আজ বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ইং

৭৫ ভাগ খেলার নিজস্ব ভেন্যুই নেই, কয়েকটির আবার ‘রাজপ্রাসাদ’

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০২-১৫ ২১:৩১:৪০

সিলেটভিউ ডেস্ক :: দেশে ক্রীড়া ফেডারেশন ও অ্যাসোসিয়েশন মিলে সংখ্যাটা ৫৩। কিন্তু এর পচাত্তর ভাগ খেলারই নেই অনুশীলনের নিজস্ব বা নির্দিষ্ট কোনো জায়গা। পুরনোগুলোর অনুশীলসহ পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করতে না পারলেও প্রতি বছর ফেডারেশন ও অ্যাসোসিয়েশন জন্ম দিচ্ছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। তাই সংখ্যাটা ধাবমান সেঞ্চুরির দিকে। দিনদিন ফেডারেশন ও অ্যাসোসিয়েশন বাড়ছে, সেই সাথে বাড়ছে অনুশীলনের সংকট।

দুই মাস পেছনে তাকালেই সবার কাছে পরিস্কার হবে দেশের ক্রীড়া ফেডারেশন ও অ্যাসোসিয়েশনগুলোর মানদন্ড। কোন খেলার কী সম্ভাবনা সেটা কাঁচের মতো পরিস্কার। বৃক্ষ তোমার নাম কী, ফলে পরিচয়। এই ফল বিবেচনা করলেই বোঝা যাবে কোন ফেডারেশনের কী দক্ষতা।

সেই মানদন্ডের নাম সাউথ এশিয়ান (এসএ) গেমস। যার ১৩তম আসর বসেছিল নেপালে ১ থেকে ১০ ডিসেম্বর। গেমসের ইতিহাসে এবার সবচেয়ে বেশি ১৯টি স্বর্ণ পেয়েছে বাংলাদেশ।

মজার বিষয় হলো, যে খেলাগুলোয় স্বর্ণ এসেছে তাদের বেশিরভাগের নেই পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা। কর্মকর্তাদের বসার ভালো জায়গা নেই। নেই অনুশীলনের নির্দিষ্ট কোনো জায়গাও। যাযাবরের মতো আজ এখানে তো কাল আরেক জায়গায় অনুশীলনের জন্য ছোটাছুটি। কখনও কখনও থাকতে হয় অন্য কোনো খেলার অনুশীলন শেষ হওয়ার অপেক্ষায়। নানা সমস্যা ঠেলে এগিয়ে চলা সেরকম কিছু খেলাই দেশকে এনে দিয়েছে সম্মান।

এসএ গেমসে বাংলাদেশ অংশ নিয়েছিল ২৫টি ডিসিপ্লিনে। এর মধ্যে স্বর্ণের খাতায় নাম লেখাতে পেরেছে ৬টি- আরচারি, কারাতে, ক্রিকেট, ভারোত্তোলন, তায়কোয়ানদো ও ফেন্সিং। রৌপ্য পর্যন্ত যেতে পেরেছে ৮ খেলা- অ্যাথলেটিকস, বক্সিং, গলফ, খে খো, শুটিং, সাঁতার, কুস্তিু ও উশু। খালি হাতে ফিরেছে পাঁচটি- বাস্কেটবল, সাইক্লিং, স্কোয়াশ, টেনিস ও ভলিবল। বাকিগুলোর ছিটেফোটা শান্তনা ব্রোঞ্জ। সেগুলো হলো- ব্যাডমিন্টন, ফুটবল, হ্যান্ডবল, জুডো, কাবাডি ও টেবিল টেনিস।

স্বর্ণ জেতা খেলাগুলোর মধ্যে ক্রিকেটই স্বয়ংসম্পূর্ণ। সবচেয়ে বেশি ১০ স্বর্ণ জেতা আরচারির অনুশীলনের জন্য অবশ্য টঙ্গীর আহসান উল্লাহ মাস্টার স্টেডিয়াম বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বাকি চারটি কারাতে, ভারোত্তোলন, তায়কোয়ানদো ও ফেন্সিংয়ের অনুশীলন হয় অন্যদের সঙ্গে ভেন্যু ভাগাভাগি করে।

শূন্য হাতে আসা পাঁচ খেলার মধ্যে নিজস্ব ভেন্যু আছে বাস্কেটবল, টেনিস ও ভলিবলের। আর নামমাত্র ব্রোঞ্জ পাওয়া খেলাগুলোর মধ্যে ‘আলীশান ভেন্যু’ নিয়ে আছে ব্যাডমিন্টন, ফুটবল, হ্যান্ডবল, কাবাডি ও টেবিল টেনিস। পল্টন ময়দানে বিশাল জায়গা নিয়ে গড়ে ওঠা শেখ রাসেল রোলার স্কেটিং কমপ্লেক্স এককভাবে ব্যবহার করে রোলার স্কেটিং ফেডারেশন। দেশের অপ্রচলিত এ খেলাটি তো এসএ গেমসেই ছিল না।

দক্ষিণ এশিয়ার গেমসে যে খেলাগুলো নিয়ে প্রত্যাশা থাকে তাদের মধ্যে অন্যতম সাঁতার ও শ্যুটিং। দুটি খেলারই আছে নিজস্ব ভেন্যু ও সবধরনের সুযোগ-সুবিধা। কিন্তু দুটির একটিও এবার স্বর্ণ জিততে পারেনি। আগের গেমসে এই দুই খেলায় তিনটি স্বর্ণ ছিল বাংলাদেশের।

দেশের খেলাধুলার প্রাণকেন্দ্র রাজধানীর পল্টন ময়দান এবং এর আশপাশের এলাকা। দেশের প্রধান ক্রীড়া ভেন্যু বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামসহ এ এলাকায় আছে ১১টি ক্রীড়া স্থাপনা। বেশিরভাগ ক্রীড়া ফেডারেশন ও অ্যাসোসিয়েশনের কার্যালয়ও এ অঞ্চলে।

বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম ও এর আশপাশ মিলে যে ১১ টি ক্রীড়া স্থাপনা আছে সেগুলোর মধ্যে ৭টিই এককভাবে ব্যবহার করে- হকি, কাবাডি, ভলিবল, বক্সিং, রোলার স্কেটিং, হ্যান্ডবল ও সুইমিং। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম ফুটবল ও অ্যাথলেটিকসের হলেও এখানে জাতীয় অনুষ্ঠানও হয়ে থাকে। রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনে তাদের ভেন্যু ছেড়ে দিতে হয়।

পল্টনের শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ জিমন্যাসিয়াম ব্যাডমিন্টন ও টেবিল টেনিস ব্যবহার করে। সুইমিংপুলের সামনে জিমন্যাসিয়ামটিতে অনুশীলন হয় ভালোত্তোলন ও শরীর গঠন ফেডারেশনের। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের জিমন্যাসিয়ামটি তায়কোয়ানদো, কুস্তি ও জিমন্যাস্টিকস ভাগাভাগি করে ব্যবহার করে।

মার্শাল আর্টের আরও কয়েকটি খেলাও এখানে তাদের কর্মসূচিগুলো করে থাকে। মিরপুর শহীদ সোহরাওয়ার্দী ইনডোর স্টেডিয়ামে অনুশীলনের সুযোগ কারাতে, উশু, জুডো আর ফেন্সিংয়ের। ভলিবলের ক্যাম্পও হয়ে থাকে এই ইনডোরে।

পরিসংখ্যান বলছে, দেশের পচাত্তর ভাগ খেলার নিজস্ব ভেন্যু না থাকলেও কয়েকটির আছে আবার রীতিমতো ‘রাজপ্রাসাদ’। নিজস্ব আলীশান ভেন্যু নিয়ে বসে থাকা এই ফেডারেশনগুলোই ডাব্বা মেরেছে এসএ গেমসে। ‘রাজপ্রাসাদ’ দখলে থাকলেও তাদের ফলাফল জিরো।

টেনিস, বাস্কেটবল, হ্যান্ডবল, ভলিবল, কাবাডি, সাঁতার, শুটিং, ফুটবল, রোলার স্কেটিং, বক্সিং, টেবিল টেনিস, ব্যাডমিন্টন, হকি- এসব খেলা বড়সড় ভেন্যু নিয়ে আছে। কিন্তু এসএ গেমসে স্বর্ণ উপহার দেয়া কারাতে, তায়কোয়ানদো, ফেন্সিংয়ের সে সুযোগ নেই। ভারোত্তোলনের অনুশীলনের ব্যবস্থা থাকলেও তা মানসম্পন্ন নয়।

যেহেতু রাতারাতি সব খেলার ভেন্যু তৈরি সম্ভব নয়, তাই যে ভেন্যুগুলো একক খেলার দখলে আছে সেগুলোতে আরও কিছু ডিসিপ্লিনের অনুশীলনের সুযোগ করে দেয়ার কথা ভাবছে সরকার। শীঘ্রই এ বিষয়ে একটা নীতিমালা তৈরি করা হতে পারে বলে আভাস দিলেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল এমপি।

নিজেদের খেলা চালানোর পর বাকি সময় বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার কাছে স্থাপনা ভাড়া দেয়ার অভিযোগও উঠেছে কোনো কোনো ফেডারেশনের বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, ‘যে অভিযোগ আমার কানে এসেছে সেটা সত্যি হলে দুঃখজনক। কারণ ভেন্যুগুলো জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের, রক্ষনাবেক্ষণ করে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ, বিদ্যুৎ বিলও গুনে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। আর ভাড়া দিয়ে অর্থ উপার্জন করবে ফেডারেশন? এটা হতে পারে না। আমরা এসব স্থাপনায় আরও কিছু খেলার অনুশীলনের সুযোগ করে দিতে চাই।’

ক্রীড়া স্থাপনাগুলোকে বহুমুখী ব্যবহারের আওতায় আনতে সেগুলোর নামের সংশোধনের চিন্তাভাবনাও আছে সরকারের। দুই একটি ছাড়া বাকি ভেন্যুগুলো কোনো নির্দিষ্ট খেলার নামে থাকবে না। কোনো ব্যক্তির নামে স্টেডিয়াম হলে শুধু তার নামেই থাকবে, খেলার নাম উঠিয়ে দেয়ার চিন্তা করছে ক্রীড়া প্রশাসন।

এ বিষয়ে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল এমপি বলেছেন, ‘স্টেডিয়ামের নামের সাথে খেলা উল্লেখ না থাকাই ভালো। আমাদের যেহেতু খেলার চেয়ে ভেন্যু কম তাই যতদিন সব খেলার নিজস্ব ভেন্যুর ব্যবস্থা না হবে ততদিন ক্রীড়া স্থাপনাগুলোকে বহুমুখী ব্যবহারের সুযোগ করে দেয়ার কথা ভাবছি। যেসব ভেন্যু নির্দিষ্ট খেলার দখলে আছে সেগুলোয় আরো ফেডারেশনকে বরাদ্দ দিলে একটি ক্রীড়া স্থাপনা বিভিন্ন খেলার জন্য ব্যবহার করা যাবে।’

সৌজন্যে : জাগোনিউজ২৪
সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০/জিএসি

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন