আজ বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ইং

লোকসানে ফেঞ্চুগঞ্জ শাহজালাল সারকারখানা

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৭-১২-০৭ ১০:৪৮:৪১

ফরিদ উদ্দিন, ফেঞ্চুগঞ্জ প্রতিনিধি :: ফেঞ্চুগঞ্জে নবনির্মিত শাহজালাল সারকারখানা যাত্রার প্রথম (২০১৬-২০১৭) অর্থবছরে লোকসান হয়েছে ২৩৯ কোটি টাকা। কারখানাটির পুনর্নির্ধারিত উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লাখ ৯০ হাজার টন। বছর শেষে সারকারখানায় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলেও বিপুল এই ক্ষতি ভাবিয়ে তুলেছে বিশেষজ্ঞদের।

এদিকে চলতি অর্থবছরে সারকারখানায় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৬০ হাজার টন। অর্থবছরের  জুলাই, আগস্ট, সেপ্টেম্বর এই ৩ মাসে কারাখানাটির লোকসান প্রায় ৪৩ কোটি টাকা। শাহজালাল সারকারখানা গত বছর উৎপাদনে যায়। চীনা কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী বছরে উৎপাদন হওয়ার কথা ছিল ৫ লাখ ৮০ হাজার টন। প্রথম বছর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৩ লাখ ৯০ হাজার টন। গত বছর এই সারকারখানায় মোট ইউরিয়া সার উৎপাদন হয় ৩ লাখ ৯৩ হাজার টন।

শাহজালাল সারকারখানার হিসাব বিভাগ সূত্র জানায়, প্রতি টন সার বিক্রি হচ্ছে ১৪ হাজার টাকায়। গত বছর সার বিক্রি করে আয় হয় ৫৫০ কোটি ২০ লাখ টাকা। অপরদিকে সারকারখানায় প্রি অপারেটিং, ইন্স্যুরেন্স, ৪৮ জন চীনা বিশেষজ্ঞদের বেতন, কারখানার কর্মকর্তা,কর্মচারিদের বেতন-ভাতা, পরিবহন ও গ্যাস বিল, প্যাকেজিং সরঞ্জামাদি এবং  কেমিক্যাল ক্রয়সহ অন্যান্য বাবদ ব্যয় হয় ৭৮৯ কোটি ২০ লাখ টাকা।

সূত্রটি জানায়, বর্তমানে সারকারখানায় উৎপাদিত সার দেশের বিভিন্ন গুদামে প্রেরণ করতে পরিবহনখাতে খরচ বেশি হওয়ায় লোকসান বেশি গুনতে হচ্ছে। ট্রাক মারফত প্রতি টন ইউরিয়া সার পরিবহনে খরচ হচ্ছে ২ হাজার টাকা। এ ক্ষেত্রে  রেলপথে খরচ হয় ১ হাজার টাকা। নদীপথে আরো কম হবে বলে সূত্রটি জানায়।

তাছাড়া কারখানার ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট ও বিভিন্ন  ভ্যাসেলের ক্যাটালিস্টের জন্য আমেরিকা থেকে ঙ অ ঝ ঊ  সলিউশন নামের কেমিক্যাল আনতে খরচ হচ্ছে। বর্তমানে এই সারকারখানায় দৈনিক উৎপাদন হচ্ছে প্রায় ১৫শ’ টন। একটি কন্ট্রোল বাল্ব না থাকাতে কারখানায় উৎপাদন বৃদ্ধি করা যাচ্ছে না। ওই বাল্বটি আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে কারখানা সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন সূত্র জানায়।

শাহজালাল সারকারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনিরুল ইসলাম জানান, এই ধরনের বৃহৎ প্রতিষ্ঠানকে লাভজনক খাতে নিয়ে যেতে হলে কিছু সময় লাগে। উৎপাদন বৃদ্ধি পেলে লোকসান কমে আসবে বলেও তিনি জানান।

শাহজালাল সার কারখানার হিসাব বিভাগের জিএম অ্যাডমিন আব্দুল বারেক জানান, প্রতি টন সার আমদানিতে খরচ হয় প্রায় ৩০ হাজার টাকা। এই সারকারখানায় সার উৎপাদনে বর্তমানে খরচ হচ্ছে টন প্রতি প্রায় ২০ হাজার টাকা। আগামীতে উৎপাদন আরো কমে আসবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

ক্রমবর্ধমান সারের চাহিদা বৃদ্ধি ও আমদানি নির্ভরতা কমাতে ২০১২ সালের ২৪শে ডিসেম্বর সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জে ৬২ একর জমির উপর সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে শাহজালাল সারকারখানা নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রায় ৪ বছরেই সার কারখানাটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়। গত বছর থেকে এই সারকারখানা বাণিজ্যিক উৎপাদনে যায়। চীনের মেসার্স কমপ্ল্যান্ট প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে।
 
এই সারকারখানায় উৎপাদিত সার কৃষিকাজে ব্যবহারের ফলে দেশে খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। সিলেটবাসীর বহু কাঙ্ক্ষিত বৃহৎ এই শিল্প প্রতিষ্ঠানটি দ্রুত সময়ে বাস্তবায়ন করায় ফেঞ্চুগঞ্জ ও সিলেটবাসী কৃতজ্ঞচিত্তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্থানীয় সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে। শাহজালাল সারকারখানা বাস্তবায়ন হওয়ায় বর্তমানে এই শিল্প প্রতিষ্ঠানের কল্যাণে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ জীবিকা নির্বাহ করছে।

সিলটভিউ২৪ডটকম/০৭ডিসেম্বর২০১৭/এফইউ/আআ

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন