আজ বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ইং

আত্মসাতের জন‌্য ডিসিসি মার্কেটে আগুন: বিএনপি

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৭-০১-০৬ ১৭:২৫:৩১

সিলেটভিউ ডেস্ক ::  যে বিএনপির সময়ে গুলশানের ডিসিসি মার্কেটের জায়গায় বহুতল বিপণি বিতান নির্মাণের চুক্তি হয়েছিল, সেই বিএনপিই এখন ওই মার্কেট ‘আত্মসাতের চেষ্টায়’ আগুন দেওয়ার অভিযোগ এনেছে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে।

দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী শুক্রবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ তোলেন।

তিনি বলেন, সরকারের কর্মপদ্ধতির ‘ধারাবাহিকতা বিশ্লেষণ’ করে তারা বুঝতে পেরেছেন, গুলশান-১ এর ডিসিসি মার্কেটের অগ্নিকাণ্ড একটি ‘নাশকতা’ এবং এর সঙ্গে ‘শাসক দলের যোগসূত্র’ আছে।

“অপরের ওপর দোষ চাপিয়ে নিজেদের অপকর্ম বা ব্যর্থতাকে আড়াল করতেই এরা বিবৃতি ও বক্তব্য দিয়ে থাকে। আত্মসাৎ করার জন্য ডিএনসিসি মার্কেটে আগুন লাগার ঘটনা একটি পরিকল্পিত নাশকতা।”

সুষ্ঠু তদন্তের অভাবে ওই ঘটনা যাতে ধামাচাপা পড়ে না যায়, কর্তৃপক্ষ ব্যবসায়ীদের যাতে মার্কেট থেকে উচ্ছেদ করতে না পারে সেজন্য সবাইকে ‘সচেতন থাকার’ আহ্বান জানান রিজভী।

“ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ সরকারের লোক দেখানো তদন্ত কমিটি ইতোমধ্যে প্রত্যাখান করেছেন। গোটা দেশের মালিক হওয়ার জন্যই শাসকদল দেশবাসীর সম্পত্তি গ্রাস করে নিতে চাচ্ছে। আমরা নাশকতা সৃষ্টিকারীদের মুখোশ উন্মোচন করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।”

গত সোমবার মধ‌্যরাতের পর রাজধানীর গুলশানে ডিসিসি মার্কেটে ভয়াবহ আগুনে দেড় শতাধিক দোকান পুড়ে যায়।  দীর্ঘ সময় ধরে আগুন জ্বলতে থাকায় দ্বিতল মার্কেট ভবনের একটি অংশ ধসে পড়ে।

গুলশান-১ নম্বরে সিটি করপোরেশনের প্রায় সাত বিঘা জমির ওপর নির্মিত এই বিপণি বিতানে কাঁচা ও পাকা মার্কেট মিলিয়ে দুই অংশে দোকান রয়েছে ছয়শর মত। পুড়ে যাওয়া দোকান মালিকদের অনেকেরই অভিযোগ, সেখানে নতুন ভবন নির্মাণের কাজ পাওয়া ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানই আগুন দিয়েছে।

ঘটনার পরদিন ওই মার্কেট ঘুরে দেখে অগ্নিকাণ্ডের কারণ খতিয়ে দেখতে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের মেয়াদে ২০০৩ সালে তৎকালীন মেয়র সাদেক হোসেন খোকার সময় ডিসিসি মার্কেটের জায়গায় ১৮ তলা গুলশান ট্রেড সেন্টার নির্মাণের দরপত্র দেওয়া হয়। সর্বোচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠান কাজ পেয়েও তা করতে অপারগতা জানালে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতা মেট্রো গ্রুপের আমিন অ্যাসোসিয়েটস ওভারসিজ কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ।

ওই চুক্তিতে বলা হয়, দুই হাজার ২৪টি দোকানের মধ্যে ডিসিসি পাবে ২৭ শতাংশ; আর আমিন অ্যাসোসিয়েটস ৭৩ শতাংশ দোকান পাবে।

বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ওই চুক্তি স্থগিত করার পর আলোচনার ভিত্তিতে ডিসিসির মালিকানা বাড়িয়ে ৩৭ শতাংশ করা হয়। তখন নতুন চুক্তি হলেও দোকান মালিকরা উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করায় ভবন নির্মাণ আর শুরু করতে পারেনি ঠিকাদার কোম্পানি।

সম্প্রতি ওই রিট আবেদনের নিষ্পত্তি হয়ে গেছে জানিয়ে ঢাকা উত্তরের মেয়র আনিসুল হক বৃহস্পতিবার বলেছেন, নতুন ভবন তৈরি হলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা সেখানে অগ্রাধিকার পাবেন।

মঙ্গলবার সকালে ওই মার্কেটে গিয়ে আনিসুল হক সাংবাদিকদের সামনে বলেছিলেন, অগ্নিকাণ্ডের বিষয়টি নাশকতা নয় বলে তিনি ৯৯ শতাংশ নিশ্চিত।

এর সমালোচনায় শুক্রবার নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, “ব্যবসায়ীসহ সকল মহলের দাবিকে পাশ কাটিয়ে এবং কোনো প্রকার তদন্তের পূর্বেই মেয়র সাহেব বললেন যে, আগুন লাগার ঘটনা নাশকতা নয়, এটি একটি দুর্ঘটনা।

“কোনো ঘটনা বা দুর্ঘটনা ঘটলেই প্রধানমন্ত্রীসহ ক্ষমতাসীন দলের নেতৃবৃন্দ ও প্রশাসনের দলীয় কর্মকর্তারা উদ্ভট আগাম মন্তব‌্য করে সুষ্ঠু তদন্তকে বাধাগ্রস্ত করার বিষয়টি রেওয়াজে পরিণত করেছেন।... এতে বোঝা যায়, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সেই ঘটনাটি বোধ হয় ঘটানো হয়েছে। না হলে তারা আগাম মন্তব্য করবেন কেন?”

অন‌্যদের মধ‌্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, কেন্দ্রীয় নেতা সানাউল্লাহ মিয়া, এম এ মালেক, আবদুস সালাম আজাদ, আসাদুল করীম শাহিন, মুনির হোসেন, সুলতানা আহমেদ, হাফেজ আবদুল মালেক ও শাহ নেসারুল হক সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।


সিলেটভিউ২৪ডটকম/০৬ জানুয়ারি ২০১৭/ডেস্ক/এসডি

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন