আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ইং

রিয়ালের জন্য বার্সার সঙ্গে প্রতারণা করেছেন মেসি!

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৭-২৩ ১৮:১৩:২৩

সিলেটভিউ ডেস্ক :: দীর্ঘ ২০ বছর কাটিয়ে দিলেন বার্সেলোনায়। ১৩ বছর বয়সে লা মাসিয়া থেকে যাত্রা শুরু। এরপর সারা বিশ্ব জয় করেছেন লিওনেল মেসি। এই ক্লাবের হয়ে খেলেই ৬টি ফিফা বর্ষসেরা এবং ব্যালন ডি’অর জিতেছেন এই আর্জেন্টাইন তারকা।

কিন্তু দুই দশকে এসে কি না সব ধৈর্য হারিয়ে ফেলেছেন বার্সা অধিনায়ক! স্প্যানিশ লা লিগার শিরোপা তো এর আগেও হারিয়েছেন। এবারও হারালেন। কিন্তু এবার এতটা ধৈর্য হারা হয়ে গেলেন কেন মেসি? এর মূল কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে বার্সা সভাপতি হোসে মারিয়া বার্তেম্যু এবং ফুটবল ডিরেক্টর এরিক আবিদাল।

কয়েক সপ্তাহ আগে থেকেই গুঞ্জন শুরু হয়, এবার আর বার্সায় থাকছেন না মেসি। তিনি দীর্ঘদিনের এই ক্লাবটিকে ছেড়ে যেতে চলেছেন। কারণ, বার্সার সঙ্গে তার চুক্তি নবায়নের বিষয়টাকে এড়িয়ে গেছেন মেসি। তিনি চুক্তি নবায়ন করতে চান না। যেটার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ২০২১ সালের জুনে।

অনেকেই বিশ্বাস করেন, মেসির এই অবস্থানের কারণ বার্সা ক্লাবের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা। যারা ক্লাবটিকে শীর্ষ থেকে একেবারে টেনে নামিয়ে আনছেন তলানীতে। কারণ, ক্লাব সভাপতি হোসে মালিয়া বার্তেম্যু এবং ফুটবল ডিরেক্টর, সাবেক ডিফেন্ডার এরিক আবিদাল বেশ কিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যেগুলো ক্লাবের সুনাম মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন করেছে।

এসব বিতর্কিত সিদ্ধান্তের মধ্যে রয়েছে, সাবেক এবং বর্তমান স্কোয়াডের ফুটবলারদের সম্মানহানি করার জন্য হ্যাকার নিয়োগ দেয়া থেকে শুরু করে খেলোয়াড়দের অসমর্থনযোগ্য চুক্তি সাক্ষর করানো কিংবা বিদায় করে দেয়ার ঘটনাও রয়েছে। অর্থ্যাৎ, এমন কিছু নেই যা বার্সার বোর্ড করেনি।

এই মৌসুমেই এতসব অনিয়ম নিয়ে জ্বলে উঠেছেন। দলের অধিনায়ক মেসি অকপটে স্বীকার করে গেলেন, কিভাবে বার্সেলোনা একটি দল হিসেবে এতটা দুর্বল হয়ে উঠেছে। যাদের চ্যাম্পিয়ন্স লিগে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করার মতও শক্তি-সামর্থ্য নেই তাদের। কয়েক মাস আগেই এ নিয়ে মুন্ডো দেপোর্তিভোর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ফেটে পড়েছিলেন মেসি। এছাড়া দু’বার ইনস্টাগ্রামে এসে বার্সা বোর্ডকে ধুয়ে দিয়েছিলেন আর্জেন্টাইন তারকা।

বার্সা সম্পর্কে আর্জেন্টাইন মহা তারকা যেসব মন্তব্য করে যাচ্ছিলেন, এগুলোর কোনোটাতেই ভুল নেই। ক্লাবটির এখন যে অবস্থা, তা আগে কখনোই ছিল না। সিসে সেতিয়েনের স্কোয়াডের গড় বয়স হচ্ছে ৩০। বার্সা ক্লাবের ইতিহাসে এত বৃদ্ধ কোনো স্কোয়াড আর কখনো ছিল না।

চলতি মৌসুমে এরই মধ্যে তিনটি ট্রফি হারিয়েছে বার্সা। লা লিগা, কোপা ডেল রে এবং স্প্যানিশ সুপার কাপ। বাকি আছে শুধু উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ। ক্লাবের এখন যে অবস্থা, তাতে এই শিরোপাটিও না জেতার সম্ভাবনা বেশি। অর্থ্যাৎ, পুরো একটি মৌসুম শিরোপাশূন্য কাটবে বার্সার। ২০০৭-০৮ মৌসুমের পর এতটা দৈন্য দশা আর কাটেনি বার্সার।

যদিও এখনও আশা টিকে আছে চ্যাম্পিয়ন্স লিগকে ঘিরে। এখানে এখনো টিকে আছে মেসির দল। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিততে হলে কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে সিসে সেতিয়েনকে। এখনও দ্বিতীয় রাউন্ডের দ্বিতীয় লেগ বাকি আছে। অ্যাওয়ে ম্যাচে ন্যাপোলির মাঠে ১-১ গোলে ড্র করে এসেছে বার্সা। ওই ম্যাচে লাল কার্ড দেখার কারণে, ফিরতি লেগে আরতুরে ভিদালকে পাচ্ছে না বার্সা। বার্সার মাঝমাঠে এখন অনেক গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় ভিদাল। তিনি না থাকার অর্থ, বার্সাকে অনেক বড় মূল্য দিতে হতে পারে।

একটি শক্তিশালী স্কোয়াড গঠনের লক্ষ্যে সামনে যে এগিয়ে যাবে বার্সা, সেখানেও ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে এরই মধ্যে। কারণ, আর্থার মেলো এবং মার্ক সুসুরেলাকে এরই মধ্যে বিক্রি করে দিয়েছে তারা। যে দু’জনকে মনে করা হচ্ছিল দারুণ সম্ভাবনাময়ী উঠতি তারকা। এছাড়া রয়্যাল এমরাসনকে অন লোনে রিয়াল বেটিসের কাছে দেয়া থাকলেও বার্সা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাকে বেটিসের কাছেই বিক্রি করে দেয়ার।

বার্সার বর্তমান বোর্ডের যে অবস্থা এবং এ কারণে ক্লাবে যে বিষাক্ত পরিস্থিতি বিরাজমান, তাতে আগামী এক কিংবা দুই বছরের মধ্যে অনেক সিনিয়র খেলোয়াড় ন্যু ক্যাম্প ছাড়তে পারেন। তাদের মধ্যে যেমন রয়েছেন মেসিও। কারণ, কোনো খেলোয়াড়ই চায় না, ডুবন্ত একটি ক্লাবে নিজেদের ক্যারিয়ারকে কঠিন ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিতে।

স্প্যানিশ ক্রীড়া দৈনিক দিয়ারো গোল রিপোর্ট করেছে, লিওনেল মেসি পুরোপুরিভাবে এখন বার্সেলোনাকে ছেড়ে দিয়েছেন। তিনি এখন পুরোপুরি নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত। তিনি এখন দলের হয়ে কিছু জয়ের চেয়ে ব্যক্তিগত অর্জনকেই সবচেয়ে বেশি মূখ্য হিসেবে দেখছেন।

দিয়ারো গোলের এই রিপোর্টই বলে দিচ্ছে, মেসি হয়তো এখন রিয়াল মাদ্রিদকেও পছন্দ করতে শুরু করেছেন তার পরবর্তী গন্তব্য হিসেবে। ম্যানসিটি এবং জুভেন্টাসের চেয়ে রিয়ালই হতে পারে তার পরবর্তী গন্তব্য। এতে করে হয়তো বা রিয়ালকে ১৪তম চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতাতে সাহায্য করতে পারবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর ৬ষ্ঠ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা জয় এবং ৬ষ্ঠ ব্যলন ডি’অরকে ঠেকিয়ে দিতে পারবেন মেসি।

লিওনেল মেসিকে পুরোপুরি স্বার্থপরতার এই পর্যায়ের দিকে ঠেলে দিতে বার্সার বর্তমান বোর্ডের ভূমিকাই সবচেয়ে বেশি মুখ্য। অধিনায়করা সব সময়ই থাকেন বিশ্বের সবচেয়ে কম স্বার্থপর ফুটবলার। কারণ, তারা সব সময়ই প্রাধান্য দেন দলের সাফল্যকে। কিন্তু বার্সেলোনা বোর্ড কি না সেই অধিনায়ক মেসিকেই পুরোপুরি পরিবর্তন করে দিলো। বানিয়ে দিলো দারুণ এক স্বার্থপর ফুটবলারে!


সৌজন্যে : এভরিথিংবার্সা.কম
সিলেটভিউ২৪ডটকম / ২৩ জুলাই, ২০২০ /ডেস্ক/ জিএসি

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন