আজ শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ইং

‘যুবলীগের পদ পেলে ভিসি পদ ছাড়ব’ মীজানের বক্তব্যের সমালোচনায় যা বললেন রিজভী

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-১০-২০ ১৬:৪১:১৩

সিলেটভিউ ডেস্ক :: ‘যুবলীগের চেয়ারম্যান করা হলে ভিসি পদ ছেড়ে দেব’- জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মীজানুর রহমানের এই অবস্থানের কড়া সমালোচনা করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহল কবির রিজভী। তিনি বলেছেন, গণভবনের আনুকূল্য একজন উপাচার্যকে কতটা রুচিহীন, অমার্জিত ও অসংস্কৃত করে তুলতে পারে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মীজানুর রহমান তার উদাহরণ।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন, গত একদশকে দেশে দুর্নীতি-অনাচার-দুর্বৃত্তায়ন এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, চরিত্রহীন সুবিধাবাদী মানুষেরা আওয়ামী লীগকে মনে করছে টাকা বানানোর হাতিয়ার। এই আওয়ামী জাহেলিয়াতের আমলে অবস্থা এতটাই বিপর্যয়কর অবস্থায় পৌঁছেছে, এই দেশে এখন একজন উপাচার্য, ভিসি পদের চেয়ে যুবলীগের নেতা হওয়াকে বেশি গৌরবজনক মনে করছে। গণভবনের আনুকূল্য একজন উপাচার্যকে কতটা রুচিহীন, অমার্জিত ও অসংস্কৃত করে তুলতে পারে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মীজানুর রহমান তার উদাহরণ।

তিনি বলেন, এই উন্মাদ একনায়কতন্ত্রের যুগে আমাদের রাষ্ট্র, সমাজ ও চিন্তা-চেতনায় যে পচন ধরেছে, একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের আকাঙ্ক্ষা তারই নগ্ন বহিঃপ্রকাশ। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে স্থায়ী ও সম্ভ্রমপূর্ণ বিদ্যাপীঠ গড়ে তোলার বদলে ভাইস চ্যান্সেলরের দিবাস্বপ্ন যুবলীগের চেয়ারম্যান হওয়া। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পদ ভাইস চ্যান্সেলরের মতো মহিমান্বিত পদকে কলুষিত করলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি মীজানুর রহমান।

বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, জুয়া-ক্যাসিনো ও অবৈধ টাকা মিশ্রিত একটি প্রতিষ্ঠানের নাম হয়ে পড়েছে যুবলীগ। স্বাধীনতা-উত্তর জেলা শহরগুলোতে যুবলীগের নেতারা ছিলেন মূর্তিমান আতঙ্ক। একদা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভাইস চ্যান্সেলররা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর বা দেশের রাষ্ট্রপতি হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। আর এখন তারা যুবলীগের সভাপতি হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নিয়োগ পেয়েও মীজানুর রহমান এখনও যুবলীগ তথা ক্যাসিনো লীগের প্রেসিডিয়ামের ১ নম্বর সদস্য হিসাবে আছেন! এই পদটি ছাড়েননি! কতটা নির্লজ্জ, নির্বোধ ও দলকানা হলে ভিসির মতো পদ ছেড়ে তিনি যুবলীগের সভাপতি হতে চান! এ থেকে স্পষ্ট যে, মীজানুর রহমানরা ক্যাসিনোর হিসাবটা বুঝে গেছেন, এখন নতুন সম্রাট হতে তিনি খুবই আগ্রহী!

রিজভী বলেন, ভিসি মীজান যোগ্য ছিলেন যুবলীগের হাতুড়ি বাহিনীর নেতা হওয়ার। উনাকে করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। দীর্ঘদিনের শ্রদ্ধা-সম্ভ্রমের এই পদটিকে কলঙ্কিত করছেন ড. মীজান। এই সরকারের পচনটা মাথায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আখতারুজ্জামানের সমালোচনা করে তিনি বলেন, সরকার এখন কুশিক্ষা-অশিক্ষায় একটি দলীয় বুদ্ধিজীবী শ্রেণি তৈরি করার ব্রত নিয়েছেন। ফলে প্রথিতযশা শিক্ষাবিদদের অবজ্ঞা করে উপাচার্য করা হচ্ছে নিম্নরুচির দলীয় কর্মীদের। ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির গর্ব ১০ টাকায় চা-সিঙ্গাড়া, রাজশাহীর ভিসির স্বপ্ন জয় হিন্দ প্রতিষ্ঠা, বুয়েটের ভিসি হল ডরমিটরিতে তার পালিত ক্যাডারদের হাতে আবরার ফাহাদের নৃশংস হত্যাকাণ্ডকে বলে অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু। সমাজের এই চরম অবক্ষয়ের জন্য দায়ী জবাবদিহিহীন রাষ্ট্রব্যবস্থা। যে রাষ্ট্র দখল করে আছে একটি ভোট ডাকাত অবৈধ সরকার। তাদের বিদায় না ঘটানো পর্যন্ত এই পচন বন্ধ করা সম্ভব নয়।

প্রসঙ্গত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান যুবলীগের বর্তমান কমিটির সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য। তিনি সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনকে বলেছেন- যুবলীগের ভাবমূর্তি ফেরাতে চেয়ারম্যান হিসেবে আমাকে দায়িত্ব দেয়া হলে পালন করতে রাজি আছি। এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদ ছাড়তেও কোনো দ্বিধা নেই।

তিনি বলেন, উপাচার্য হিসেবে আমি দ্বিতীয় মেয়াদে প্রায় সাত বছর দায়িত্ব পালন করছি। যুবলীগ আমার প্রাণের সংগঠন। আমি অবশ্যই যুবলীগ চেয়ারম্যানের পদকে গুরুত্ব দেব।

এ বিষয়ে তিনি জানান, এর আগে তিনি যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর ১নং সদস্য হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর তিনি আর যুবলীগের সঙ্গে কোনো সংযোগ রাখেননি। যুবলীগের কোনো প্রোগ্রামেও যান না।

উপাচার্য বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের চেয়ে যুবলীগের চেয়ারম্যান পদকে বেশি প্রাধান্য দিই। তবে উপাচার্য হিসেবে একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রতিনিধিত্ব করি।

তিনি বলেন, সম্প্রতি সময়ে ক্যাসিনোকাণ্ডে কোটি কোটি তরুণ বিভ্রান্ত হয়েছেন। এই সংগঠনের জন্য অনেক কষ্ট করেছি। এখন সংগঠনটি একটি সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। কোটি তরুণকে ফের সঠিক পথে আস্থার মধ্যে ফেরাতে আমাকে এ দায়িত্ব দেয়া হলে আমি তা পালন করব।

সামনে যুবলীগের কাউন্সিল, তিনি চেয়ারম্যান পদে লড়বেন কিনা জানতে চাইলে ড. মীজানুর রহমান বলেন, না। নিজে থেকে আমি কোনো পদ চাইব না। কখনও কোনো পদ চাইনি। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি আমাকে দায়িত্ব দেন, তা হলে আমি উপাচার্য পদ ছেড়ে দিয়ে যুবলীগের পদে দায়িত্ব পালন করব।

যুবলীগের নেতৃত্বের বয়সসীমা নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে উপাচার্য বলেন, এটা নেত্রী চাইলে বেঁধে দিতে পারেন। এখন যিনি চেয়ারম্যান তার বয়সটা অনেক বেশি। এটি তো আগে ছিল না। তবে বেঁধে দেয়ার আগে গড় আয়ু যে বেড়েছে, সেটি বিবেচনায় নিতে হবে।


সৌজন্যে : যুগান্তর
সিলেটভিউ২৪ডটকম/২০ অক্টোবর ২০১৯/জিএসি

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন