আজ বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ইং

শূন্যতা পূরণ হয়নি হারিছ-ইলিয়াসের

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৭-১১-২৩ ০০:১২:৫২

নিজস্ব প্রতিবেদক :: আবুল হারিছ চৌধুরী ও এম. ইলিয়াস আলী। প্রথমজন উধাও, পরেরজন ‘নিখোঁজ’; দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে। সিলেটে বিএনপির রাজনীতিতে তাঁদের ছিল ব্যাপক প্রভাব। তাদের ইশারায় চলতো সিলেট বিএনপি। ইলিয়াস সিলেটের রাজপথে থেকে দলকে দিয়েছেন নেতৃত্ব আর হারিছ কলকাঠি নাড়তেন ঢাকায় বসে। বিএনপির কেন্দ্রীয় পর্যায়েও প্রভাবশালী নেতা ছিলেন তারা। এ দুই নেতার উধাও আর ‘নিখোঁজ’ হওয়ার দীর্ঘদিন পরও সিলেটে বিএনপির রাজনীতিতে তাঁদের শূন্যতা পূরণ হয়নি। এমনকি কেন্দ্রীয় বিএনপিতে যেভাবে মূল্যায়িত হতেন তাঁরা, সে পর্যায়েও সিলেট বিএনপির কোন নেতা যেতে পারেন নি।

সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার বাসিন্দা হারিছ চৌধুরী। বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে আবুল হারিছ চৌধুরী ছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব। ওই সময়কার আলোচিত হাওয়া ভবনের মদদপুষ্ট এই নেতা হয়ে ওঠেছিলেন দুর্দন্ড প্রতাপশালী। তার দাপটে বিএনপির অনেক সিনিয়র নেতাই তখন খালেদা জিয়া বা তারেক রহমানের কাছে ঘেঁষতে পারতেন না- এমন অভিযোগ ছিল অনেকেরই। হারিছ চৌধুরীর ব্যাপক প্রভাব ছিল সিলেট বিএনপিতেও। নিজের নামে কোন গ্রুপ না থাকলেও সিলেট বিএনপির একটি বলয় নিয়ন্ত্রণ করতে তিনি। পছন্দের লোকজনকে গুরুত্বপূর্ণ পদ পাইয়ে দিতে কাজ করতেন ঢাকায় বসে।

চারদলীয় জোট সরকারের আমল শেষে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশ ছেড়ে উধাও হয়ে যান এই বিএনপি নেতা। ২০০৭ সালের ২৯ জানুয়ারি সিলেট সীমান্ত দিয়ে ভারতের করিমগঞ্জে পালিয়ে যান হারিছ চৌধুরী। এরপর থেকে তাঁর প্রকাশ্য কোন আনাগোনা নেই। মাথার উপর দুর্নীতির মামলার সাজা, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা এবং কিবরিয়া হত্যা মামলা ঝুলে থাকায় দেশমুখীও হননি তিনি। বর্তমানে ভারত, ইরান ও যুক্তরাজ্যে ফেরারি হয়ে ঘুরছেন হারিছ চৌধুরী- এমন তথ্য পাওয়া গেছে তার ঘনিষ্টজনদের কাছ থেকে।

২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল ঢাকার বনানী থেকে ‘নিখোঁজ’ হন সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ইলিয়াস আলী। মধ্যরাতে গাড়িচালক আনসার আলীসহ ইলিয়াসকে তুলে নেয় দুর্বৃত্তরা। সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার বাসিন্দা ইলিয়াস আলী ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক। সিলেট জেলা বিএনপির আহ্বায়কের দায়িত্ব ছিল তার কাঁধে। ২০০১ সালের নির্বাচনে সিলেট-২ আসনের সংসদ সদস্যও নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। টিপাইমুখ বাঁধবিরোধী আন্দোলনসহ বিভিন্ন জনগুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সোচ্চার হয়ে জাতীয় রাজনীতিতে ক্রমেই নিজের শক্ত অবস্থান তৈরী করে নিচ্ছিলেন ইলিয়াস আলী। সাইফুর রহমানের মৃত্যুর পর ইলিয়াসই হয়ে ওঠেছিলেন সিলেট বিএনপির একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিপতি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপির রাজনীতির জন্য হারিছ চৌধুরী ও ইলিয়াস আলী যে ‘সম্পদে’ পরিণত হয়েছিলেন, সিলেট থেকে সে পর্যায়ে আর কোন নেতা এখনও যেতে পারেননি। স্থানীয় কিংবা বিএনপির কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে এ দুই নেতার যে প্রভাববলয় ছিল, তাও এখানকার আর কোন নেতা গড়তে পারেননি।

বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে নিজেদের প্রভাব দিয়ে সিলেটের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অনেক কিছুই আদায় করেছেন হারিছ চৌধুরী ও ইলিয়াস আলী। কিন্তু আগামীতে বিএনপি ক্ষমতায় এলে সিলেটের কথা উচ্চ কণ্ঠে বলার মতো কেউ নেই। হারিছ চৌধুরী ও ইলিয়াস আলীর শুন্যতা পূরণে নতুন নেতৃত্ব গড়ে তুলতে বিএনপি ব্যর্থ হয়েছে বলে বিশ্লেষকদের অভিমত।

এ ব্যাপারে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কাহের শামীম বলেন, ‘আবুল হারিছ চৌধুরী ও ইলিয়াস আলী সিলেটের কৃতিসন্তান। বিএনপির কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে তাদের গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ছিল। তাদের অনুপস্থিতিতে যে শূণ্যতা তৈরি হয়েছে তা এখনো পূরণ হয়নি। এছাড়া সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম. সাইফুর রহমানের মৃত্যুতেও সিলেট বিএনপি যেভাবে অভিভাবক শূণ্য হয়েছিল তাও পূরণ হয়নি। সাইফুর রহমান শুধু বিএনপির নয়, দেশের সম্পদ ছিলেন। তার মৃত্যুতে যে শূণ্যতা সৃষ্টি হয়েছে তা সহজে পূরণ হবারও নয়।’

সিলেটভিউ২৪ডটকম/২৩ নভেম্বর ২০১৭/আরআই-কে/শাদিআচৌ

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন