আজ শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ইং

বিশ্বকাপে ক্রিকেট আনন্দে বাংলাদেশ ভাসে

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৬-২৪ ১৫:৪৩:৩৩

আল-আমিন :: আমি যখন এই লেখাটি লিখতে বসেছি তখন বাংলাদেশ ক্রিকেট দল বিশ্বকাপের সেমিফাইলে যাওয়ার সুযোগ ফিফটি ফিফটি। আমি ক্রিকেট খেলা দেখি তবে ভাত পানি ছেড়ে দিয়ে একেবারে কখনো দেখি না। কারন আমার এই ধৈর্যত এখনো তৈরী হয় নি। তবে বাংলাদেশ টিমের খেলা পুরো ইনিংস দেখার চেষ্টা করি। কারণ বাসায় বড় ভাই, ছোট ভাই মাহিন, ছোট বোন, ভাবিরা খেলার দিন এক প্রকার পুরো প্রস্তুতি নিয়ে থাকেন, এই দিন অনেকেই হাতে কোনো কাজ রাখেন না। তাই আমিও তাদের সাথে টিভির রুমে এসে যুক্ত হই এবং আমি পুরো ম্যাচ দেখার চেষ্টা করি।

বাংলাদেশের টিমের খেলার দিন শুরু থেকে বাসায় এক ধরনের উৎসব উৎসব আমেজ অনুভূত হয়। এই উৎসব চলমান থাকে খেলা শেষ হওয়ার পূর্ব পযর্ন্ত। বাংলাদেশ টিম জয় লাভ করলে এই উৎসবের সময়ের পরিধি বেড়ে যায় পরের দিন পযর্ন্ত। খেলা চলমান সময়ে চলে ভাই বোনের মধ্যে নানা সমীকরন, নানান হিসাব নিকাশ। খেলা সর্ম্পকে এবং আমাদের সবার উচ্ছ্বাস ও সমীকরণ সর্ম্পকে আব্বা আবডেট খবর নেন। আর এই দায়িত্ব পুরোপুরিভাবে পালন করে থাকেন মাহিন। আমিও তাদের সাথে সমীকরণ মেলাতা যাই। কিন্তু আমার সমীকরণ তারা গ্রহন করতে চায় না। তাদের ধারণা ক্রিকেট খেলা সর্ম্পেকে আমার জ্ঞান শূণ্য। কারণ আমি তাদের মতো ক্রিকেট খেলা নিয়ে বেশি উচ্ছ্বাসিত হই না।

২০০৭ সালের বিশ্বকাপ থেকে আমি ক্রিকেট খেলা সর্ম্পকে ধারণা গ্রহণ করতে থাকি। তখন আমি এসএসসি সমামান পরীক্ষা দিয়ে অবসর সময় পার করছিলাম। ঐ বিশ্বকাপে হাবিবুল বাশার সুমনের অধিনায়কত্বে বাংলাদেশ প্রথম বারের মতো সুপার এইটে জায়গা করে নেন। আমি সেই সময় থেকে ক্রিকেট খেলা সর্ম্পকে এবং একজন ক্রিকেট প্রেমী সর্মথক ও দর্শক হিসেবে যা জানার আমি তা আয়ত্ব করার চেষ্টা করি এবং খেলা ইনজয় করি। তারপরও আমি তাদের কাছে এখনো ক্রিকেট সর্ম্পকে পুরোপুরি জ্ঞান অর্জন করতে পারিনি। আজও অনেক ভয়ে ভয়ে লিখছি এই লেখাটি। কারণ আমি এখনো আমার ভাই বোনের চোখে ক্রিকেট সর্ম্পকে একজন অপরিপক্ক এবং অনিয়মিত একজন দর্শক। তারপরও লিখছি কারণ আমি সবার মতো বাংলাদেশ ক্রিকেট টিম কে ভালোবাসি। বাংলাদেশ টিম জিতে গেলে আমার অহংকার হয়। আমি গর্ব করি। লাল সবুজের পতাকা উচু করে বলতে ইচ্ছে করে "ও পৃথিবী এবার এসে বাংলাদেশ নাও চিনে।"

বর্তমান বিশ্ব ক্রিকেট একটি অন্যতম জনপ্রিয় খেলা। বাংলাদেশ খুব অল্প সময়েই এই খেলায় সফলতা অর্জন করেছে। বিশ্ব ক্রিকেট বাংলাদেশের এই সফলতা সত্যিই গর্বের বিষয়। আজ ক্রিকেট বিশ্বে সাফল্যের পতাকা উড়িয়ে উজ্জ্বল করেছে দেশের সম্মান। তাই এ দেশের মানুষের কাছে ক্রিকেট খেলা অত্যন্ত আনন্দের গর্বের। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাস থেকে জানা যায়, স্বাধীনতার পূর্ব সময় থেকে বাংলাদেশে ক্রিকেটের হাতেখাড়ি ঘটে। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর একচোখা স্বভাব ও স্বার্থপরতার বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে অন্যান্য সেক্টরের মতো বাংলাদেশ ক্রিকেটও পৃষ্ঠপোষতার মুখ দেখেনি। তাই ঐ সময়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট মুখ থুবড়ে পড়েছিল। কিন্তু বাঙালি জাতি তাদের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মুক্তির আন্দোলনের সাথে সাথে নিজস্ব সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে আগলে রেখেছিল বলেই ক্রিকেটে আমাদের আজকের এই অবস্থান। স্বাধীনতা উত্তরকালে বাংলাদেশ যখন অবকাঠামোগত বিনির্মানে উন্নতি লাভ করে তখন ক্রিকেটের প্রতিও যতœবান হয়। আর এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ আই.সি.সি’র সদস্যপদ লাভ করে এবং আই.সি.সি’র সদস্য হওয়ার পর বাংলাদেশ নিজেদেরকে বিশ্বের দরবারে উপস্থাপনের সুযোগ পায়।

১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ প্রথমবারে মতো স্বপ্নের বিশ্বকাপ ক্রিকেটে অংশ নেয় এবং অসাধারণ খেলা প্রদর্শন করে। এক সময়কার বিশ্বকাপ জয়ী ক্রিকেটের পরাশক্তি পাকিস্তান এবং স্কটল্যান্ডকে হারিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট গোটা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেয়। এরপর বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে অস্ট্রেলিয়াকে পরিজিত করে বাংলাদেশ বিশ্ববাসীকে অবাক করে দেয়। কেনিয়া ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ জয় করে ২০০৭ সালের বিশ্ব কাপের প্রস্তুতি ম্যাচে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ ক্রিকেটের দ্বিতীয় পর্বে পা রাখে। দ্বিতীয় রাউন্ডে ক্রিকেট পরাশক্তি দক্ষিণ আফ্রিকাকে পরাজিত করে দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনে। গেল ২০১৫ সালের বিশ্বকাপের আসরে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার গৌরব অর্জন করে। ঐ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিজয় আরোও এগিয়ে যেতে পারত। কিন্তু নিলজ্জ আম্পায়ারিং এর শিকার হয়ে বাংলাদেশ ভারতের সাথে কোয়ার্টার ফাইনালে পরাজিত হয়। এ দিন মাঠের দুই আম্পায়ার পাকিস্তানের আলিমদার ও ইংল্যান্ডের ইয়ান গোল্ড এবং টিভি আম্পায়ার অস্ট্রেলিয়ার স্টিভ ডেভিস বাংলাদেশের বিপক্ষে কয়েকটি ভুল সিদ্ধান্ত দেন। এই দিন আমি অন্যান্যদের সাথে পুরো ম্যাচ টিভির সামনে বসে দেখি এবং ক্ষোভে তাদের প্রতি নিন্দা জানাই। যা বিশ্বব্যাপীও সমালোচিত হয়েছে এবং অনেক তারকা খেলোয়াড় এর নিন্দা জানিয়েছে। বাংলাদেশের ক্রিকেট সমর্থকেরাও ক্ষোভে তাদেরকে ঘৃণা করেছে। এরপর থেকে আমার বড় ভাই ইন্ডিয়াকে একক কোনো টিম ভাবেন না। তিনি মনে করেন ইন্ডিয়া ও আইসিসি যৌথভাবে এক টিম হয়ে ক্রিকেট খেলে।

এরপরও ২০১৫ এর বিশ্বকাপে বাংলাদেশের অর্জন ছিল বেশ পরিপূর্ণ। ঐ বিশ্বকাপেই বাংলাদেশের মিডল অর্ডারের ব্যাটসম্যান মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ প্রথম বারের মতো বিশ্বকাপে সেঞ্চুরি করার কীর্তি স্থাপন করেন এবং তিনি পরপর দুটি ম্যাচে শতরান করেন। যা বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে একটি উল্লেযোগ্য ঘটনা। এছাড়া বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ৯টি উইকেট লাভ করেছিলেন ফাস্ট বোলার তাসকিন আহমেদ এবং বাংলাদেশের প্রতিটি খেলোয়াড় এ এযাবতকাল বিশ্বকাপে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ভালো পারফরম্যান্স প্রদর্শন করেন। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম দল ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপ জয়ী পাকিস্তানকে ওয়ানডে ক্রিকেটে হোয়াইটওয়াশ করে সিরিজ জয় করার গৌরব অর্জন করে। বাংলাদেশ এখন একাদিক ওয়ানডে সিরিজ জয় করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। তাই বাংলাদেশের সকল দর্শকদের মতো আমিও প্রত্যাশা করি বাংলাদেশের ক্রিকেট জয় করবে বিশ্বকাপ।

এবারের ২০১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেট শুরু থেকেই মাশরাফি সাকিবদের অর্জন বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য নিঃসন্দেহে আমাদেরকে অনেক আশাবাদী করেছে। বাংলাদেশ ইতিমধ্যে ছয়টি ম্যাচ খেলে নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ড ও অস্টেলিয়ার কাছে পরাজয় হলেও দক্ষিণ আফ্রিকা ও ওয়েষ্টিন্ডিজের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ বড় ব্যবধানে জয় লাভ করে এবং শ্রীলংকার সাথে বৃষ্টির কারণে পরিত্যাক্ত হয়ে সমতায় সমান ভাগে পয়েন্ট ভাগাভাগি করে। যদিও শ্রীলংকার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের বড় ব্যবধানে জয় লাভ করার আশা ছিল বাংলাদেশের ক্রিকেট প্রেমীদের।
বাংলাদেশের ক্রিকেট এগিয়ে যাচ্ছে একদিন বিশ্বকাপ জয় করে বাংলাদেশের মাটিতে আসবে।শুভ কামনা লাল সবুজের বাংলাদেশ।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ ২৪ জুন ২০১৯/ প্রেবি/ শাদিআচৌ

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন