আজ মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ইং

জগন্নাথপুর-বিশ্বনাথ-সিলেট সড়ক সংস্কার: পানিতে পৌণে ৩ কোটি টাকা

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৭-১১-১৫ ০০:০৫:৩৩

সানোয়ার হাসান সুনু, জগন্নাথপুর :: পৌণে ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে অর্ধযুগ পর সংস্কার করা হয়েছিল জগন্নাথপুর বিশ্বনাথ-সিলেট সড়কের জগন্নাথপুর উপজেলাধীন জগন্নাথপুর উপজেলা সদর থেকে কেউনবাড়ী পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার সড়ক। দীর্ঘদিন পর সংস্কার করা হলেও চার মাসের মধ্যেই সড়কটির পিচ ঢালাই উঠে ভেঙ্গে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।

সরেজমিন সড়কের বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখা যায় অনেক স্থানেই পিচ ঢালাই উঠে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। অত্যান্ত নিম্নমানের বিটুমিন ও নির্মান সামগ্রী দিয়ে কাজ করার ফলে অতি সল্প সময়ে সড়কটি ভেঙ্গে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন। সল্প সময়ে সড়কটি ভেঙ্গে বেহাল দশায় পরিণত হওয়ায় এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই বলছেন সরকারি বরাদ্দকৃত টাকার যথাযথ ব্যবহার করা হচ্ছে না। ফলে পানিতে গেছে পৌণে ৩ কোটি টাকা। ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরাও স্বল্প সময়ে সড়কটি ভেঙ্গে যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। অনেকেই ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে লুটপাটের অভিযোগ তুলেছেন। তারা বলছেন, নামমাত্র দায়সারা কাজ করে মোটা অংকের টাকা লুটপাট করা হয়েছে।

এলজিইডি অফিস সূত্রে জানা যায়, অর্ধযুগ পর চলতি বছরের মার্চে ঐ রাস্তার জন্য ২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা বরাদ্দ করে দরপত্র আহবান করা হলে কাজটি বাগিয়ে নেন নূরা কন্ট্রাকশনের মালিক আওয়ামীলীগ নেতা নাদের আহমদ। প্রথমে দলীয় প্রভাব বিস্তার করে কাজটি বাগিয়ে নিলেও পরে রহস্যজনক কারনে কাজটি করতে বিলম্ব করেন। এক পর্যায়ে মার্চ মাসের শেষ দিকে সড়কের সংস্কার কাজটি শুরু করেন। এসময় নিম্নমানের বিটুমিন ও নির্মানসামগ্রী ব্যবহার করে দায়সারা ভাবে রাস্তাটির কাজ করেন। তাই রাস্তাটি লাটিমের মতো উচুঁ নিচু দেখায়। নিয়ম মত কার্পেটিংও করা হয়নি। রাস্তাটি অদক্ষলোক দিয়ে সংস্কার করা হয়। ঠিকাদার নাদের প্রায় ৪০% কাজ করে রহস্যজনকভাবে কাজ বন্ধ করে দেন। পরে আওয়ালীগ নেতা নুরুল আমীনকে দিয়ে বাকী কাজ করানো হয়। ঐ ঠিকাদার নিম্নমানের বিটুমিন ও ৩নং ইটের কোয়া দিয়ে চলতি জুন মাসের মধ্যে দায়সারা ভাবে কাজ করেন। ফলে স্বল্প সময়ে ৪ মাসের মধ্যেই সড়কটির পিছ ঢালাই উঠে ভেঙ্গে যায়।

জানাগেছে আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল আমিন কাজ করলেও এলজিইডি অফিস থেকে বিল দেওয়া হচ্ছে আওয়ামী লীগ নেতা নাদের আহমদের নামে। তিনি আবার বিল দিচ্ছেন আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল আমীনকে। এসব কিছুই এলজিইডি অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মধ্যে সমঝোতার মাধ্যমে হয়েছে। সড়ক পার্শ্ববর্তী মীরপুর গ্রামের শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, মাত্র ৪ মাসের মধ্যে সড়কটি ভেঙ্গে গেছে। নামমাত্র কাজ করে অধিকাংশ টাকাই লুটপাট করে নিয়েছে ঠিকাদার নামক আওয়ামী লীগ নেতারা। লুটপাট বন্ধ না হলে টেকসই সড়ক নির্মান কাজ হবে না।

এব্যাপারে উপজেলা আওয়ামীলীগ সহ-সভাপতি জগন্নাথপুর পৌরসভার মেয়র আব্দুল মনাফ বলেন, সরকার ঐ সড়কের জগন্নাথপুর অংশের ১৩ কিলোমিটার সড়কের সংস্কার কাজের জন্য পৌনে ৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দিলেও কত টাকার কাজ হয়েছে এ ব্যাপারে দূর্নীতি দমন কমিশনকে তদন্তের জন্য অনুরোধ করছি। অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে অসাধু ঠিকাদাররা দায়সারা কাজ করে অধিকাংশ টাকাই লুটপাট করে নিচ্ছে, এটা মেনে নেওয়া যায় না। অপরাধি যেই হউক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। ভবিষ্যতে যাতে টেকসই উন্নয়ন হয় এ ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ’র সাথে আলাপ হলে তিনি বলেন, এত স্বল্প সময়ে সড়কটি ভেঙ্গে যাওয়াতে আমি বিষ্মিত। আমি উর্ধবতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আতাউর রহমান বলেন, এত স্বল্প সময়ে সড়কটি ভেঙ্গে যাওয়ার ঘটনা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। যাদের গাফিলতি ও দূর্নীতির কারণে এ অবস্থা হলো, এ ব্যাপারে আমরা খতিয়ে দেখে উপজেলা সমন্বয় কমিটির মাসিক সভায় আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব। 

এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামের সাথে আলাপ হলে তিনি বলেন, ঠিকাদার নাদের আহমদ প্রথমে কাজটি ভাগিয়ে নিলেও সময়মত কাজটি করেননি। বিলম্বে বৃষ্টির সময়ে কাজ শুরু করেন। প্রায় অর্ধেক কাজ করার পর তার গাফিলতির কারণে আমরা ঠিকাদার নুরুল আমীরকে দিয়ে বাকি কাজ করাই। তিনি বলেন বৃষ্টির মধ্যে কাজ করায় রাস্তাটি ভেঙ্গে গেছে। তবে খুব দ্রুতই সড়কটি পুন:সংস্কার করা হবে।

এ ব্যাপারে ঠিকাদার আওয়ামী লীগ নেতা নাদের আহমদের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি লাইনটি কেটে দেন, ফলে তার বক্তব্য জানা যায় নি।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ ১৫ নভেম্বর ২০১৭/ জেএইচ/ এমইউএ

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন