আজ শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ইং

যুবলীগ চেয়ারম্যান সম্ভবত গণভবনে যাবেন না: হারুনুর রশীদ

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-১০-১৭ ১৮:৩৬:৩৩

সিলেটভিউ ডেস্ক :: যুবলীগের সপ্তম জাতীয় কংগ্রেস ২৩ নভেম্বর। কংগ্রেস সামনে রেখে সংগঠনটির নেতাদের সঙ্গে বসছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২৩ অক্টোবর বিকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন যুবলীগের শীর্ষ নেতারা। তবে এ বৈঠকে অংশ নিচ্ছেন না সংগঠনটির চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী। এ তথ্য জানিয়েছেন যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ।

সংগঠনটির একাধিক নেতা জানান, ক্যাসিনোকাণ্ডে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ ওঠায় যুবলীগ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে গণভবনে যাওয়ার নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে বৈঠকের শিডিউল আনতে যাওয়া এক নেতাকে সরকারপ্রধান সাফ জানিয়ে দিয়েছেন- যুবলীগের বিতর্কিতরা যেন গণভবনের অনুষ্ঠেয় ওই বৈঠকে না থাকে। এ কারণে যুবলীগের শীর্ষ নেতারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলেও যেতে পারছেন না ওমর ফারুক চৌধুরী।

সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে গ্রেফতার করা হয় যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ ভূঁইয়া, যুবলীগ নেতা জি কে শামীমসহ অনেকেই। যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর সম্পৃক্ততাও বেরিয়ে আসে। তার আলোকে ইতিমধ্যেই ওমর ফারুক চৌধুরীর ব্যাংক হিসাব তলব করা ছাড়াও তার বিদেশে যাত্রার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এর পর থেকেই আড়ালে চলে যান ওমর ফারুক। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তাকে ছাড়াই সম্মেলনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন সংগঠনটি। গত শুক্রবার তাকে ছাড়াই হয়েছে যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সভা।

ওই সভায় সম্মেলনের আয়োজন নিয়ে আলোচনা করা ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করা নিয়েও আলোচনা হয়। সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে, যুবলীগের সম্মেলন সামনে রেখে এ সংক্রান্ত দিকনির্দেশনা ও পরামর্শ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকেই নেয়া হবে। সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে পরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য ‘আবেদন’ জানায় নেতারা।

বুধবার গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কণফারেন্সে বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন। ওই অনুষ্ঠান শেষে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একান্তে কথা বলেন হারুনুর রশীদ। প্রথমে আগামী শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার দিনক্ষণ ঠিক হয়। কিন্তু ওই দিন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট ছেলে শেখ রাসেলের জন্মদিন হওয়ায় যুবলীগ নেতাদের সাক্ষাতের দিন রোববার ঠিক করা হয়। একটি সূত্র জানায়, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী সাফ জানিয়ে দেন কোনো বিতর্কিত নেতাকে যেন গণভবনে নিয়ে না আসা হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ বুধবার রাতে যুগান্তরকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের রোববার দেখা করার সময় দিয়েছেন। তবে ওমর ফারুক চৌধুরী ও নুরুন্নবী শাওনকে না রাখার বিষয়ে কোনো নির্দেশনার কথা আমাকে বলেননি। তবে আমার ধারণা চেয়ারম্যান মহোদয় সম্ভবত যাবেন না। কারণ বেশ কিছু দিন হল তিনি সংগঠনের কার্যক্রম থেকে নিজেকে দূরে রেখেছেন। এ বিষয়ে জানতে ওমর ফারুক চৌধুরীকে তার মোবাইলে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ধরেননি।

প্রসঙ্গত ১৪ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির এক সভায় চাঁদা দাবির অভিযোগে ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও গোলাম রাব্বানীকে অপসারণের নির্দেশ দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি যুবলীগ নেতাদের বিষয়েও চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। বলেন, যুবলীগের এক নেতা অস্ত্র উঁচিয়ে চলে। আরেকজন প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি করে বেড়ায়।

এর পর গণমাধ্যমে যুবলীগ নেতাদের সংশ্লিষ্টতায় ঢাকার ৬০টি জায়গায় ক্যাসিনো পরিচালনার খবর প্রকাশ হয়। ১৮ নভেম্বর ফকিরাপুলের ইয়াংমেনস, ওয়ান্ডারার্স এবং গুলিস্তানে মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়া সংসদে অভিযান চালিয়ে ক্যাসিনোর সরঞ্জাম, বিপুল পরিমাণ মদ ও ৪০ লাখের বেশি টাকা উদ্ধার করে র‌্যাব। ক্যাসিনো পরিচালনার অভিযোগে ওই দিনই যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গ্রেফতার করা হয়, যিনি ইয়াংমেনস ক্লাবের সভাপতি ছিলেন।

পাশের ওয়ান্ডারার্স ক্লাব থেকেও জুয়ার সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। এ ক্লাব পরিচালনার নেতৃত্বে ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওসার। এর পর ধানমণ্ডির কলাবাগান ক্রীড়াচক্রে অভিযান চালিয়েও ক্যাসিনো চালানোর প্রমাণ পায় র‌্যাব। অস্ত্র-গুলি ও ইয়াবাসহ গ্রেফতার করা হয় ক্লাবের সভাপতি কৃষক লীগের সহসভাপতি শফিকুল আলম ফিরোজকে।

এর মধ্যে যুবলীগ নেতা পরিচয় দিয়ে ঠিকাদারি করা গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জিকে শামীমকে গ্রেফতার করা হয়। পরে গ্রেফতার করা হয় মোহামেডান ক্লাবের ডিরেক্টর ইনচার্জ ও বিসিবির পরিচালক লোকমান ভূঁইয়াকে।

দুবাই থেকে গ্রেফতার করা হয় শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানকে। পরে গ্রেফতার করা হয়েছে ক্যাসিনো সম্রাট যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটকে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চলমান অভিযানকে ‘শুদ্ধি অভিযান’ নাম দিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সন্ত্রাস, চাঁদবাজি, টেন্ডারবাজিসহ বিভিন্ন অনিয়মে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ক্যাসিনো ব্যবসায়ীদের ভাসানচরে পাঠানো হবে।

ক্যাসিনো ব্যবসায় যুবলীগ নেতাদের মদদ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে। এরই মধ্যে তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। তলব করা হয়েছে ব্যাংক হিসাব।


সৌজন্যে : যুগান্তর
সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৭ অক্টোবর ২০১৯/জিএসি

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন