফয়সল চিশতী, মীর আবদুস সবুর আসুদ, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের একান্ত সচিব খালেদ আখতার, শফিকুল ইসলাম সেন্টু। শফিকুল ইসলাম সেন্টু মিছিল নিয়ে এতে অংশ নেন। সংবাদ সম্মেলন চলাকালেই এক পক্ষ রওশনের পক্ষে স্লোগান দেন। এ সময় ছাত্র সমাজের নেতাকর্মীরাও দল না ভাঙার পক্ষে স্লোগান দেন।

রওশন এরশাদের সংবাদ সম্মেলন শেষে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের প্রতিক্রিয়া জানতে বনানীর কার্যালয়ে গেলে গণমাধ্যমকর্মীদেও তিনি বলেন, ‘দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ আমাকে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দিয়ে গেছেন। দলের প্রেসিডিয়ামও তাতে সমর্থন দিয়েছেন।’

এরশাদপত্নী রওশনকে তিনি ‘মায়ের মতো’ সম্মান করেন বলে জানান জিএম কাদের। তিনি বলেন, ‘রওশন এরশাদ নিজ মুখে তো আর বলেননি তিনি চেয়ারম্যান। আশা করি, তিনি এমন কিছু করবেন না, যাতে তার সম্মান নষ্ট হয়। উনার কতটুকু সমর্থন রয়েছে তা ভবিষ্যতে দেখা যাবে।’

দল ভাঙনের মুখে পড়েনি দাবি করে কাদের বলেন, ‘কেউ নিজেকে রাজা ঘোষণা করলেই হয় না, তার প্রজার সমর্থনও থাকতে হয়।’

তিনি বলেন, ‘এরশাদের মৃত্যুতে তিনটি বিষয়ে শূন্যতা তৈরি হয়েছে। এক পার্টির চেয়ারম্যান পদ, পার্লামেন্টারি নেতা এবং উনার মৃত্যুতে শুন্য হওয়া রংপুর আসন। গঠনতন্ত্র মোতাবেক পার্লামেন্টারি পার্টির নেতা হবেন পার্টির চেয়ারম্যান। পার্টির প্রেসিডিয়ামের বৈঠকে সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে স্পিকারকে। এখন বিষয়টি স্পিকার নির্ধারণ করবেন। চেয়ারম্যান আমি কিনা প্রশ্ন উঠেছে, গঠনতন্ত্রের ২০ এর ক ধারায় স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে, পার্টির চেয়ারম্যান যাকে খুশি যেকোনো পদে নিয়োগ, বহিষ্কার কিংবা স্থলাভিষিক্ত করতে পারবেন। উনি মৃত্যুর আগে সাংগঠনিক আদেশে আমাকে চেয়ারম্যান করে গেছেন। উনার মৃত্যুর পর পার্টির প্রেসিডিয়ামের সভায় আমাকে চেয়ারম্যান হিসেবে ধন্যবাদ গৃহীত হয়েছে। এখন কেউ যদি আমাকে চেয়ারম্যান না মানেন সেটা তার বিষয়।’

এ সময় পাশে বসা জিয়াউদ্দিন আহম্মেদ বাবলু গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জিএম কাদের পার্টির চেয়ারম্যান বলে তার পক্ষে নানা যুক্তি তুলে ধরেন। সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, সালমা ইসলাম, গোলাম কিবরিয়া টিপু, নাজমা আকতার, এসএম ফখর-উজ-জামান জাহাঙ্গীর, মোস্তাফিজার রহমান মোস্তাফা, রানা মোহাম্মদ সোহেল, রংপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, সুনীল শুভরায়, কাজী মামুনুর রশীদ, আলমগীর সিকদার লোটন, হাসিবুল ইসলাম জয়, এনাম জয়নাল আবেদীনসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে আগামী রোববার দুপুর ১টায় বিরোধীদলীয় উপনেতার দফতরে জাতীয় পার্টির সংসদীয় বোর্ডের সভা ডেকেছেন রওশন এরশাদ।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জাতীয় পার্টির পার্লামেন্টারি বোর্ড গঠন করেন বেগম রওশন এরশাদ। রংপুর-৩ আসনে উপনির্বাচনে প্রার্থী নির্বাচনের জন্য গঠিত ১৩ সদস্যের পার্লামেন্টারি বোর্ডে রয়েছেন গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদেরের নামও।

এ সংক্রান্ত চিঠিতে রওশন লিখেছেন, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ এমপি জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্রের ২১ ধারা মোতাবেক আসন্ন রংপুর-৩ নির্বাচনী এলাকার শূন্য আসনের উপনির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মনোনীত করার লক্ষ্যে নিম্নলিখিত প্রেসিডিয়াম সদস্যদের সমন্বয়ে জাতীয় পার্টির পার্লামেন্টারি বোর্ড গঠন করলেন।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে রওশন এরশাদ এমপি স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে রওশন এরশাদকে চেয়ারম্যান করা হয়েছে। সদস্য সচিব করা হয়েছে মশিউর রহমান রাঙ্গাকে। অন্যদের মধ্যে সদস্য হিসেবে রয়েছেন-গোলাম মোহাম্মদ কাদের, ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, রুহুল আমিন হাওলাদার, মুজিবুল হক চুন্নু, কাজী ফিরোজ রশীদ, অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খান, গোলাম কিবরিয়া টিপু, ফখরুল ইমাম, সুনীল শুভ রায়, আতিকুর রহমান আতিক ও মজিবর রহমান সেন্টু।


সৌজন্যে : জাগোনিউজ২৪

সিলেটভিউ২৪ডটকম/০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯/জিএসি

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন